ন্যাভিগেশন মেনু

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ২৫ সেপ্টেম্বরকে ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে’ ঘোষণা


সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার ৪দিনের মাথায় নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো জাতিরজনক যেদিন জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই ২৫ সেপ্টেম্বরকে ২০২০ সালের জন্য ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট  ডে’ ঘোষণা করলেন।

১৪ জানুয়ারি স্টেট গভর্ণরের স্বাক্ষরকৃত ঘোষণাপত্রের কপি  ২০ জানুয়ারি বিতরণ করেছেন নিউইয়র্ক স্টেট সেক্রেটারি আলেন্ড্রো এন পলিনো।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহার তদ্বিরে গত বছরও একই ধরনের একটি রেজ্যুলেশন পাশ হয় নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টে। সেটি নবায়ন করার জন্য গত ৯ জানুয়ারি সিনেটে উপস্থাপন করা হয়। সিনেট রেজ্যুলেশন নম্বর ২৩৪৬। বিশ্বজিৎ সাহা এনআরবি নিউজকে জানান, ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের জন্যে আমি ঢাকায় যাচ্ছি।  

লাল সবুজের পতাকা পত পত করে উড়ছে জাতিসংঘের সদর দফতরের সামনে। আরো শতাধিক দেশের পতাকার পাশে বাংলাদেশ ঠাঁই করে নিয়েছে নিজের আসন।

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশন। অধিবেশন কক্ষে সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধানরা। অধিবেশনে সভাপতির আসনে আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকা।

সভাপতি বাঙালি জাতির মহান নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বক্তৃতা মঞ্চে আহবান করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সদর্পে বীরোচিত ভঙ্গিমায় আরোহণ করলেন বক্তৃতা মঞ্চে।

দৃপ্ত প্রত্যয়ে বক্তৃতা মঞ্চে উঠে ডায়াসের সামনে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু। মুর্হুর্মুহু করতালি। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শুরু করেন মাতৃভাষা বাংলায়। যে ভাষার জন্য ঢাকার রাজপথে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। সেই ভাষায় প্রথম ভাষণ জাতিসংঘে।

বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে আবার ঠাঁই করে দিলেন। এর আগে ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে বিশ্ববাসী জেনেছিল বাংলাভাষার অমর অমল আবেদন ।

এর ষাট বছর পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে উচ্চারণ করলেন বিশ্বসভায় বাংলা ভাষার অমর শব্দসমূহ। উল্লেখ্য, জাতিসংঘে বিশ্বের সকল নেতা নিজ নিজ মাতৃভাষাতেই ভাষণ দিয়ে থাকেন।

জাতিসংঘের সরকারি ভাষা ছয়টি। ইংরেজি, ফরাসী, রুশ, চীনা, স্প্যানিশ ও আরবি। এই ৬ ভাষাতেই বক্তৃতা রূপান্তরিত হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক পলকে চারদিক দেখে নিলেন।

এর আটদিন আগে ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। এর আগে ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে  দুবার চীনের ভেটোর কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করতে পারেনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করলেও ১৯৭৪ সালে এসে চীন বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকটা নমনীয় হয়। ফলে চীন তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তুমুল করতালির মধ্যে নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।

ঐ দিনই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষে বাঙালির প্রথম প্রবেশ ঘটে। বাংলাদেশের জাতিসংঘ সদস্যভুক্তির পর বিশ্বের অনেক দেশই অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখে।

জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বের পার্লামেন্টে নতুন দেশ বাংলাদেশকে স্বাগতম। জাতিসংঘের মহাসচিব তখন ড: কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম। তিনিও বাংলাদেশকে স্বাগত জানান, তবে প্রচন্ড উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাকব মালিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং।

আর সেদিনটিকেই বেছে নিলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে হিসেবে উদযাপন করার পরিকল্পনা। তাঁর প্রস্তাবনায় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর স্টেভেস্কি এই দিনটিকে বাংলাদেশ ইমিগ্র্যান্ট ডে হিসাবে রেজ্যুলেশন পাশ করার জন্য সিনেটে উপস্থাপন করেন এবং দীর্ঘ শুনানির পর এটি সর্বসন্মতিক্রমে পাশ হয়।

এস এস