ন্যাভিগেশন মেনু

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহিরাগতদের রাজত্ব


হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ভীড় করছেন বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি ও রোগীদের সঙ্গে অনধিকার চর্চা এই প্রতিনিধিদের কাজ। এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিরব।

সাধারণ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা হাসপাতালে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে কোনও পরীক্ষার কথা লিখিছেন কি না- তা জানতে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন বহিরাহত লোকজন। জোর করেই রোগীদেরকে নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে চান তারা।

এছাড়া চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ামাত্রই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর চারদিকে ভীড় করেন। একেকজন একেকবার ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে নিচ্ছেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের এমন আচরণে অনেক মুমুর্ষূ রোগীর স্বজন বিরক্তিবোধ করলেও এ থেকে রেহাই পান না কেউ। প্রায়ই তাদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের উচ্চ বাক্য বিনিময় হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হওয়ায় দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা এখানে বেশি আসেন। উপজেলার আরও প্রায় আড়াই লাখ মানুষ সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে এর আশপাশে অসংখ্য বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রতিনিধি দিনরাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকেন ও রোগীদের সঙ্গে অনধিকার চর্চা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক মুমুর্ষূ রোগী হাসপাতালে আসার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদেরকে ভালো সেবা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বাইরে নিয়ে যান। এমন ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছেন সন্তানসম্ভবা নারীরা। প্রয়োজন ছাড়াই নারীদের সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় হাসপাতালগুলোতে। বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

আদাঐর ইউনিয়নের মিঠাপুকুর গ্রামের রোজিনা খাতুন বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে পেটের ব্যাথায় ভুগছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে বাইরে আসার পরই এক লোক আমার ব্যবস্থাপত্রটি টেনে নেন। তার সঙ্গে যেতে না চাইলেও তিনি জোর করে কাগজ টেনে নিয়ে যান। পরে টাকা নেই বললে তিনি কাগজটি রেখে অন্য রোগীর পেছনে ছুটতে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুরুষ রোগীর স্বজন বলেন, জরুরি বিভাগ থেকে আমাকে তাড়াতাড়ি ইনজেকশন ও স্যালাইন আনতে বলা হয়। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর এক লোক ব্যবস্থাপত্র দেখতে চান। তিনি হাসপাতালের লোক ভেবে আমি ব্যবস্থাপত্রটি হাতে দিই। এরপর আরও কয়েকজন লোক এসে একেএকে ছবি তুলতে থাকেন। আমার রোগীর মুমুর্ষূ অবস্থা থাকা সত্ত্বেও এখানে অন্তত ৫ মিনিট বিলম্ব হয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতালে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, বাইরে থেকে আসা দালালরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। রোগীরা প্রতিদিনই এদের মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও বিরক্তিকর আচরণ করেন বলে ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম ইশতিয়াক মামুন বলেন, হাসপাতালে কিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি আসার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তারা যেন না আসতে পারে এ ব্যাপারে কর্মরতদের বলে দিয়েছি।

বিএ/এডিবি/