ন্যাভিগেশন মেনু

করোনায় সুস্থ থাকতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ


ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেইসাথে করোনাভাইরাসে এ সেল -কোয়েরেন্টাইন এবং আইসলেশনে থাকার সময় শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাবার খেতেও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।  

ট্রান্সফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। এই আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস, যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেও পরিচিত। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্যদ্রব্য যেমন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, স্ন্যাক্স ফুড, ভাজাপোড়া খাবার, বিস্কুট, কুকিজ, মার্জারিন এগুলোতে ট্রান্সফ্যাট থাকে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগীরা করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বশেি ঝূঁকপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লক্ষ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া, করোনার কারণে ঘরে বন্দী থাকায় মানুষের শারীরিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমেছে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার সংরক্ষণের সুবিধার্থে এবং বিভিন্ন ভাজা পোড়া ও বেকারি খাদ্য পণ্যের স্বাদ, ঘ্রাণ এবং স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভাজা পোড়া খাদ্যে একই ভোজ্য তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট সৃষ্টি হয়। সাধারণত খরচ কমানোর জন্য হোটেল-রেঁস্তোরায় সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, জিলাপি, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজা পোড়া খাবার তৈরির সময় একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এসব খাবারে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশ এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, হৃদরোগসহ সকল অসংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহনের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিকট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২.২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার একমাত্র পথ হলো সচেতনতা। তাই সচেতনতাই পারে আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটি অ্যাসিড নির্মূল ক্রমেই বিশ্বজুড়ে একটি অগ্রাাধিকার হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এখনও ৫০০ কোটি মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাস করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। সংস্থাটি ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। 

ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলসহ মোট ৩০টি দেশে খাদ্য দ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। এছাড়া আরও ২৪টি দেশ ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে। 

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা কমিয়ে আনতে একটি ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং উক্ত কমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তাদের সাথে দুটি আলোচনা সভা সম্পন্ন করেছে। সংস্থাটি বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত  স্ট্যান্ডার্ড মেনেই শীঘ্রই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। 

এডিবি/