ন্যাভিগেশন মেনু

বিরল প্রজাতির টিকওক গাছ রক্ষায় শেষ ভরসা টিস্যু পদ্ধতি


মৌলভীবাজার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেশের একমাত্র বিরল প্রজাতির ক্লোরোফর্ম বৃক্ষ আফ্রিকান টিকওক গাছটি দাঁড়িয়ে আছে। চারা উৎপাদন করতে না পারায় বিরল প্রজাতির একমাত্র গাছটি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বর্তমানে বিরল প্রজাতির এ গাছটি রক্ষায় শেষ চেষ্টা হিসাবে গাছের টিস্যু সংরক্ষণ করে চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

লাউয়াছড়ায় প্রায় দেড়শো ফুট উচ্চতার এই গাছটি দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। গাছটির গোড়ায় পচন ধরেছে, গোড়ার নিচের একাংশে ক্ষয় শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে ক্ষতস্থান বৃদ্ধি পাবে, রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এবং নতুন চারা উৎপাদন না করলে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে গাছটি চিরতরে হারিয়ে যাবে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের তালিকা থেকেও বাদ পড়বে বিরল প্রজাতির এই গাছ।

বনবিভাগের তথ্যমতে, মৌলভীবাজার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আফ্রিকান টিকওক জাতীয় দুইটি দুর্লভ প্রজাতির গাছ ছিল। ২০০৬ সালের ৭ জুলাই একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ে। সেটির গোড়ার একাংশ এখনও উদ্যানে স্মৃতি হয়ে পড়ে আছে। উদ্যানের মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশ পথের দুপাশে সারি সারি বিশাল আকৃতির নানা প্রজাতির গাছের একেবারে শেষ দিকে বন বিট কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে রাস্তার পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিরল প্রজাতির টিকওক গাছটি।

জানা যায়, আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির ক্লোফোরা এক্সেলসা ক্রান্তীয় আফ্রিকার একটি গাছ। এটি ১৬০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এ জাতীয় গাছ আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এর প্রাকৃতিক বাসস্থান রেইন ফরেস্ট চিরহরিৎ বনে। বর্তমানে এই প্রজাতিটি আদি জন্মভূমি আফ্রিকাতেই ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

আফ্রিকায় ঐতিহ্যগতভাবে এটিকে পবিত্র গাছ বলে মনে করা হয়। এটির নিচে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয় এবং এই গাছের নিচে উপহার তুলে দেওয়ার প্রথাও আছে। এই গাছের কাঠ বাদ্যযন্ত্র ড্রামস এবং কফিন বানাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আসবাবপত্র, ঘরের মেঝে এবং নৌকা তৈরি জন্য ব্যবহৃত হয়। এ জাতীয় গাছ পঞ্চাশ বছর পরে কাটার জন্য প্রস্তুত হয়। অন্যদিকে ভেষজ ঔষধি গাছ হিসেবে আফ্রিকায় এই গাছের পাতা ও বাকলের বহু ব্যবহার ছিল। বিশেষ করে কাশি, হার্টের সমস্যা এবং দুর্বলতার জন্য ব্যবহার করা হয়। ল্যাটেক্স অথাৎ এ গাছের কষ এক ধরণের অ্যান্টি-টিউমার অ্যাজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৩০ সালে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে কয়েকটি চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে দুটি গাছ টিকে ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে এই গাছে কার্বলিক অ্যাসিড ও ক্লোরোফর্মের উপস্থিতির কারণে একটু ঘুম ঘুম ভাব তৈরি হতে পারে। আবার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নাক ও গলাতে জ্বালা এবং হাপানির সম্ভাবনা থাকে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, আফ্রিকান টিকওক এটি অবশ্যই একটি দুর্লভ এবং বিরল প্রজাতির  গাছ। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও এই গাছ থেকে কোনও চারা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। লাউয়াছড়ায় এই গাছটি ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। মহাবিপন্ন প্রজাতির এই গাছটিকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য বর্তমানে চেষ্টা করা হচ্ছে। গাছটির কোনও বীজ নেই,পাতা, ছাল এবং ডাল থেকেও এর চারা হয় না। ফলে  চারা করা দুঃসাধ্য। দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন গবেষক চেষ্টা করে সফল হতে পারেননি। বর্তমানে গাছ থেকে টিস্যু নিয়ে চারা তৈরির চেষ্টা করছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মো রেজাউল করিম চৌধুরী আরও জানান, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ড. রফিকুল হায়দার এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। যেহেতু এই গাছটি দূর্লভ এবং বাংলাদেশের একমাত্র গাছ। এই প্রজাতি রক্ষায় গাছের টিস্যু সংগ্রহ করা হয়েছে। টিস্যু থেকে চারা তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে সফলতা আসবে কি না এখনই বলা যাবে না। টিস্যু পদ্ধতির মাধ্যমে গাছটির বংশবিস্তারের পাশাপাশি এটাকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পিডি/সিবি/এডিবি/