ন্যাভিগেশন মেনু

ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধের উপায়


ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।

তবে কয়েকটি উপায়ে ডায়াবেটিস ঠেকানো যায় -

১) প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটুন:

নগর জীবনে আমাদের শারীরিক পরিশ্রম এবং হাঁটার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু যাদের পিতা-মাতা বা পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জেনেটিক্যালি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে তারা যদি আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই নিয়মিত হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম করতে শুরু করেন, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।

এজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত একঘণ্টা হাঁটতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলাধুলা বাড়ানো যেতে পারে।

২) জীবনধারা পাল্টে দিন:

যাদের পরিবার বা বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই জীবনযাপনের ধরন পাল্টানো উচিত।

যেসব পরিবারের বাবা-মা বা দাদা-দাদী, নানা-নানীর ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে তাদের উচিত আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা।

এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে নিয়মিত সময়ে খাবার খাওয়া, নিয়ম মেনে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়া, যানবাহন ব্যবহার কমিয়ে হাঁটাচলা বাড়ানো, মিষ্টি জাতীয়, ফাস্টফুড ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা ইত্যাদি।

৩) ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিন:

শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নয়, আরও অনেক রোগের কারণ হতে পারে ধূমপান ও মদ পানের অভ্যাস।

ডায়াবেটিস রোগ ঠেকাতে যেসব খারাপ অভ্যাস সবার আগে বাদ দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস। কারণ এগুলো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

৪) মিষ্টি পরিহার করুন:

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

স্থুলতা বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার কারণেও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

সাধারণ মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, ভারি খাবার স্থুলতার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোনওভাবেই অতিরিক্ত ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া না হয়।

বিশেষজ্ঞরা এজন্য মিষ্টি, ফাস্টফুড, পোলাও, বিরিয়ানি, রেড মিটের মতো ভারি খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। মসৃন সাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে ভুষিওয়ালা আটার রুটি। এটাই প্রথম ধাপ।

এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংক, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি।

আর স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, ফল, বিনস এবং মোটা দানার খাদ্যশস্য।

স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন সারডিন, স্যামন এবং ম্যাকেরেল।

একবেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমাণে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।

এছাড়া প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত ওজন মাপতে হবে। শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ও খাবার নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবারের তালিকা তৈরি করে সেটা অনুসরণ করা উচিত। ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে, তেমনি ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫) রক্তে চিনির মাত্রার ওপর নজর রাখুন:

যাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অবশ্যই বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে।

এজন্য সবসময় হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়। এখন অনেক ফার্মেসিতে স্বল্পমূল্যে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়। সেখান ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যাদের শিশুর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাদেরকেও বছরে অন্তত একবার করে পরীক্ষা করাতে হবে। সেই সঙ্গে বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে -

> ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা

> দুর্বল লাগা ও ঘোর ঘোর ভাব আসা

> ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া

> সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া

> মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া

> কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া

> শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা

> চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব

> বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা

> চোখে কম দেখতে শুরু করা

সিবি/এডিবি/