ন্যাভিগেশন মেনু

শোকাতুর ডেইজিকে লেখা চিঠি ꠱ এহসানুল হক জসীম


ডেইজি,

শুভেচ্ছা নয়; সমবেদনা জানাতে এই পত্রের অবতারণা। সে সাথে তোমাকে আরও কিছু কথা বলার বাসনা নিয়ে লিখতে বসেছি। প্লিজ, কথাগুলো পড়ো মনোযোগ দিয়ে। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। 

তোমার আম্মুর জন্য জান্নাত চাই না, চাই শাহাদাতের মর্যাদা। কাউকে যদি আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন, তাঁর জন্য জান্নাত কামনা করা লাগে না। অন্যের অর্থনৈতিক দেনা ছাড়া আল্লাহ শহীদের সব গুনাহ-খাতা মাফ করে দেন এবং তাঁকে জান্নাতে সুউচ্চ আসন দান করেন। মৃত্যুর মধ্যে সর্বোত্তম ও সম্মানজনক মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। স্বয়ং রাসূল (সা.) বারবার এই শহীদি মৃত্যু কামনা করেছেন। 

বিশ্বাস করি, আল্লাহ তোমার আম্মুর তরে শহীদি মরণ রেখেছিলেন বলে হয়তো এমন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় অকালে চলে গেছে তাঁর প্রাণবায়ু। প্রভূ গো, তোমার কাছে দোয়া মাঙি, তাঁকে তুমি শাহাদাতের মর্যাদা দান করো। রাব্বুল আ’লামীন, তোমার কাছে ফরিয়াদ - যাদের হিংস্রতায় চলে গেলো তরতাজা প্রাণ; ওই পাষাণেরা যেন দুনিয়ার আদালতেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়। ডেইজি এবং এই শোকসন্তপ্ত পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে যেন আম্মুর সাথে ফের প্রথম সাক্ষাত হয় জান্নাতের সিঁড়িতে। 

প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে গভীর শোকে কাতর হয়ে সেই তিনিও বেশি দিন আর থাকতে পারেননি ঘাসের উপর। প্রাণপাখি হয়তো ছটফট করছিলো তাঁর শহীদ স্ত্রীর কাছে যাবার জন্যেই। অবশেষে তিনিও চলে গেলেন। ‘স্মরণের আবরণে মরণেরে যত্নে রাখে ঢাকি। জীবনেরে কে রাখিতে পারে?’ আল্লাহ, ডেইজির আব্বুকেও তুমি জান্নাতে সুউচ্চ স্থান দিও। যে স্ত্রীকে শহীদি মর্যাদা দেবে বলে তোমার কাছে আকূল আরজি; সেই স্ত্রীর সাথে একই জান্নাতে তাঁকেও রাখিও। 

প্রভূ হে, মা-বাবা হারিয়ে সন্তানেরা আজো কেটে উঠতে পারছে না প্রিয়জন হারানোর শোক। কয়েক বছর হয়ে গেলেও আজো ভুলতে পারছে না তারা মায়ের রক্তাক্ত বদনখানি। যার যায় সে-ই বুঝে স্বজন হারানোর বেদনা। আল্লাহ, তুমি ওদেরে শোক সইবার তাওফিক দাও। ওদের ধৈর্য্য শক্তি বাড়িয়ে দাও। তুমিই তো শিখিয়ে দিয়েছো মা’বুদ,’’হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না।’’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৮৬)

ডেইজি,

তোমাকে লিখতে যেয়ে কলম আটকে যাচ্ছে। নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর। মেনে নিতে হয় যে। নেওয়া ছাড়া কী উপায়। মৃত্যুকে মেনে নিতেই হয়। প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। যদিও প্রতিটি মৃত্যুই অপ্রত্যাশিত। আর সে মৃত্যু যদি হয় খুবই দুঃখজনক কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে; মার্ডার বা এমনি অস্বাভাবিক কোন মৃত্যু; তবে কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ। সেই কষ্টের পরিমাপ করা অসম্ভবই প্রায়। সেই কষ্ট আর কঠিনেরে বুকে ধারণ করে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছো সম্মুখ পানে। নিশ্চয়ই আল্লাহ এই সবুর ও কষ্ট সয়ে যাওয়ার জন্য উত্তম প্রতিদান দেবেন। তোমার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি ডেইজি। 

প্রতিপক্ষের হাতে খুনের বিষয়টিকে কোনও কথা দিয়েই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। অযাচিতভাবে প্রসঙ্গে চলে গেলাম কিনা? বিষয়টি কি এরকম, ’কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!’ তোমার আম্মুর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে- বলতে চাওনি, জিগাইতেও মানা করেছো। কেবলই বলেছো ’অ্যাক্সিডেন্ট’। বেদনার স্ফুলিঙ্গে জ্বালাতে চাইনি বলে গো ধরিনি জানতে। না জেনেও পারিনি থাকতে। যে তোমাকে ভালবেসেছে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ-অনুভূতি দিয়ে, সেই ভালাবাসার প্রিয় মানুষটিও তোমার সাথে সমব্যথী হতে চায়; এই আমিও ব্যথাতুর হয়ে হতে চাই তোমার বেদনাবিধূর অবস্থার অংশীদার। ডেইজি, সমবেদনাপত্র কিংবা শোকবাণী লিখতে গিয়ে করলাম কি কোন অপরাধ? ভুল যদি হয়, ক্ষমা করে দিও। কিছু কথা বলবার চেয়েছিলাম। শুনে ফেলো প্লিজ।

লক্ষী মেয়ে,

মনে রেখো, জীবন চলার পথে যা ঘটেছে তার চাইতেও তো আরও ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারতো; এই কথা ভেবে নিজেকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিও। আচ্ছা, হত্যাকাণ্ডের চাইতেও ভয়ংকর ঘটনা কি আছে? আছে। লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ মানুষের স্বজনেরা লাশটাও দাফন করার সুযোগ পায় না; বাকরুদ্ধ মানুষগুলো জানাযা ও দাফন-কাফনেরও সুযোগ পায় না; কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হাত তুলে একটু মোনাজাতেরও সুযোগ পায় না। কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাশ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। হাসপাতালে আজো পড়ে আছে। এই অঙ্গারের কি আকার-অবয়ব আছে? ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করে তারপর নাকি হস্তান্তর করা হবে পরিবারের কাছে। কী ভয়ংকর? এর চাইতে ভয়ংকর মৃত্যু কি পৃথিবীতে আছে? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা গুম হয়, হয়তো গুম হওয়ার পর পরই সমূদ্রে কারও কারও সলিল সমাধি হয়ে যায়। কিন্তু স্বজনদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না; যদিও একটা পর্যায়ে শেষ হয়ে যায় অশ্রু। লাশ কারো কাম্য না হলেও এমন স্বজনেরা একটা সময়ে লাশটাই চায়; কিন্তু সেটাও পায় না। লাশের পাশে গগণ-বিদারী আওয়াজ দিয়ে কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী করার মধ্যে তবুও একটু সান্ত্বনা আছে। ওরা রোদন-আহাজারী করে কাঁদতেও যে পারে না। তাইতো বুঝি হায়দার গেয়েছিলেন, ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার..’। মেধাবী ডেইজি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে, কী চেয়েছি এই আমি বলতে। 

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। বিচার পাও আর না পাও, আদালতের বারান্দায় গিয়ে বিচারের দাবি তো করতে পারতেছো, পুলিশের কাছ থেকে সিআইডিতে মামলা হস্তান্তর করতে পেরেছো, সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনেও নারাজি পিটিশন দিতে পারতেছো। কিছুটা হলেও হয়তো আশায় আছো, কিছুটাও যদি বিচার হয় দুনিয়ার আদালতে। কিন্তু যে লাশগুলো পুড়ে ছাই বা অঙ্গার হয়ে গেলো, তারা যে বিচার পাচ্ছে না, সে তো নিশ্চিত কথা। ডেইজি, সান্ত্বনা দিতে এতো কথার অবতারণা। কথাগুলো ঠিক হলো কি-না জানিনা। আমি তো ভাষা হারিয়ে ফেলে তারপর লিখছি। 

শুনো হে,

একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তোমার আম্মু দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। তাঁর জন্য কী করতে পারো। প্রথমত বিচার চাওয়া, আদালতে যাওয়া। তা তো তোমরা করেছো। দ্বিতীয়ত দোয়া করা। আম্মুর রুহের মাগফেরাত কামনা নয়, শাহাদাতের মর্যাদার জন্য দোয়া করতে হবে। যদি সেটা না করে কেবলই কান্নাকাটি করো, তাহলে আম্মুর আত্মা কি শান্তি পাবে? বরং দোয়া করলে, তাঁর জন্য নিয়ত করে ইবাদত-বন্দেগী বেশি বেশি করলে উনার রূহ শান্তি পাবে। সত্যিই, সেটাই উনার জন্য কল্যাণকর হবে। কেঁদোনা। দোয়া করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো, তাহাজ্জুদ পড়ো আর উনার জন্য আলাদাভাবে কিছু ইবাদত-বন্দেগী করো। এমন কথা বাবার ক্ষেত্রেও। উনারা এখন দোয়ার মোহতাজ। পারলে উনাদের স্মরণে, স্মৃতির তরে আলাদা কিছু একটা করার চেষ্টা করো। আমি থাকবো তোমারই পাশে ডেইজি। 

শুরুতেই তোমার আম্মুর জন্য শাহাদাতের মর্যাদা চেয়ে দোয়া করেছি। কেন করেছি জানো? সাধারণত ধর্মযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিকেই শহীদ মনে করা হয়। অথচ রাসূল (সা.) উক্ত ব্যক্তি ছাড়া আরও অনেক মৃত ব্যক্তিকে শহীদি মর্যাদা লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন। নিজের সহায়-সম্পত্তির জন্য যদি কেউ মারা যায় তথা প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়, তাহলে আল্লাহ তাঁর মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে গ্রহণ করেন। তোমার আম্মু নিহত হয়েছেন নিজেদের সহায়-সম্পত্তির জন্য। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে শহীদি মর্যাদা দান করবেন এবং জান্নাতে সুউচ্চ বালাখানায় স্থান দেবেন। হাদীসে আছে, যাঁরা নিজের জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষার জন্য এবং ন্যায্য অধিকার আদায়, প্রাপ্য অধিকার রক্ষা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেন, তাঁরাও গাজী এবং শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। হযরত যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাঁর সম্পদ রক্ষার জন্য জীবন দিলো, সে শহীদ; যে ব্যক্তি তাঁর জীবন রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ, যে ব্যক্তি তাঁর ধর্ম রক্ষার জন্য জীবন দিলো সে শহীদ, যে ব্যক্তি তাঁর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন রক্ষার জন্য জীবন দিলো সে শহীদ।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি, হাদিস: হাসান-সহিহ)  

সম্পদ রক্ষার উপর হাদীসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দুনিয়ায় এমনভাবে চলা যাবে না যে, কেউ তার সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। এ জন্য নিজের অর্জিত সম্পদের সুরক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসুল! যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয় তাহলে আমি কী করবো? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দেবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সঙ্গে এ নিয়ে মারামারি করে? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি তার সঙ্গে মারামারি করবে। লোকটি বলল, আপনি কী বলেন! যদি সে আমাকে হত্যা করে? রাসুল (সা.) বলেন, তাহলে তুমি শহীদ হিসেবে গণ্য হবে। লোকটি বলল, আপনি কী মনে করেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসুল (সা.) বলেন, সে জাহান্নামি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৭)

প্লিজ শুনো, 

তোমার তরে আরও কিছু উপদেশ দিতে চেয়েছিলাম। পয়েন্ট আকারে বলি-

১. তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন নিয়েছো সেদিন, যেদিন তোমার আব্বু-আম্মু দুনিয়াতে ছিলেন। নিশ্চয়ই তাঁদের বুকভরা আশা আর চোখভরা স্বপ্ন ছিলো যে, তুমি ভাল কিছু হবে, ভাল কিছু করবে। যদি তুমি শোকে সব সময় মূহ্যমান থাকো, তাঁদের স্বপ্ন কেমনে পূরণ করবে তুমি? শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এগিয়ে যাও। তাহলে তাঁদের বিদেহী আত্মা অনেক অনেক শান্তি পাবে।

২. জীবন চলমান। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে বর্তমান সময়কে অপচয় না করে বরং তাঁদের কথা ভেবে, তাঁদের জন্যই আরও ভালোভাবেই জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা শুধু উচিতই নয়; একান্ত কর্তব্যও বটে। কারণ, নিজে ভালো থাকলেই সেই মানুষটি বা মানুষগুলো বেঁচে থাকাকালে যতোটা খুশি হতেন, অন্য জগতে থাকলেও সেখানে থেকেও তোমার অবস্থায় তারা নিশ্চয়ই অনেক বেশি খুশি হবেন। ফলে তাঁদের জন্যই বাঁচতে হবে। আনন্দ আর খুশি মনে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইসলামিক পরিভাষায় মৃত্যু হওয়াকে প্রয়াণ বলে না, বলা হয় ইন্তেকাল। আর এই ইন্তেকাল এর অর্থ হচ্ছে, স্থানান্তরিত হওয়া। দুনিয়ার জীবন থেকে তাঁরা আজ অন্য জীবনে স্থানান্তরিত হয়ে চলে গেছেন। ওই স্থানান্তরিত জীবন থেকে যেন তারা দেখতে পান যে, তুমি ভাল কিছু করছো ডেইজি। 

৩. মনে রাখবে, দুনিয়া সুবিচারের জায়গা নয়। এজন্য কিয়ামতের দিনকে শেষ বিচারের দিন বলা হয়। দুনিয়ায় পরিপূর্ণ বিচার হয় না, হবে না, হওয়া সম্ভবও না। তোমরা সুবিচার নিশ্চিতের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছো। যদি খুনিদের ফাঁসিও হয়, তবুও কি তোমার আম্মু ফিরে আসবেন? আসবেন না। কারো ফাঁসি হলে কারো মা হারানোর শূন্যতা যে পূরণ হয়ে যায়, তা কিন্তু নয়। ফাঁসি হোক খুনিদের। কিন্তু মনে রেখো, ওই দিনও তাদেরকে আল্লাহর দরবারে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। দুনিয়ার আদালতের বিচারের পাশাপাশি সেদিনেরও অপেক্ষা করো। আর দুনিয়ার আদালতে যদি সঠিক বিচার না-ও হয়ে থাকে, রোজ হাশরের আল্লাহর আদালত থেকে কেউ পার পাবেনা। মনে রেখো, আল্লাহর গুণবাচক নাম কেবল ‘রহমান’, ’রহীম’ বা ’গাফফার’ নয়; তিনি সে সাথে ‘আহকামুল হাকিমীন’, ’জাব্বার’, ও ‘কাহ্হার’ও বটে। সেই মহাবিচারের দিনের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় কুরআনে আল্লাহ বলেন, “সেদিন যখন এরা সবাই প্রকাশ হয়ে যাবে, আল্লাহর কাছে এদের কোন জিনিস গোপন থাকবে না, জিজ্ঞেস করা হবে আজ রাজত্ব কার? সবদিক থেকে জবাব আসবে, একমাত্র আল্লাহর যিনি সবার উপর বিজয়ী।” (সুরা মুমিন: আয়াত ১৬)

৪. যদি কোনও কারণে আদালতের মাধ্যমে কাঙ্খিত বিচার না পাও; তখন কী করবে? তোমার যদি কোনদিন পদ-পদবী থাকে, একদিন হয়তো কিছু একটা করতে পারবে। বিচার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। এজন্য প্রয়োজন তোমার একটি ভালো ক্যারিয়ার, ভালো পজিশন। মনে রাখবে, হত্যা মামলা কিন্তু ফাইনালি তামাদি হয়ে যায় না। ৫০ বছর পরও এটাকে রিভাইভ করা যায়। হত্যামামলা বহু বহু বছর পরও পূনরজ্জীবিত হতে পারে, যদি কোন যোগ্য লোক সেটা হ্যান্ডল করতে চায়।। ফলে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার ক্যারিয়ার, যোগ্যতা অর্জন। তাহলে হয়তো সম্ভব হবে তোমার আম্মু হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা। কলেবর বড় হয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পংক্তিগুলো আওড়াও, ’’বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা/বিপদে আমি না যেন করি ভয়/দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা/ দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।”

৫. তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখা ঈমানের অপরিহার্য শর্ত। তাকদিরের ভাল-মন্দ যা কিছু হয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়; এমনটি মেনে নিয়েই চালাতে হবে আগামীর পথপরিক্রমা। 

৬. তোমার কাছে নিশ্চয়ই তোমার আম্মুর অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে। এই স্মৃতিগুলো স্মরণ করে ভাবতে হবে তিনি হারিয়ে যাননি। তিনি আছেন তোমার অন্তরের মণিকোঠায়। তোমার আম্মু ও আব্বুর ছবি, তাঁদের ব্যবহৃত জিনিস, পোশাক এসবের মধ্যে কিছু নিজের কাছে রেখে দিয়ে তাঁদের নানান স্মৃতির সঙ্গে মেতে উঠে কাটিয়ে উঠতে হবে শোক।

ডেইজি, 

অনেক কথা লিখে ফেললাম। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার পাশে আছি, থাকবো। তোমার আম্মুর জন্য আবারও শাহাদাতের মর্যাদা কামনা করছি এবং তোমার আব্বুর জন্য জান্নাতে সুউচ্চ স্থান কামনা করছি। বিদায় নিচ্ছি ডেইজি। আল্লাহ হাফেজ। 

ইতি

এহসানুল হক জসীম

তারিখ: ১৭/০৭/২০২১ ইং