ন্যাভিগেশন মেনু

আমফান প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে প্রাণ কাড়লো ৮ জনের


ফনি, আইলা ও সিডরের ক্ষতটাকে বাংলাদেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিল এবার ‘আমফান’। মূলত: পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে ‘আমফান’ বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাসমূহসহ দেশের মধ্যভাগের কয়েক জায়গায় আঘাত হেনেছে।

বৃহস্পতিবার ভোর অবধি ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।ভয়াবহ ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে আজ দুপুরের মধ্যেই।উপকূল পেরিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে আমফান স্থলভাগের দিকে এগিয়ে যায়। 

তার আগে পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। রেহাই ছিল না ঢাকাবাসীর। রাতভর ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে প্রায় সারারাত। 

ভোরের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলেও মাঝে মাঝেই দমকা হাওয়া বইছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। 

আইলার থেকেও বেশি গতি নিয়ে তা আছড়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে।  সেই তাণ্ডব দেখে থমকে গেছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। ভারতের গণমাধ্যমে তিনি এই ঝড় সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, সর্বনাশ হয়ে গেছে। ধ্বংস করে দিয়ে গেলো সব। কলকাতায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

আর বাংলাদেশে ৮ নিহতরা হলেন- যশোরের চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। সাতক্ষীরায় আম গাছের ডাল ভেঙে কহিনুর বেগম (৪০)মারা গেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে এর নিচে চাপা পড়ে রাসেদ নামে ৬ বছরের একটি শিশুর ঘটনাস্থলেই  মৃত্যু হয়। 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জন সচেতনতার প্রচার কাজ চালাতে গিয়ে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া এলাকায় খালে নৌকা ডুবে সিপিপি’র দলনেতা শাহ আলম মারা গেছেন।ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণে গাছ চাপা পড়ে ছিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

ওই বৃদ্ধ বয়স্ক ভাতা আনার জন্য ভাড়া করা মোটরসাইকেলে উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়াল চাপা পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার নাম শাহজাহান মোল্লা (৬০)। রাত সাড়ে আটটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে জোয়ারের জলে ডুবে মো. সালাউদ্দিন (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুপুরের দিকে সন্দ্বীপ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. সোলাইমান জানান, উপকূলে ঘাস কাটতে গিয়ে ওই যুবক জোয়ারের জলে পড়ে যান। 

পরে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ সময় অনেক মাছের ঘের ভেঙে বিপুল পরিমাণ মাছ চলে যায়। 

আমফানের একটি অংশ  সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল দিয়ে ঢুকে যশোর ও নড়াইল জেলার দিকে চলে যায়।সেখান থেকে মাগুরা, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ থেকে জামালপুরের দিকে এগিয়ে যায়। 

সমুদ্রে গর্জন, উঁচু উঁচু ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস, প্রবল বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া—এমন রুদ্রমূর্তি নিয়ে স্থলভাগে তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। ১৯৯৯ সালের পর প্রথম সৃষ্ট সুপার সাইক্লোন আমফান। 

ভয়ংকর আমফান তছনছ করেছে গাছপালা, মানুষের ঘরবাড়ি। আমফান উপকূলে আছড়ে পড়ার আগেই গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর উপকূলীয় নদ-নদীগুলোর জল ৩ থেকে ৬ ফুট বেড়ে যায়। 

এ কারণে পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাত পর্যন্ত শতাধিক গ্রাম তলিয়ে হাজার হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। পুরো অঞ্চলজুড়ে লাখ লাখ মানুষের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। 

বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ।উপকূলীয় নদ-নদীগুলো উত্তাল হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে বাঁধে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর অন্তত ২৪ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আমফান পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সেখানে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, ভারতের সমুদ্র উপকূল দিঘা, বকখালী, কাকদ্বীপ, তাজপুর ও সুন্দরবন অংশে তাণ্ডব চালিয়ে আম্ফানের অগ্রভাগের প্রভাব বাংলাদেশে এসে পড়ে। 

আমফান সাতক্ষীরা-খুলনা দিয়ে প্রবেশ করে ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে। ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা দিয়ে পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও গাইবান্ধা হয়ে আবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে রাত ১টার দিকে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ব্যাস ছিল ৪০০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। 

যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। আমফানের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল আছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

গত রবিবার লঘুচাপ থেকে তৈরি হয় সুস্পষ্ট লঘুচাপ। সেখান থেকে নিম্নচাপ, তারপর গভীর নিম্নচাপ থেকে সোমবার ঘূর্ণিঝড় আমফান সাগরে অবস্থান করে। 

এরপর মঙ্গলবার আমফান সুপার সাইক্লোনিক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।ছয় মাস আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতো আবারও বুক চিতিয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবন। আমফান সুন্দরবন অতিক্রম করার সময় শক্তি অনেক ক্ষয় হয়ে গেছে। 

২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বরগুনার পাথরঘাটা। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশ অংশে ঢুকে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছিল সিডরের সময়। 

এস এস