ন্যাভিগেশন মেনু

টিকটকের ফাঁদে ফেলে তরুণীদের বিদেশে পাচার


টিকটক–লাইকি ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে পারস্পরিক পরিচয়ের সূত্র ধরে একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন তরুণ-তরুণীরা। সেখান থেকেই সুন্দরী তরুণীসহ গৃহিনীদের টার্গেট করে আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্র। ভালো চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চক্রটি বিভিন্ন দেশে পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে থাকে।

সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তার সূত্র ধরে নারীপাচারের একটি বড় চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, চক্রটি টিকটকের মাধ্যমে প্রথমে তরুণীদের টার্গেট করে চাকরির প্রলোভনে তাদের বিদেশে পাচার করা হয়। তারপর জোর করে বাধ্য করে শুরু হয় জমজমাট দেহব্যবসা।

শনিবার (২৯ মে) বিকেলে শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এসব তথ্য জানান।

ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, টিকটকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া তরুণ-তরুণীদের নিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের একটি গ্রুপ পরিচালনার তথ্য পাওয়া গেছে। যে গ্রুপের অ্যাডমিন ও পৃষ্ঠপোষক ওই চক্র। একটি গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে ঢাকার পাশের একটি জেলায় পুলপার্টির আয়োজন করা হয়। ওই পার্টিতে প্রায় ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণী অংশ নেয়। এ গ্রুপ থেকেই নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে পাচার করা হয়।

ভারতের ওই তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে এ চক্রের মাধ্যমে আরো অনেক তরুণী পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাচার হওয়া তরুণীর সংখ্যা কম নয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন আরো গ্রুপ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, ভারতে এ চক্রটির মূল আস্তানা ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। মূলত পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতেই বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের ভারতে পাচার করা হয়। তাদের সঙ্গে সেখানকার স্থানীয় কিছু হোটেলে চুক্তি রয়েছে। সে অনুযায়ী তারা টাকার বিনিময়ে নারী সরবরাহ করছে।

পাচার হওয়া তরুণীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতে তাদের নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে বিবস্ত্র করে ছবি-ভিডিও করা হয় কিংবা নির্যাতন করা হয়। তাদের কথামতো অনৈতিক কাজ করতে রাজি না হলে সেসব ছবি-ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তাদের হাতে রাখতে এবং বাধ্যতামূলকভাবে অনৈতিক কাজ করতে এটা ব্ল্যাকমেলিংয়ের কৌশল।

ভিডিও ভাইরালের পর বিষয়টি আলোচিত হয় ভারতেও। পরে ভারতীয় পুলিশ দ্রুত সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধারসহ মূল অভিযুক্ত টিকটক হৃদয় এবং আরও চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। যারা প্রত্যেকেই অবৈধভাবে ভারতে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের কাছে ভিসা কিংবা পাসপোর্ট কিছুই ছিল না।

এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মমানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে। সে অনুযায়ী জড়িতদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে পুলিশ সদর দফতর। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ভারতেও মামলা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তারা বাংলাদেশি এবং এখানে মামলা হয়েছে তাই তাদের ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তে আরো কয়েকজন তরুণীকে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

এর আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ জানায়, সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের এক তরুণীকে ভারতের কেরালা রাজ্যে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় ঢাকা হাতিরঝিলের রিফাদুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবককে শনাক্ত করেছে পুলিশ।

ওআ/