ন্যাভিগেশন মেনু

তাড়াশে চাঁই তৈরি ও বিক্রির ধুম


তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: দেশিয় জাতের মাছের জন্য বিখ্যাত চলনবিল। ক'দিন পরেই চলনবিলের মাঠ-ঘাট বর্ষার পানিতে ভরে যাবে। সেই সাথে চলনবিলের বিশাল জলরাশিতে প্রায় ৩-৪ মাস পেশাদার ও সৌখিন মাছ শিকারিরা মাতবেন চাঁই দিয়ে মাছ ধরতে।

এরইমধ্যে চলনবিলে মাছ শিকারের অন্যতম ফাঁদ, চাঁই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিলপাড়ের মৌসুমী কারিগররা। বিল অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে চাঁই তৈরির সাথে জড়িত কারিগররা ঘরে বসেই মাছ শিকারের যাবতীয় সরঞ্জাম তৈরি করে থাকেন। 

বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবরিষা, চলনালী, শিধুলী, চরকাদহ, উদবারিয়া, পোয়ালশুড়া, সোনাবাজু, বড়াইগ্রাম উপজেলার মাড়িয়া, শ্রীরামপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগররা ভালো দাম পাওয়ায় বহু বছর ধরে মৌসুমী পেশা হিসেবে চাঁই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

শিধুলী গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগর আয়শা-সালাম দম্পতি জানান, মাছ ধরার সামগ্রী চাঁই তৈরিতে তোল্লা বাঁশ, তালের ডাকুর, দা, কান্তি, আঁশ ছড়ানোর জন্যে বাঁশের চুঙ্গির দরকার হয়। প্রথমত, তালের ডাকুর ৭ থেকে ৮ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে ওই ডাকুরগুলো থিতিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়। আঁশ এবং বাঁশের খিল চাঁই বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয়।

তারা জানান, 'তোল্লা বাঁশে কাজ করে বেশি সুবিধা। এই তোলা বাঁশ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ওই ভেজা বাঁশ রোদে শুকিয়ে দা দিয়ে চিরে ভাগ ভাগ করে সুবিধা মতো চাঁইয়ের দুই পাশ শক্ত করে আটকানো হয়।'

মৌসুমের শুরুতেই চলনবিলের চাঁই বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ চাঁচকৈড়, কাছিকাটা, ছাইকোলা, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, মির্জাপুর, সলঙ্গাসহ ২০ থেকে ২৫টি হাট চাঁই-এ ভরে উঠেছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাঁশের দাম বাড়ায় বাজারে চাঁইয়ের দামও বেড়েছে বলে জানান পাবনার ভাঙ্গুড়ার রবীন্দ্র মোহন দাস (৪৮)। 

এদিকে চলতি বছর বর্তমান বাজারে প্রতিটি স্বাভাবিক মাপের চাঁই ৩০০ থেকে ৩৫০ এবং বড় চাঁই প্রকারভেদে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাড়াশের নওগাঁ হাটে আসা নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক আবু জাফর (৫৫)।

তিনি জানান, গত ৭-৮ বছরে চাঁইয়ের দাম দ্বিগুন হয়েছে। তারপরও চলনবিলের সৌখিন ও মৎস্য শিকারিরা দেদারছে চাঁই কিনছেন।

শুধু তাই নয়, চলনবিল এলাকায় তৈরি চাঁইয়ের চাহিদা থাকায় বর্ষা মৌসুমে চলনবিল এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের যেমন - নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, গাইবান্দার পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

তেমনি একজন পাবনার সুজা নগর থেকে আসা চাঁই কেনার বেপারি আব্দুর রহমান জানান, 'আমি চলনবিল অঞ্চলে তৈরি চাঁই, খোলসুন, ধুন্দি, ভাইর, বিত্তিসহ নানা রকমের মাছ শিকারের উপকরণ, তাড়াশের নওগাঁ, চাটমোহরের সাইকোলা, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নয়াবাজার হাট থেকে কিনে থাকি।' 

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ জানান, চলনবিল এলাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে লাখ লাখ টাকার মাছ তৈরীর নানা উপকরণ বিক্রি হয়। যা এ এলাকার কারিগররা তৈরি করেন।

এমএসএম/এডিবি/