ন্যাভিগেশন মেনু

উলিপুরে বন্যার পানিতে পচে গেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন


কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যার পানিতে ডুবে পচে গেছে রোপা আমনের ক্ষেত। সেই সাথে পচে গেছে হাজারো কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় আর্থিক সংকটে পড়া কৃষকরা পুনরায় আমন ধানের চারা রোপণ করতে পাচ্ছে না। এছাড়াও দেখা দিয়েছে চারা সংকট। কিছু এলাকায় চারা পাওয়া গেলেও আকাশছোঁয়া দাম, যা কৃষকদের ক্রয় সামর্থ্যের বাইরে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীবেষ্টিত ৮টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে রোপণকৃত ৩৮৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত এবং ১১ হেক্টর বীজতলা বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর। কৃষকদের ক্ষতি পূরণে কৃষি বিভাগ ২৪০ জন কৃষককে মাসকলাই প্রণোদনা দেওয়াসহ আগাম রবিচাষের প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত হাতিয়া, সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি এবং তিস্তা নদীবেষ্টিত বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই, দলদলিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও দেড়শ' চর বন্যার ফলে ডুবে গেছে রোপা আপনের ক্ষেত। গত ২ সপ্তাহ পানিতে ডুবে থাকায় ধানের চারাগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। পচে যাওয়া ক্ষেতগুলো পুনরায় রোপণ না করলে কৃষকরা এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে না। বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকরা বর্তমানে আর্থিক ও চরম চারা সংকটে পড়েছে।

হাতিয়া ইউনিয়নের কামারটারী গ্রামের কৃষক রিয়াজুল ইসলাম, নামাটারী গ্রামের কৃষক খলিলউদ্দিন ও মহেসেনা খাতুনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামান্য ২/১ একর জমি ধার-দেনা করে আমন রোপন করেছিলেন। কিন্ত বন্যার পানিতে সব পচে গেছে।  এ সময়ে হাতে টাকা-পয়সাও নেই। কি দিয়ে কি করবে সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা। নিজেরাই কি খাবে, গরু-ছাগলকেই বা কি খাওয়াবে! সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী জানান, 'চার বিঘা জমিতে লাগানো আমন ক্ষেত সম্পন্ন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। চারার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কোনওমতে পেট ভাত আর গরু বাচাঁনোর জন্য জন্য ২ বিঘা জমি পুনরায় রোপণ করেছি। চারার যে দাম তাতে খরচ উঠবে বলে মনে হয় না।'

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বলেন, চলতি বছরে বর্ষার শেষে বন্যায় এবার প্রান্তিক পযার্য়ের কৃষকদের একমাত্র স্বপ্ন পানিতে ডুবে নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতির মধ্যে দিন যাপন করছেন তারা। অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।  

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়া ৩৮৯ হেক্টর  জমিতে পুনরায় চারা রোপণের এখনও সময় আছে। কৃষকরা বলাম চারা বা চরের জমিতে সরাসরি আঠাশ, গানজিয়া ও বিন্দিপাকড়ি স্থানীয় এসব জাতের ধান ছিটিয়ে চারা রোপন করে তাহলে আশা করা যায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ভালোভাবে অর্জন হবে।

এসআই/এডিবি/