ন্যাভিগেশন মেনু

দেশে সাপের কামড়ে বছরে প্রাণ হারায় ৬ হাজার মানুষ


দেশে সাপের কামড়ে বছরে প্রাণ হারায় ৬ হাজার মানুষ আর বছরে প্রায় ৮ লাখ ৯০ হাজার মানুষকে সাপে কামড়ায়। গবেষকেরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি কামড়ায়।

আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন সাময়িকীতে প্রকাশিত বাংলাদেশে গোখরা সাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষক্রিয়ার লক্ষণ এবং এসব রোগী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রবন্ধে গবেষকেরা এই তথ্য দিয়েছেন। 

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে তারা গবেষণা করেছেন। গোখরা সাপের কামড়ে আক্রান্ত ৭০ জন রোগীর পরিস্থিতি গবেষকেরা বিশ্লেষণ করেছেন। 

প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে, গোখরা সাপের বিষক্রিয়া নিয়ে এতো বড় গবেষণা আগে কোনও দেশে হয়নি। 

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে। গোখরা সাপের কামড়ে আক্রান্তের ঘটনা সবচেয়ে কম ঘটে শীতকালে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। 

মে, জুন ও জুলাই - এই তিন মাসে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফায়েজ।

এই গবেষক দলের একজন সদস্য সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. রিদওয়ানুর রহমান ২০ বছর ধরে সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, বর্ষার সময় সাপ শুকনাে জায়গা খোঁজে। 

সাপ ও মানুষ একই ধরনের শুকনা জায়গায় বসবাস করে। তাই এ সময় সাপের কামড়ে আহত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি হয়। মূলতঃ গোখরা (কোবরা) ও কেউটে (ক্রাইট) সাপের কামড়ে মৃত্যু ঘটে। 

এরমধ্যে কেউটে সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে থাকে। আর গোখরা সাপ ফসলি জমিতে ও রাস্তাঘাটে থাকে। 

গোখরা ও কেউটে সাপের বিষক্রিয়ায় পার্থক্য আছে। গোখরার কামড়ে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়, চোখ বন্ধ হয়ে আসে। আর কেউটে সাপের কামড়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। 

পাশাপাশি কামড়ের স্থান থেকে ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হয়। তবে দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে একই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।সাপে কামড়ালে এখনো অনেক মানুষ হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। 

সাধারণ মানুষকে বোঝানো দরকার, সাপের কামড়ে আধুনিক চিকিৎসা আছে। সরকারি হাসপাতালে এর ভালো চিকিৎসা হয়, ওষুধ মজুত থাকে।

ভারতে গত বিশ বছরে ১২ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে মারা গেছে বলে নতুন এক গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে। জরিপে বলা হয়েছে, সাপের কামড়ে মৃতের প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে, এবং এক চতুর্থাংশ শিশু। 

ভারতে সর্পদংশনে বেশির ভাগ মানুষ মারা যায় কোবরা (ভারতীয় গোখরা), রাসেলস ভাইপার এবং ক্রেইৎস (কালাচ) প্রজাতির সাপের কামড়ে। বাদবাকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে অন্যান্য অন্তত ১২টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ে।

ই-লাইফ নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি চালিয়েছিলেন যৌথভাবে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ভারতে অসময়ে মৃত্যুর ওপর চালানো মিলিয়ন ডেথ স্টাডি নামে বিশাল এক জরিপ থেকেও তথ্য নেওয়া হয়েছে এই গবেষণার কাজে। 

রাসেলস ভাইপার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় খুবই বিষধর প্রজাতির সাপ। এই অঞ্চলে এই সাপ দেখা যায় খুবই বেশি। এরা সাধারণত ইঁদুর জাতীয় প্রাণি খায়। কাজেই শহরাঞ্চলে এবং গ্রামেও মানুষের বাসার আশেপাশেই তাদের ঘোরাফেরা বেশি।

এস এস/এডিবি/