ন্যাভিগেশন মেনু

বেড়ার চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ হচ্ছে সরিষা


পাবনার বেড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ করা হচ্ছে সরিষা। যেদিকে দু’চোখ যায় মাঠে শুধু সরিষা ফুলের সমারোহ। হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে বাংলা মায়ের গ্রামীন জনপদ।

সরিষার ক্ষেতে হলুদ ফুলের রঙয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে দিক দিগন্ত। মাঠের পর মাঠ যেনো হলুদ রঙের শাড়ি বিছানো, হলুদ রঙে সেজেছে রূপসী বাংলা। হলুদ ফুলের হাসিতে দুর হয়ে যায় ক্লান্তি,স্বপ্ন সুখে উজ্জীবিত কৃষক।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চরাঞ্চলসহ বেড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আশা করেছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ সরিষা চাষীরা।

উপজেলার চাকলা গ্রামের কৃষক জয়নাল হক জানান, তিনি এ মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। রোগবালাই না হলে ভালো ফসল হবে এমনটাই আশা করছেন।

ঢালার চর ইউনিয়নের কৃষক ছাত্তার আলী বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে খরচ অনেক কম। সরিষার জমিতে সার, সেচ ও কীটনাশকের প্রয়োগ একেবারেই কম। নভেম্বর মাসের শুরুতে সরিষার চাষ শুরু হয়। ফলন পাকতে ৭৫ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। এখন চলছে মাঝামাঝি সময়। সমতল ও তুলনামূলক উঁচু জমি সরিষা চাষের জন্য উপযুক্ত। হালকাভাবে জমি চাষ, সার প্রয়োগের পর সরিষার বীজ বপন করতে হয়। বীজ থেকে চারা গজানোর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে একবার উপরি ভাবে সামান্য সার ছিটিয়ে দিলেই সহজে ফলন ভালো হয়। তুলনামুলক কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের।

উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাকালিয়া  গ্রামের কৃষক আনছার আলী বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সরিষা ক্ষেত ফুল ফুলে ছেয়ে গেছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে। সরিষা চাষ করার পরও ধান চাষ করা যায়, স্বল্প সময়ে এ ফসলটি ঘরে তোলা যায় বলে আমরা সরিষা চাষ করে থাকি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো.মসকর আলী বলেন, কৃষকদের সরিষা চাষ আগ্রহ সৃষ্টির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ২০০ কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে ১ কেজি বীজ ও ৩০ কেজি করে সার সরবরাহ করেছি। কৃষি কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষনিক কৃষকদের পরামর্শ এবং সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৭৩০ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা চেয়েও এবার কৃষক অনেক বেশী জমিতে সরিষার চাষ করেছে। গত বছরে সরিষা ভালো ফলন ও বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় এ মৌসুমে সরিষার আবাদ আশানুরুপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কুয়াশার কারনে সরিষার গাছ ও ফুলের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.মসকর আলী আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান,বর্তমান আবহাওয়া সরিষার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না তবে দীর্ঘদিন দিনের অধিকাংশ সময় যদি কুয়াশা থাকে এতে সরিষা ফুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়ে যায়।

তিনি জানান, সরিষা চাষের পর ওই জমির উর্বরতা শক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা এবং ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই রবি ফসল সরিষা পরবর্তী ফসল উৎপাদনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সরিষা চাষ উপযোগী আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি অফিস আরও জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বারি সরিষা-১৪ ও ১৫ জাত এবং নতুন উদ্ভাবিত উন্নত ফলনশীল জাত বারি-১৭ চাষ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।

সরিষা চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন বিঘা প্রতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ মণ হবে বলে তারা আশা করছেন। সরিষা চাষ পরবর্তী বোরো ধান চাষের জন্য অনেক উপকারী। সরিষা চাষের পর সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সরিষা চাষে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে। ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমি থেকে ৬ থেকে সাড়ে ৬ মণ সরিষা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মণ সরিষার বাজারমূল্য ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিঘা জমি থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে।

সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ঢাকা পড়েছে বিস্তীর্ণ মাঠ। সরিষা ফুলের মন মাতানো গন্ধ সবাইকে আকৃষ্ট করে।  মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। এসব ফুল থেকে মধু আহরণ করছে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি। উপজেলায় প্রচুর পরিমানে সরিষার চাষ হওয়ায় মৌচাষিরা তাদের মৌবক্স সরিষা ক্ষেতের পাশে, ক্ষেতের আলে বসিয়ে বছরের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচুর পরিমানের মধুর উৎসের উপযুক্ত নির্যাস পাওয়া যায় সরিষা ফুল থেকে।

দিগন্ত জোড়া সরিষার ফুল ফসলের মাঠগুলোতে এনেছে বৈচিত্র।  এবছর বাম্পার ফলনের হাতছানি দেখা দেওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সরিষা ফুল থেকে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি মধু সংগ্রহ করছে সেই সঙ্গে কৃষকের পরম বন্ধু হয়ে পরাগায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়তা করে যাচ্ছে। মৌমাছির গুঞ্জন আর মৌ মৌ গন্ধে হলুদের আলপনায় এক স্বগীয় পরিবেশ মনমুগ্ধ করে তোলে। অনাবিল এক শান্তির পরশ মানুষকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম করে দেয়। মনের আসে অফুরান্ত প্রশান্তি।

এন এস/সিবি/এডিবি