ন্যাভিগেশন মেনু

ঠাকুরগাঁওয়ে অসময়ের তরমুজ চাষে সফলতার মুখ দেখছেন তরুণরা


ঠাকুরগাঁওয়ে তরমুজ চাষের প্রাচীন ধারণাকে পেছনে ফেলে মাচায় মালচীন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে সফলতার দিকে এগিয়ে চলেছেন জেলার কয়েকজন তরুণ কৃষক। অসময়ে ব্যতিক্রমী এই তরমুজের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন একজন সংবাদকর্মী ও একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তাদের সফলতায় অন্যরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অসময়ের তরমুজ চাষে।

সাধারণতঃ শীতকালে এই এলাকায় জমিতে তরমুজের চারা রোপন করা হয় । একসঙ্গে ২০-২৫ বিঘা জমিতে চাষ করা হয় বাণিজ্যিকভাবে। থরে থরে তরমুজ জমিতে পড়ে থাকে পাথরের ন্যায়। গ্রীষ্মকালে ওই তরমুজ বিক্রি করা হয়। কিন্তু সেই প্রচলিত ধারণাকে পেছনে ফেলে ঠাকুরগাঁওয়ে হরিপুরের সংবাদকর্মী আল মামুন চৌধুরী এবার বর্ষাকালে প্রতিকূল আবহাওয়ায় তরমুজের চারা রোপন করেন। গাছগুলো বড় হলে জমিনে না রেখে তা ঝুলিয়ে রাখার সুবিধার্থে নির্মাণ করেন মাচা। দীর্ঘ ৪০-৪৫ দিনের পরিচর্যায় তার জমিতে এখন আকর্ষনীয় রঙের তরমুজ শোভা পাচ্ছে। ব্ল্যাক বেবি ও গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ এখন প্রতিটির ওজন হয়েছে আড়াই থেকে ৩ কেজি। ৬০ দিনের মাথায় ৪-৫ কেজি ওজনের হলে তিনি তা বিক্রি করবেন।

সাংবাদিক আল মামুন চৌধুরী জানান, 'আমি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি। সাংবাদিকতা করে আর্থিকভাবে সফল হওয়া যায় না। তাই আমি কৃষিতে মনোনিবেশ করি। আগে আমি শীতকালীন তরমুজ চাষ করতাম। পরবর্তীতে ইউটিউব দেখে আমি এ বছর অসময়ের তরমুজ চাষ করেছি।'

তিনি জানান, 'এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করতে আমার ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়েছে আড়াই থেকে ৩ কেজি। ৬০ দিনের মাথায় বিক্রি করে ৪-৫ লাখ টাকা লাভবান হবো বলে আশা করছি।

তার এই সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক তরুণ অসময়ে তরমুজ চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ছাত্র শাহীন আলম ও তার চাচাতো ভাই মানিক ২০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। উপজেলার কামারপুকুর গ্রামে তাদের জমিতেও থরেথরে শোভা পাচ্ছে রঙ বেরঙের তরমুজ। খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিন আলম জানান, 'বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে বাড়িতে চলে আসি। অনেকটা অবসর সময় কাটছিল। ইউটিউবে গ্রীষ্মকালে তরমুজ চাষ করা যায় দেখে অনুপ্রাণিত হই। তাই চাচাতো ভাইকে নিয়ে বাড়ির ২০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ করি। ফলন ভালোই হয়েছে। আশা করছি খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হবো।'

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তাহের  জানান, কৃষিতে সমৃদ্ধ ঠাকুরগাঁও জেলা দিনদিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু উদ্যমী  শিক্ষিত তরুণের অংশগ্রহন। এমনই শাহীন ও মামুন নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা অসময়ের তরমুজ চাষ করে সাফল্যের আশা করছেন।

তিনি বলেন, জেলার হরিপুর উপজেলায় প্রায় এক হেক্টর জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ব্ল্যাক বেবি ও গোল্ডেন ক্রাউন নামের তরমুজের চাষ করে চাষীরা লাভের আশা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার্বক্ষনিক তাদের পাশে থেকে বালাই ব্যবস্থাপনা ও সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তরুণ এসব উদ্যমী চাষী পণ্যের নায্যমূল্য পেয়ে লাভবান হলে জেলায় অসময়ে তরমুজ চাষে অনেকেই এগিয়ে আসবে।

বিআইবি/এডিবি/