ন্যাভিগেশন মেনু

ধর্ষণ মামলার ভয়ে প্রেমিকাকে হত্যা


শারীরিক সম্পর্কের পর ধর্ষণ মামলার ভয়ে প্রেমিকাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করে প্রেমিক। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথা বলে দেওড়াছড়া চা বাগানে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

রবিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় ঘাতক প্রেমিক দিপেশকে আটক করে মৌলভীবাজার আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় হত্যার ঘটনা বর্ণনা দেন তিনি।

শনিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে রেশমার ছোট ভাই রহমত আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর কমলগঞ্জে একটি চা বাগান থেকে রেশমার গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনায় জড়িত ঘাতক প্রেমিক দিপেশ উরাংকে (২৪) আটক করে পুলিশ। তিনি পেশায় একজন সিএনজিচালক।

পুলিশ জানায় , ৮-৯ মাস আগে উপজেলার মাধবপুর চা-বাগানে বন্ধুর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে সুনছড়া চা-বাগানের দীপেশ ওরাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় রেশমার। পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনের কথাবার্তা ও একপর্যায়ে মন বিনিময় হয়। প্রেমিককে একান্তভাবে পাওয়ার জন্য দীপেশকে বিয়ের কথা জানায় রেশমা। দীপেশও সানন্দে রাজি হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করে ৯ তারিখ সন্ধ্যার পর দুজনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। পরিকল্পনা মোতাবেক দীপেশ রাত ৯টার দিকে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে মাধবপুর চা-বাগান থেকে রেশমাকে নিয়ে দেওড়াছড়া চা-বাগান হয়ে মৌলভীবাজারের দিকে রওনা হয়। দেওড়াছড়া চা-বাগানের ২৩ নম্বর সেকশনে পৌঁছানোর পর রাস্তা থেকে ১০-১৫ গজ ভেতরে চা বাগানের মাঝখানে দুজন বসেন।

এ সময় দীপেশ প্যান্টের পেছনের পকেটে থাকা রশি বের করে পেছন থেকে রেশমার গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। অন্যদিকে রেশমার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকে তাকে। একদিন দুদিন করে সময় গড়িয়ে যায়। চা বাগানের জনহীন স্থানে পরে তাকে রেশমার মরদেহ। ১৩ তারিখ চা শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে একটি মেয়ের মরদেহ দেখে কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেয়। কমলগঞ্জ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পিবিআই ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ টিমকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। পিবিআই টিম ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে ব্যর্থ হয় কারণ লাশে পচন ধরে গিয়েছিল। পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

১৪ নভেম্বর রেশমা আক্তারের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম পুলিশের মাধ্যমে হাসপাতালে গিয়ে লাশের পরিধেয় কাপড়, গলায় তাবিজ ও পায়ের নূপুর দেখে লাশটি তার বোনের বলে সনাক্ত করেন।

প্রাথমিকভাবে তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে এগোতে থাকে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম। সন্দেহভাজন দীপেশ ওরাংকে ১৪ তারিখ সুনছড়া চা বাগানের বাজার লাইন থেকে আটক করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, রেশমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দেওড়াছড়া চা বাগানে কে বা কারা তার মোটরসাইকেল আটকে রেশমাকে নিয়ে যায় এবং তাকে মারধর করে। এরপর সে বাড়ি চলে আসে কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। দীপেশের কথাবার্তার মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য যে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়েছিল তার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বুঝতে পারে দীপেশই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জাম জানান, ব্যাপক জিজ্ঞাশাবাদে দীপেশ একপর্যায়ে পুরো ঘটনা স্বীকার করে জানায় তাদের দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তাই রেশমা আক্তার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তা না হলে রেশমা তার নামে নারী নির্যাতন মামলা করবে। এই নারী নির্যাতন মামলার ভয়ে দীপেশ ঠান্ডা মাথায় রেশমাকে খুনের পরিকল্পনা করেন।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দীপেশ রেশমাকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথা বলে ৯ তারিখ রাতে দেওড়াছড়া চা-বাগানে নিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ শুরু থেকেই যতো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত সব নিয়েছে। তাই দ্রুত ঘটনার রহস্য বের করা সহজ হয়েছে।

সিবি/এডিবি