ন্যাভিগেশন মেনু

আড়াই মাস পর স্থলপথে পণ্য এলো


ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না থাকায় দীর্ঘ আড়াই মাস (৭৬দিন) সড়কপথে বন্ধ ছিল  ভারত-বাংলাদেশেরবাণিজ্য।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় আটকে থাকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি। নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য পাঠালো বাংলাদেশে।

রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ২৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে মোটরসাইকেল পার্টস এসেছে বেনাপোল বন্দরে।এর আমদানিকারক এইচএমসিএল নিলয়, ঢাকা। রফতানিকারক ভারতের হিরো হোন্ডা কোম্পানি।সোমবার থেকে অন্যান্য পণ্য ভারত থেকে আমদানি হবে।

এদিকে আমদানি-রফতানি চালু হওয়ার খবর শুনে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের হাজার হাজার শ্রমিক কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। দীর্ঘ আড়াই মাসের অধিক সময় আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছিল।আমদানিকারকরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন আমদানি-রফতানি চালুর খবর শুনে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় গত ২৩ মার্চ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।

আমদানি-রফতানি চালু করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার পত্র দিলেও কলকাতাতে করোনায় রেড জোন থাকায় তৃণমূল সরকার আমদানি-রফতানির অনুমতি দেননি।

চতুর্থ দফা লকডাউন চালু করার পর কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে লকডাউন তুলে নিয়ে আনলকঅন পদ্ধতি চালু করেছে।সে সুবাদে পশ্চিমবাংলা সরকার এবং পেট্রাপোল বন্দরের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে একাধিকবার আমদানি-রফতানি চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও পেট্রাপোল ও বনগাঁর স্থানীয় বন্দর ব্যবহারকারীদের নানা জটিলতায় আমদানি-রফতানি চালু করতে পারেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

সব সমাধান শেষে রবিবার বিকেল থেকে আমদানি শুরু হয় এই পথে।পেট্রাপোলের ব্যবসায়ী গৌতম দাস জানান, অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আবার এই স্থলবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হলো।

যদিও ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যের অনুমতি দিয়েছে ২৪ এপ্রিল। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় রফতানিকারকরা বাংলাদেশে কোনো পণ্য পাঠাতে পারেনি বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

ভারত সরকার বারবার চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য শুরুর অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।ভারত সরকার ছাড়াও বেশ কিছু বণিকসভা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বাণিজ্যের অনুমতি দিতে অনুরোধ করেছিলেন।কিন্তু এতদিন কারো কথাই কানে তোলেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

ভারতের আরেক ব্যবসায়ী জানান, বাংলাদেশ থেকে আমদানিকারক সংস্থাগুলো আমাদের বারবার বলছিলেন রফতানি শুরু করতে। অনেক অপেক্ষার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেই বাংলাদেশে পণ্য পাঠাব, কারণ ভারত সরকারের অনুমোদন রয়েছে।আর কাস্টমস এবং বিএসএফ আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

কিন্তু বনগাঁর পৌর মেয়র ও পেট্রাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্টের কতিপয় নেতার একগুয়েমীর কারণে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়।পরে সবকিছুর সমাধান হয়ে রোববার বিকেল থেকে বাংলাদেশে ট্রাক পাঠানো শুরু হলো।

তবে করোনার সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কা থাকায় সীমান্ত অতিক্রমের আগেই গাড়িচালকদের শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করা হবে।এছাড়াও ট্রাকগুলো উভয় দেশে স্যানিটাইজ করা হবে। ফেরার সময়ও চালকদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে।সেইসাথে দ্রুত পণ্য খালাস করে দিনে দিনে ট্রাকগুলো ফিরে যাবে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দীর্ঘ আড়াই মাস পর ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্টস আমদানি-রফতানি কার্যক্রম রোববার বিকেল থেকে শুরু করেছে।আগামীকাল সোমবার থেকে এ পথে অন্যান্য মালামালও আসবে।এতে ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আড়াই মাস পর রোববার বিকেলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২৪টি ট্রাকে মোটরসাইকেল পার্টসের একটি চালান রফতানি করেছে।তবে সোমবার থেকে এ পথে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিকভাবে হবে বলে উভয় দেশের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এস এস