ন্যাভিগেশন মেনু

দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব জীবনগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ


সালাউদ্দীন কাজল, জীবননগর প্রতিনিধি :

চুয়াডাঙ্গার সীমাবর্তী উপজেলা জীবননগরের উথলী গ্রামে অবস্থিত উথলী মহাবিদ্যালয়। জীবননগর পৌর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মহাবিদ্যালয়টির অবস্থান। 

চার বছর আগে এখানে নির্মিত হয় ৪-তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব একাডেমিক ভবন। আগে মহাবিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতেই হিমশিম খেত কর্তৃপক্ষ। 

অবকাঠামো ও স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীরা উপজেলা শহরের কলেজে ভর্তি হতো। নতুন ভবন হওয়ায় এ অঞ্চলের আশপাশের শিক্ষার্থীরা এখন এ কলেজটিতেই ভর্তি হচ্ছে এবং ভালো ফলাফলও করছে। পাশাপাশি কমেছে মেয়েদের ঝরে পড়ার হারও।

জীবননগর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলেমিটার দূরে সেনেরহুদা গ্রাম। সেখানে জান্নাতুল খাদরা দাখিল মাদ্রাসা অবস্থিত। এ মাদ্রাসাটিতে ৪ কক্ষের টিনসেড ঘরেই পাঠদান করত শিক্ষার্থীরা। সেখানেও নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ৪-তলা বিশিষ্ট আধুনিকমানের ভবন। 

উথলী মহাবিদ্যালয়টির দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের পর থেকেই সেখানে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে ঝরে পড়ার হারও এমনটাই জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগে কলেজটিতে ভালো মানের ক্লাসরুম ছিল না। ছিল না স্যানিটেশন সুবিধাও। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়তো। এখন কলেজটির ভবনের দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভরে যায়। 

এমন চিত্র শুধু উপজেলার উথলী মহাবিদ্যালয় এবং সেনেরহুদা  জান্নাতুল খাদরা দাখিল মাদ্রাসা নয়। উপজেলার প্রায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। 

বর্তমান সরকারের পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ভবন নির্মাণের কারণে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমেছে। গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক ভবনের ভঙগুর চিত্র এখন আর নেই। গাছের নিচে কিংবা ভাঙা বেড়ার ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের দৃশ্য এখন অতীত। 

জীবননগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র জানান,  সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্র-ছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়া কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। 

শিক্ষার অগ্রগতিতে গত এক দশকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ইতিমধ্যে প্রতিটি প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে উপজেলার ৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করেছে এবং ৬ টি ভবনের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে যা চলতি বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। 

এছাড়া উপজেলায় ১৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উর্ধমুখী ভবন নির্মান করা হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। 

এজন্য প্রতিটি ভবনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট, টানা বারান্দা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখা, ছাদে লাল টালি দিয়ে ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. আলী আজগার টগর জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা, টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। 

শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নিয়েছে।  টেকসই শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছে সরকার। 

আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য আমরা শহর-গ্রামের শিক্ষার মধ্যে কোনো পার্থক্য রাখতে চাই না। সবখানেই আমাদের গুরুত্ব সমান। 

বরং গ্রামের শিক্ষার দিকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছি। এখন গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের চেহার আগের মতো ভঙগুর নেই। সেখানে নতুন নতুন দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

এজন্য অবকাঠামো বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ক্লাসরুম পেলে তাদের পড়াশোনায় অগ্রহ বাড়বে। সব মিলিয়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 

শিক্ষা খাতে সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে, যার সুফল পাবে জনগণ।

এস এস