ন্যাভিগেশন মেনু

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ কি?


লিপ ইয়ার (Leap year)। বাংলায় যাকে অধিবর্ষ বলা হয়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস হয় ২৮ দিনে। তবে প্রতি ৪ বছর পর পর এই মাসটি হয় ২৯ দিনে। যাকে বলা হয় লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।  চলুন জেনে নেওয়া যাক অধিবর্ষ কি ও কেন হয়-

লিপ ইয়ারের ইতিহাস:

শেষ লিপ ইয়ার বছর ছিল ২০১৬ সাল। তারপর এটি আসে এ বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের সত্যিকারের সময়ের সঙ্গে ক্যালেন্ডারের হিসেবের মিল বজায় রাখার জন্যই লিপ ইয়ারের আর্বিভাব।

কিন্তু লিপ ইয়ারের সময় ফেব্রুয়ারি মাসকে একদিন বাড়িয়ে ২৯ দিন বানানো হয় কেন? পৃথিবী সূর্যের চার পাশে ঘুরতে কতদিন সময় লাগে? প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড।

কিন্তু আমরা যদি ৩৬৫ দিনে বছর ধরি চার বছর পর দেখা যাবে ২৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ৮ সেকেন্ড সময় কম হিসাব করা হয়েছে।

এই সমস্যা দূর করার জন্য প্রতি ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসে ১ দিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয়েছে এবং সেই বছরকে লিপ ইয়ার বলা হচ্ছে।

এই লিপ ইয়ার কোথা থেকে আসলো?

খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬ সালের দিকে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার আর তাঁর পার্সোনাল সেক্রেটারি  অর্থাৎ জোতির্বিদ সোসিজেনিস এই দুজন মিলে এটা হিসেব করেন যে, পৃথিবীকে পুরো সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসতে আসলে সঠিক সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টার মতো।

তখন ৭টা মাসকে গিফট দেয়া হয়েছিলো ৩০ দিন আর ৫টা মাসকে দেয়া হয়েছিলো ৩১ দিন। জুলিয়াস এখানে একটা দুই নাম্বারি করেছিলো। সে করছে কি মাসের গননা শুরু করছে উদ্ভট ভাবে।

মানে আমরা এখন জানুয়ারি মাসকে প্রথম মাস জানি, কিন্তু তিনি এটাকে এগারোতম মাসে ফেলে দিয়েছিলেন। তাহলে বারোতম মাস ছিলো ফেব্রুয়ারি। আর পঞ্চম মাসের নামটা ছিলো বিদঘুটে, কুইন্টালিস। এই নামটা জুলিয়াসের পছন্দ হয়নি।

সে নিজের নাম জুলিয়াসটাই রেখেছিলো পঞ্চম মাসটাকে। সেটাই এখন আমাদের সময়ের জুলাই মাস।

জুলিয়াসের তাণ্ডবের পর আরেক সম্রাট তাণ্ডব চালাতে আসেন নিরীহ মাসগুলোর উপর। তিনি ছিলেন রোমান সম্রাট অগাস্টাস।

তিনি তখন ষষ্ঠ মাসের উপর তাণ্ডব চালান। তখনকার দিনে ৬ নম্বর মাসটার নাম ছিলো সেক্সটিলিস।

এই সম্রাটও নিজের নাম থেকে অগাস্ট নামটা রাখেন মাসটার, যেটা আমাদের এখনকার অগাস্ট মাস। এই দুই তাণ্ডবের সম্রাট তখনকার দিনের বছরের শেষ মাস ফেব্রুয়ারি থেকে ১টা করে মোট দুটো দিন ছিনিয়ে নিয়ে জুলাই আর অগাস্টের শেষে যোগ করে দেয়।

ফলে এই দুটো মাস ৩০ দিনের পরিবর্তে ৩১ দিনের হয়। তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসের একটা খুত পাওয়া গেলো তাই নাহ! এইটার দুইটা দিন কম। এই বিষয়টা মনে রাখবেন। পরবর্তীতে কাজে আসতে পারে।

জুলিয়াস ভাই যে হিসাবটা করেছিলো সেটা ছিলো এক বছরে পৃথিবীর পুরো সূর্যকে ঘুরে আসতে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টার কাছাকাছি লাগে। তবে পোপ গ্রেগরি ১৫৮০ সালের দিকে সেটা নিখুঁতভাবে হিসেব করে দেখেন, আরও কম সময়টা, শুধু মাত্র ৩৫৬ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মত। খেয়াল করেন, প্রতি বছর ৩৬৫ দিনের পরেও আমরা ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পাচ্ছি, কিন্তু সেটা বছর শেষে ক্যালেন্ডারে আসছে না।

কারন ক্যালেন্ডারে ঘন্টার হিসেবের কোনো স্থান নেই। কিন্তু আবারও খেয়াল করেন, যদি প্রতি বছর এই সময়টুকু না ধরে একদম সরাসরি ৪ বছর পর ধরি, তাহলে মোট ৪ গুনন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড হবে। মানে প্রায় চব্বিশ ঘন্টার একটু কম সময় পাবো আমরা যেটা একটা দিনের দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান।

কিন্তু কোথায় যাবে প্রতি চার বছরে এই একটা দিন সময়? ক্যালেন্ডারে যদি ৩৬৫ দিন করে প্রতিটি বছর গননা করা হয়? সেই একটা বাড়তি দিনকে প্রতি চার বছর পর পর যোগ করে দেওয়া হয়েছিলো ক্যালেন্ডারে। যেই দিনটা গিফট দেয়া হয় ফেব্রুয়ারি মাসকে। তাই ফেব্রুয়ারি মাস চার বছর পর পর ২৯ দিনের হয়। যেটাকে খাটি বাংলায় অধিবর্ষ আর খাটি ইংলিশে লিপইয়ার বলে।

ওআ/এডিবি