ন্যাভিগেশন মেনু

মাল্টা চাষে সফল চাটমোহরের চাষীরা


পাবনার চাটমোহরের মাল্টা চাষ করে সফল চাষীরা। ইতোমধ্যেই তারা সমতল জমিতে গড়া বাগান থেকে মাল্টা সংগ্রহ শুরু করেছেন। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে তারা খুশি।

মাল্টা পাহাড়ি এলাকার ফল হলেও বছর তিনেক আগে কিছু চাষী চাটমোহরের সমতল ভূমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সবুজ বাহারী ফল মাল্টা চাষ শুরু করেন। সফলও হন তারা। তাদের সফলতা দেখে অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন মাল্টা চাষে। ফলে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষের পরিধি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ১৬ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যাবে। এ হিসেবে চাটমোহরে ২২৫ থেকে ২৪০ মেট্রিকটন মাল্টা উৎপাদন হতে পারে।

উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাঝগ্রামের মাল্টাচাষী ইয়াছিন আলী স্বপন জানান, 'অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর সাংসারিক অনটনের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারিনি। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যু হলে সংসারের হাল ধরি আমি। এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান দিই। মাঝে মাঝে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা জাগলেও ভেবেছি সেখানে গিয়েও তো কাজ করতে হবে। গ্রামের অনেক মানুষ বিদেশে গিয়ে কাজ করে। যাওয়ার খরচ তুলতেই তাদের দুই-তিন বছর লেগে যায়। অনেকে প্রতারিত হয়। তাই বিদেশ যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেই।'

তিনি বলেন, এরপর আদর্শ নার্সারির মালিক মামুন ভাইয়ের উৎসাহে ভারতীয় এবং বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করি। ২০১৮ সালে বাড়ির সামনের নিচু সমতল জঙ্গল পরিষ্কার করে এক বিঘা জমিতে ৮২টি মাল্টার গাছ লাগাই। ২০১৯ সালে ২১ কেজি মাল্টা বিক্রি করি এবং কিছু খাই। 

তিনি আরও বলেন, তারপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মাল্টা সংগ্রহ শুরু করি। খুচরা ১৫০ টাকা কেজি এবং পাইকারি ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করি। পূর্ণ ফলন তখনও শুরু হয়নি। ৫২টি গাছে কম বেশি মাল্টা ধরেছিল। প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করি। আশা করছি চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ মণ মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবো। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

ইয়াছিন আলী বলেন, 'গত বছর বাড়ির পাশে নতুন আরেকটি বাগান করেছি। এবার প্রথম সে বাগানের কিছু গাছে মাল্টা ধরেছে।  আমার মনে হয় মাল্টা চাষ বেশ লাভজনক। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে উঁচু রোদময় এক বিঘা জমিতে ১০০ গাছ লাগালে পরিণত বয়সে খুব সহজেই বিঘা প্রতি প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। বছরে প্রতি বিঘায় খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা।'

অপর মাল্টাচাষী মথুরাপুর ইউনিয়নের উথুলী গ্রামের সানোয়ার হোসেন জানান, 'আমার বড় ভাই এবং আমি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় দেড় বিঘা জমিতে শখের মাল্টা বাগান গড়ে তুলি। গত বছর ছোট ছোট গাছগুলোতে গড়ে পাঁচ-সাত কেজি করে মাল্টা ধরেছিল। প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছিলাম আমরা। আমাদের মাল্টা চাষ, ফলন ও লাভ দেখে এলাকার অনেকের আগ্রহী হন মাল্টা বাগান করতে। এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে মাল্টা চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিপক্ক সবুজ ফল সংগ্রহ শুরু করেছি। আশা করছি এবারও যথেষ্ট লাভ করতে পারবো।'

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ বাংলাদেশ পােস্টকে জানান, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল মাল্টা। উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এমন জমিতে মাল্টা ভালো হয়। যে মাটির পিএইচ (পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন) এসিডিক হয় সে মাটি মাল্টা চাষের জন্য ভালো। 

তিনি আরও জানান, চাটমোহরের গুনাইগাছা, মথুরাপুর, হরিপুর, মূলগ্রাম ও ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের উঁচু জমিগুলো মাল্টা চাষের উপযোগী। স্থানীয় বাজারে এ এলাকায় উৎপাদিত মাল্টার বেশ চাহিদা রয়েছে। সবুজ বর্ণের মাল্টাগুলোর স্বাদ ও মিষ্টতা অন্য যে কোন মাল্টার চেয়ে কম নয়।

আইকেআর/এডিবি/