ন্যাভিগেশন মেনু

লকডাউনে ব্যবসায়ীদের প্রতিবছরের মওকা এবার হাতছাড়া


রোজা মানুষের কাম-লোভ সংযম থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। আর এক মাস রোজা শেষে ঈদের খুশির বিষয় তো আছেই। কিন্তু আমাদের দেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রোজার মাসটিকে বা ঈদকে মওকা হিসেবে বেছে নেয়।

বাড়িয়ে দেয় পণ্য সামগ্রীর দাম। মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নআয়ের লোকেরা পড়েন চরম সংকটে। কিন্তু ওই শ্রেণির ব্যবসায়ীরা তো জনবান্ধব নয়। তাদের চাই কাড়ি কাড়ি টাকা। 

আর তাই পণ্যের দাম বাড়িয়ে অবৈধ আয়ের পথ বেছে নেয়। পক্ষকাল পরেই বাংলাদেশে খুশির ঈদ। অসাধু ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যর দাম বাড়িয়ে দেওয়া এ চরিত্র দীর্ঘদিন ধরে চলছে। 

এতে যে তারা ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করছে তা তাদের মাথায় থাকে না। তারা ভাবে ফেতরা ও কোরবাণীর মাংস বিলিয়ে দিয়ে সোয়াব কামাবেন।

দাম বাড়িয়ে যদি বেশি দাম না পেলেও ব্যবসায়ীরা কখনো বাজারে পণ্য মূল্য হ্রাস করে না। ধরে রাখে আগামীতে আরো বেশি দামে বিক্রি করার আশায়। 

এবারও অবশ্য রোজা শুরুর আগেই নিত্যপণ্যের দাম  বেড়েছিল বটে। তবে কয়েক রোজা যেতেই চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম সামান্য হ্রাস পেয়েছে।

এ বছর ওইসব ব্যবসায়ীর চরিত্র কিছুটা অন্যরকম দেখা গেল। দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় দেখা গেল না্।হয়তো বা বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের ভয়ে। 

তারপর আবার ঢাকার সিংহভাগ মানুষ লকডাউনের কারণে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছেন। সব হোটেল-রেস্টুরেন্টও বন্ধ। এমনকি রাজধানীর সবগুলো ক্লাবও বন্ধ। যেখানে দিন-রাত খাবার গ্রহণ করতেন ওই সব ক্লাবের সদস্যরা।এ কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিক্রিবাট্টা কমে গিয়েছে। 

এছাড়া এবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বেশ কিছু খোলাট্রাকে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির প্রভাবে দাম কমতে পারে বলে অধিকাংশের ধারণা।

সাধারণত: দেখা যায়- খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দীর্ঘ লাইন ধরে টিসিবি’র পণ্য কেনেন। সেখানে মধ্যবিত্তরা লাইন দিতে লজ্জা বোধ করেন। আপনজন দেখে ফেললে লজ্জায় পড়তে হবে এই ভেবে। 

কিন্তু লকডাউনে লোক কম থাকায় এবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় প্রাইভেট কার দাঁড় করিয়ে রেখে অনেকে টিসিবি’র ট্রাক থেকে পণ্য কিনছেন। অবশ্য সাহেব ভেতরে বসে রয়েছেন পণ্য কিনতে এসেছেন কার চালক। তারপরও বলতে হবে কিনছেন তো।

আবার প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবির পণ্য বিক্রি হওয়া দেখেও সাংবাদিকরা সেখানে ঘেষেন না লজ্জায়। এবার প্রেসক্লাবের ভেতরে টিসিবির পণ্য বিক্রি হওয়ায় সকালেই সাংবাদিকরা পণ্য কিনতে চলে আসেন।

আবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি- ডিআরইউতেও সেখানকার সদস্যদের জন্য টিসিবি থেকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। যা সাংবাদিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক।     

টিসিবির ২ কেজির সোয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, মসুর ও চিনি প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৩ কেজির প্যাকেট ১০০ টাকা। টিসিবি সরাসরি আমদানী করেই বাজারে তোলে বিধায় তাদের পণ্যের মানও ভাল্।কিন্তু বাজারে এ পণ্যের মূল্য অনেক বেশি।

পক্ষান্তরে আমদানীকারকরা বিদেশ থেকে পণ্য এনে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার অসাধু মনোভাব নিয়ে গুদামজাত করে রাখে। যেন বেশি দামে বিক্রি করা যায়। দীর্ঘদিন গুদামে থাকায় তাদের পণ্যের মানের অবনতি ঘটে। 

পণ্যের দাম কমার আরেকটি কারণ লকডাউনের ফলে কাজ না থাকায় ঢাকা শহরে ব্যাপকহারে জনসংখ্যা কমেছে। অধিকাংশের কাজ নেই। তাই হাতে টাকা নেই। এসব কারণে পণ্যের দাম কমেছে।

পণ্যের দাম কমার আরেকটি বড় কারণ হলো লকডাউনের কারণে ঢাকার অসংখ্য হোটেল-রেস্টুরেন্টের ঝাপ বন্ধ তো ব্যবসাও বন্ধ। ফলে এখন তেল, ডাল, ছোলার চাহিদা  কম। এ কারণেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে বাধ্য হয়েছ। পাইকারিতে দাম কমায় খুচরাতে তার প্রভাব পড়েছে।

টিসিবি ঢাকার সূত্রাপুর বাজার, শ্যাম বাজার, কচুক্ষেত বাজার, শাহজাহানপুর, মালিবাগ বাজার, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী বাজার, মহাখালী বাজার, উত্তরা আজমপুর বাজার, মিরপুর-১ নম্বর, রহমতগঞ্জ বাজার, রামপুরা বাজারের পণ্যের দাম কমই দেখা গেল।

রোজার সময় চাহিদা বেশি থাকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, খেজুরের।বিক্রেতাদের ভাষ্য-এবার করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই অনেক দিনের বাজার করে রেখেছেন। সে কারণে এখন চাহিদা কম। তাই দাম কমেছে।

একে ঢাকায় জনসংখ্যা কম। অন্যদিকে সরকারের ত্বরিৎ ব্যবস্থায় বাজারে পণ্যের আমদানী ব্যাপক। ক্রেতা সেই তুলনায় কম।

ক্রেতার কেনার চাহিদা  তেমন না থাকায় দাম কমেছে।এখানে ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার কোন বিষয় নয়।টিসিবি ব্যাপকহারে ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল, তেল, চিনি সহনীয় দামে বিক্রি করায় বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে ওইসব পণ্যের চাহিদা কম থাকায় বিক্রি যেমন কমেছে তেমনি দামও কমেছে।

সব থেকে বেশি দাম কমেছে আদার। ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আমদানি করা আদার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৮০-২০০ টাকায়। আর ২৫০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি আদার দাম কমে হয়েছে ১৫০-২০০ টাকা।

টিসিবি ১২০ টাকায় প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি করছে। বাজারে একই ধরনের ৩/৪ শো টাকার সাধারণ মানের খেজুরের দাম কমে ২২০-৩০০ টাকা নেমেছে।

১৫০-১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের কেজি কমে ১৫০ টাকা হয়েছে। বড় দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯৫ টাকা, যা রোজার আগে ছিল ৯০-১০০ টাকা। 

বোতলজাত ১ কেজি সোয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লুজ সয়াবিন তেলের কেজি কমে ৯২-৯৩ টাকা হয়েছে।

৮৫/৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোলার দাম কমে ৭৫/৮০ টাকায় নেমেছে। পাম অয়েলের (সুপার) ৮০-৮৫ টাকা থেকে ৮০-৮৩ টাকা হয়েছে। সরু চালের দাম ৬০-৬৮ টাকা থেকে কমে ৫৮-৬৫ টাকা হয়েছে।

বাজারে শাকসব্জির দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। মোটামুটি ৩০/৫০ টাকার মধ্যে প্রায় সবজি মিলছে।তবে একেকজন এক এক রকমের দাম নিচ্ছেন। আগের বছর ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকা্র লাউ পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে।পিয়াজও প্রতি কেজি ৪০/৪৫ টাকা।  

তবে ছোট দানার মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা প্রতি কেজি। ছোট এলাচের দাম ৪০০০/৪২০০ টাকা। 

এস এস