ন্যাভিগেশন মেনু

মির্জাগঞ্জে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা


মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: 

এখন বর্ষাকাল। তাই পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় চলছে নৌকা তৈরির মহোৎসব।  চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজও। প্রতিবছর বর্ষা আসার আগেই এ উপজেলায় শুরু হয় নৌকা তৈরির কাজ। এ সময় নৌকার কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

বর্ষাকালে এ উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে থৈ থৈ করে। তলিয়ে যায় ফসলের মাঠ। তাই আউশ ও বোরো ধান কাটা এবং ঘরে তোলার জন্য প্রয়োজন পরে নৌকার। তাছাড়া মৎস্যজীবীরাও মাছ ধরার কাজে ছোট-বড় নৌকা ব্যবহার করে থাকেন। তাই বর্ষা মৌসুম আসলে এখানে বেড়ে যায় নৌকার কদর।

সরেজমিনে মাধবখালী ইউনিয়নের কিসমত রামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নৌকা তৈরির কারিগর লক্ষন গাইন, নিখিল গাইন, কালু গাইন, মিহির গাইন, সিধার মিস্ত্রি, লালচান মিস্ত্রি, কালা হাওলাদার, নিরঞ্জন গাইন, ভরত গাইন, নিরাত গাইন, আ. জলিল ও মাসুম হাওলাদারসহ অনেকেই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নৌকা এখানেই তৈরি হয়ে থাকে।

পূর্বপুরুষের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যুগ যুগ ধরে তারা এই নৌকা তৈরি করেন। বাড়ির পাশের সড়কে পরিবারের সবাই মিলে নৌকা তৈরি করতে দেখা গেছে। তাদের এখন নাওয়া-খাওয়ার ফুসরত নেই।

মূলত তারা পেশায় কাঠমিস্ত্রি। শুকনো মৌসুমের ৬ মাস তারা গ্রামে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। বর্ষা মৌসুমে কাজ কমে গেলে নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানে দুই ধরনের নৌকা তৈরি করা হয়। ৮ ফুট থেকে ৯ ফুট র্দৈঘ্যের নৌকা পচিঁশ থেকে তিন হাজার টাকা আর ১০ ফুট থেকে ১১ ফুট র্দৈঘ্যের নৌকা তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ৯ থেকে ১০ফুট র্দৈঘ্যের নৌকার।

নৌকা তৈরির কারিগর ভরত গাইন জানান, 'বর্ষা মৌসুমে বেকার না থেকে পরিবারের সকলে মিলে নৌকা তৈরি করি। প্রতি সপ্তাহে শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রত্যেক পরিবার ৮-১০টি নৌকা তৈরি করা হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমন্ত নদীতে ভাসিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে রশি বেধেঁ নৌকা বেচার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারে। ওই বাজারে বরিশাল, নলছিটি, বাকেরগঞ্জ, মির্জাগঞ্জ, দুমকী ও বাউফলসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষক ও জেলেরা নৌকা কিনতে আসেন। বাজারে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে নৌকা বেচাকেনা শেষ হয়।'

তিনি বলেন, এ ছাড়াও ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে সাগরকন্যা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় চলে নৌকা বেচার ধুম। মাছের ঘের সমুদ্র কূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবীরা মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন নৌকা। এখানেও আমরা সবাই নৌকা বেচার জন্য নিয়ে যাই।' 

মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদার জানান, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মাছ চাষ ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বর্ষায় আউশ ও বোরো ধান নৌকা ছাড়া ক্ষেত থেকে ঘরে তোলা সম্ভব নয়। তাই এই শিল্প বাচাঁতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন।

এডিবি/