ন্যাভিগেশন মেনু

নওগাঁর শুটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে


উত্তরের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলা। এ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এ ছাড়াও শতাধিক বিল রয়েছে। যার কারণে আত্রাইয়ে উৎপাদিত দেশি বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছের শুটকির কদর রয়েছে দেশজুড়ে।

শুধু দেশেই নয়, এই শুটকির প্রধান বাজার হচ্ছে ভারত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে শুটকি মাছ রপ্তানি বন্ধ থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে এখানকার প্রায় শতাধিক শুটকি মাছ ব্যবসায়ী।

চলতি মৌসুমে প্রায় ৬ কোটি টাকার শুটকি মাছ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে শুটকি উৎপাদন যদি বৃদ্ধি না পায় তাহলে চাষীরা লোকসানের মুখে পড়বে।

শুটকি পদ্ধতি হচ্ছে মাছ সংরক্ষণ করার একটি অন্যতম উপায়। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে উৎপাদিত শুটকির মাছ মানুষের জন্য খুবই উপকারি।

আত্রাই রেলস্টেশন সংলগ্ন ভরতেতুলিয়া গ্রামটি মূলত শুটকির গ্রাম হিসেবেই বিখ্যাত। এখানে উৎপাদিত দেশি প্রজাতির মিঠা পানির ছোট মাছের শুটকিই সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে থাকে।

চলতি বছর বন্যার কারণে আত্রাইয়ের বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ছোট মাছের আমদানি হওয়ায় বর্তমানে শুটকি মাছ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শুটকি পল্লীর বাসিন্দারা। তাই দ্রুত ভারতে এই শুটকির মাছগুলো রপ্তানি করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

আত্রাই রেলস্টেশনে প্রবেশ করতেই রেল লাইনের দুই পাশে চোখে পড়বে শুটকি মাছ শুকানোর মাচাং। শুটকির মাছের গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে।

চলতি মৌসুমে মাছের সরবরাহ নিয়ে কোন চিন্তা নেই ব্যবসায়ীদের কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে বর্তমানে এই শুটকির মাছ রপ্তানি না হওয়ায় শুটকি থেকে আসা লাভের বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই শুটকি মাছের বাজার মূলত দেশের উত্তরের জেলা সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকা। তবে প্রধান বাজার হচ্ছে ভারত।

এই মাছগুলো প্রথমে সৈয়দপুর যায় এরপর সেখান থেকে ট্রেনে ভারতে রপ্তানি করা হয়। শুটকির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বিগত বছরগুলোতে শুটকি মাছ রপ্তানি করে ভালো লাভ করতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখনো পর্যন্ত ভারতে শুটকি মাছ চালান হচ্ছে না। তাই হতাশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বছরের ৬ মাস এই শুটকির মাছ তৈরি করা হয়। আর বাকি ৬ মাস বসে বসে কাটাতে হয় এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩ হাজার মানুষকে।

তেতুলিয়া গ্রামের শুটকি মাছ ব্যবসায়ী রামপদ শীল বলেন, চলতি মৌসুমে কাঁচা মাছের আমদানি অনেক বেশি হলেও ভারতে এই মাছ রপ্তানি না হওয়ার কারণে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবুও এবার ভালো লাভের আশা করা হচ্ছে। যদি ভারত এই মাছ আমদানি শুরু করে তাহলে শুটকি মাছ ব্যবসায়ীরা এই মৌসুমে শুটকি থেকে কিছুটা লাভবান হতে পারবেন।

আরেক ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছের প্রতি কেজি শুটকির মাছ গড়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যদি ভারতে এই মাছ রপ্তানি হতো তাহলে আমরা দ্বিগুন দাম পেতাম। কারণ শুটকি মাছ তৈরি করা অনেক কঠিন একটা কাজ। অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

কর্মচারী হালিমা বেগমসহ অনেকেই বলেন, এই শুটকি মাছ তৈরির কাজ করে কোনোমতে পরিবার চলছে। কিন্তু বছরের ৬ মাস আমাদের বসে থাকতে হয়। তখন কাজকর্ম না থাকার কারণে অনেকটাই খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করতে হয়। তাই তখন সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক কিংবা খাদ্য সহায়তা পেলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম।

আত্রাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, শুটকির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুটকি মাছ তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তারা আগে নদীর পানি দিয়ে মাছগুলো পরিস্কার করতো।

শুটকি ব্যবসায়ীদের দাবি, উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা শুটকি মাছ পরিস্কার করার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দিলে শিল্পটি আরও বিকশিত হতো। ভবিষ্যতে সরকার এই শুটকি পল্লী থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হিসেবে আয় করতে পারবেন। তারা এই শিল্পটিকে আরও আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

বিএআর/ ওয়াই এ/এডিবি