ন্যাভিগেশন মেনু

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত


পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম)  মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সাধারণ আসামিদের মতো পৃথক হ্যান্ডকাপে বেঁধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বেশ কয়েক জঙ্গি আসামিকে আদালতে আনা হয়। যাদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ কিংবা তাদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো ছিল না। এই জঙ্গিদের মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়েছিল।

রোববার ভরদুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।

দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার। আজ সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

এদিকে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশীদ বলেন, জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা নজরদারিতে রয়েছেন। সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।তিনি বলেন, যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। আসামিরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে পুলিশ প্রধান রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এছাড়া জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শামীম ও সিদ্দিক দুজনই প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে।

এক সুত্রে জানা জায়,আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী দুটি মোটরসাইকেলে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন সদস্য অবস্থান নেয়।

এছাড়া আরও ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করে। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে আসামিদের একজন লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে একজন কনস্টেবলের মুখে আঘাত করে। তবে জঙ্গিরা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাত ও সবুরকে ছাড়াতে পারেনি।

দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানার কোর্ট পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞানামা আসামি করা হয় আরও ৭-৮ জনকে।

কোতোয়ালি থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- শাহিন আলম, শাহ আলম, বিএম মজিবুর রহমান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, খায়রুল ইসলাম, মোজাম্মেল হোসেন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ, আব্দুস সবুর ও রশিদুন্নবী। সোমবার (২১ নভেম্বর) ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় ঢাকার পুলিশ কমিশনার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’।