ন্যাভিগেশন মেনু

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ১৫৮তম জন্মদিন আজ


ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ১৫৮তম জন্মদিন ৮ অক্টোবর। ১৮৬২ সালের এইদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তার পিতা সরদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তার সঙ্গীতগুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের কাশিম আলী খাঁ। শিবপুরে এখনো রয়েছে তার মা-বাবার কবর। তার নামে গড়ে উঠেছে শিবপুর ওস্তাদ আলাউদ্দি খাঁ কলেজ। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ ও ওস্তাদ নায়েব আলী খাঁ তার ছোট ভাই।

আলাউদ্দিনের ডাক নাম ছিল ‘আলম’। তার রচিত গানে তিনি ‘আলম’ ভনিতা ব্যবহার করেছেন। বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি।

সুরের মোহে আট বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান আলাউদ্দিন খাঁ। পরিচিত হন জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি গানের সঙ্গে।

১৯৫২ সালে বিশ্বভারতী এই সঙ্গীতগুরুকে ‘দিনেন্দ্র অধ্যাপক’ পদে আহ্বান জানিয়ে শান্তিনিকেতনবাসীদের তাঁর সঙ্গীত ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচিত হবার মহৎ সুযোগ দিয়েছিলেন।

আলাউদ্দিন খাঁ দুমাস শান্তিনিকেতনে ছিলেন। দুমাসে সঙ্গীত শিক্ষার সূচনাও হয় না, কিন্তু সঙ্গীত সাধক আলাউদ্দিনের সান্নিধ্যই শিক্ষাপ্রদ।

তখন তিনি আলাপ-আলোচনা-আড্ডায় নিজের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছিলেন, সেসব কথাই শুভময় ঘোষ বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন। সেটাই ‘আমার কথা’ নামে প্রথমে ‘রত্মসাগর গ্রন্থমেলা’ থেকে, পরে ‘আনন্দ প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়।

সঙ্গীতসাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ও হাজারী ওস্তাদের কাছে ১০ ধরনেরও বেশি বাদ্যযন্ত্রে নিজেকে পারদর্শী করে তোলেন।

১৯১৮ সালে মধ্য প্রদেশের মাইহার রাজ্যে যান তিনি। সেখানকার রাজা ব্রিজনারায়ণ আলাউদ্দিন খাঁকে নিজের সঙ্গীতগুরুর আসনে অধিষ্ঠিত করলে তিনি মাইহারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সঙ্গীত জগতে এক নতুন ঘরানার প্রবর্তন করেন, যা ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ বা ‘মাইহার ঘরানা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

এছাড়াও আলাউদ্দিন খাঁ তার নিকট দীর্ঘ ত্রিশ বছর সেনী ঘরানায় সঙ্গীতের অত্যন্ত দুরূহ ও সূক্ষ্ম কলাকৌশল আয়ত্ত করেন।

আলাউদ্দিন খাঁ তার সফল শিষ্যদের মধ্যে তিমিরবরণ, পুত্র আলী আকবর খান, জামাতা পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ভ্রাতুষ্পুত্র বাহাদুর হোসেন খান, কন্যা রওশন আরা বেগম (অন্নপূর্ণা), পান্নালাল ঘোষ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের পরামর্শ ও নির্দেশে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়। সেগুলির মধ্যে ‘চন্দ্রসারং’ ও ‘সুরশৃঙ্গার’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। শিবপুর গ্রামে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন এবং পানি পানের জন্য একটি পুকুর খনন করিয়ে দিয়েছেন। তার নির্মিত মসজিদটি এখনও তার স্মৃতিবহন করে চলছে। মাইহার রাজ্যে, ‘মাইহার কলেজ অব মিউজিক’ প্রতিষ্ঠা তার সঙ্গীত জীবনের এক শ্রেষ্ঠতম একটি অবদান।

বহুমাত্রিক এই সুরের জাদুকর আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাইহারে মৃত্যুবরণ করেন।

ওয়াই এ/ এডিবি