ন্যাভিগেশন মেনু

দেশে কোভিড-১৯ সেবা দিতে প্রাণ গেল ১০০ চিকিৎসকের


কোভিড-১৯ আপনকে পর করে দিয়েছে। খুব কাছের মানুষটিও যখন করোনার সংক্রমণের ভয়ে স্বজনকে ফেলে চলে গেছেন, তখন পরম মমতায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসকেরা। বেশির ভাগ মানুষ যখন ঘরবন্দী, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিরামহীনভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন তাঁরা।

সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন অন্যকে বাঁচাতে নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবেছেন। পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা না নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একের পর এক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। আজ রবিবার (১ নভেম্বর অবধি) মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ এসে দাঁড়িয়েছে।

ডা. সেলিম আহমেদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকা ১০০ স্পর্শ করল। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বা করোনার উপসর্গ নিয়ে গত সাড়ে ছয় মাসে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় দেশে প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল ১৫ এপ্রিল।

ওই দিন মারা গিয়েছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমদ (৪৭)। ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়েই সংক্রমিত হয়েছিলেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবরে চিকিৎসক সমাজসহ সব পেশাজীবী শ্রেণি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকায় যোগ হওয়া সবশেষ নামটি ডা. সেলিম আহমেদের। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন।

ডা. সেলিম আহমেদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকা ১০০ স্পর্শ করল। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বা করোনার উপসর্গ নিয়ে গত সাড়ে ছয় মাসে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

অল্প সময়ের ব্যবধানে এভাবে এত চিকিৎসকের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। করোনায় আমরা অনেক বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে হারিয়েছি।

একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি হতে অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। তাঁরা দেশের সম্পদ। কষ্টের মধ্যেও গর্বের বিষয় হচ্ছে, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সম্মুখসারির এই যোদ্ধারা পিছপা হননি, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

এই তালিকায় সম্ভাবনায় নবীন চিকিৎসক যেমন আছেন, তেমনি আছে নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অনেকেই ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের নাম করা অধ্যাপক। চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ)’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ডা. সেলিম আহমেদ ও তিনি একসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ালেখা করেছেন।

তাঁরা একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভরতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেলিম আহমেদ রাজবাড়ীতে (তাঁর গ্রামের বাড়ি) যুদ্ধে অংশ নিতে চলে যান। 

 জুন মাসটি ছিল চিকিৎসক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দুঃসহ। জুনে প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো এলাকা থেকে এসেছে চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর। বিএমএর তথ্য অনুযায়ী, শুধু জুন মাসেই মারা গেছেন ৪৫ জন চিকিৎসক। যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৪৫ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে গত ৪ জুন, ওই দিন ৫ জন চিকিৎসক মারা যান, যা এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনা। তবে আশার কথা হচ্ছে, গত ছয় মাসের মধ্যে এই অক্টোবর মাসে সবচেয়ে কমসংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।

মৃত্যুর ঘটনাও কম। বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, আগে এই রোগ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা ছিল না, এখন চিকিৎসকেরা অনেক কিছুই জানেন। তাঁরাও সচেতন হয়েছেন—এ জন্য চিকিৎসকদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। এতে রোগীরাও আগের চেয়ে ভালো সেবা পাচ্ছেন।

এস এস