ন্যাভিগেশন মেনু

সরকার ইকমার্স বান্ধব: ইভ্যালি সিইও

১০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই একটি সম্ভাব্য মার্কেট


ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মের সুবিধা ব্যবহার করে ই-কমার্স এখন এক নিত্য বাণিজ্য ব্যবস্থা। অনলাইনে হরদম চলছে পণ্য বেচাকেনা। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাপী অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় এখন এতোটাই বেড়েছে যে, ধীরে ধীরে মানুষ নির্ভর হয়ে পড়ছে ই-কমার্সের ওপর। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে ই-কমার্স। ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি এগুলোর মধ্যে অন্যতম। নিজেদের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি, কোম্পানির পণ্য কেনাবেচা করছে তারা। এভাবে নিজেরা যেমন মুনাফা লাভ করছে, তেমনি ক্রেতারা পাচ্ছেন সহজ সেবা, সস্তাও। পাশাপাশি অনেক ক্ষুদ্র বিক্রেতা, যারা অফলাইনে তাদের পণ্য বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তাদেরও পাশে দাঁড়িয়েছে ই-ভ্যালি। ওয়েবসাইটভিত্তিক একটি পণ্য সেবা। যে সাইটে ঢুকলে সত্যিই চোখে পড়বে এক পণ্যের উপত্যকা।

ই-কমার্সের বর্তমান অবস্থা, বাজার, করোনাভাইরাসের প্রভাব, আগামী দিনের পরিকল্পনা এবং সামগ্রিকভাবে এ খাতের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দেশের ই-কমার্সের অন্যতম উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রাসেল।

বাংলাদেশ পোস্ট:  শুরুতেই আপনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনার প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি ই-কমার্সে দেশে ‘বিপ্লব’ এনেছে, এ কথা অনেকেই বলছেন। নগর-শহর-বন্দরে ই-ভ্যালির উপস্থিতি চোখে পড়ে, নেটওয়ার্কটাও বেশ বড়। ই-মার্কেট তৈরিতে ই-ভ্যালির পারঙ্গমতা প্রশংসনীয়। প্রেক্ষাপটটা জানতে চাইছি।

মোহাম্মদ রাসেল: প্রথমত প্রশংসাটি সরকারেরই প্রাপ্য। সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সে গতিপথে চাকা যোগ করছি মাত্র। সরকারের নানা পদক্ষেপ ই-কমার্স ফ্রেন্ডলি। আইসিটি সেক্টরের সব উদ্যোগই আমাদের কাজকে সহজ থেকে সহজতর করে দেয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিস্তার, টেলিকমিউনিকেশনের বিস্তার, এই যে থ্রিজি থেকে ফোরজি এলো, এগুলো ই-কমার্সের প্রেক্ষাপট তৈরিতে সহায়ক। আর সে সুবিধা নিয়েই ই-কমার্স দেশে ডালপালা ছড়াচ্ছে। ই-ভ্যালিতে আমরাও সেটাই করছি। আর এমন উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে এই বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছে। এগিয়ে যাওয়ার পথেও সহায়তা করছে।

বাংলাদেশ পোস্ট: ই-কমার্সের মার্কেট সাইজটা সম্পর্কে একটু ধারনা পাঠককে দিয়ে রাখা যেতে পারে। আপনি একটু জানাবেন দেশে ই-মার্কেটটি এখন কতোটা বড় আর কি অবস্থায় আছে?

মোহাম্মদ রাসেল: ই-কমার্স মার্কেট সাইজকে আমরা একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করি। দেশে অনেক অনলাইন কমার্শিয়াল ইভেন্ট হচ্ছে। এগুলোকে আওতায় নিয়ে আসতে পারলে আমাদের এই মার্কেট সাইজটা বেশ বড়ই হবে। তবে আমরা কতোটা পারছি সেটি বড় কথা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। এর মধ্যে ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ১০ কোটি মানুষই সম্ভাব্য মার্কেট। বাজার কখনো তৈরি থাকে না। এটি প্রস্তুত করে নিতে হয়। আমরা সেটাই করেছি। দেশে প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মাসে ১০ হাজার টাকা লেনদেন করলেও দেশে মাসিক ১ লাখ কোটি টাকার ই-কমার্স মার্কেট হতে পারে। আমরা যদি এর ১০ শতাংশও টার্গেট করতে পারি তা হলে মাসে ১০ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার সম্ভব। সেখানেও যদি কনজারভেটিভ থাকি তাতেও আমি মনে করি, মাসে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকার ই-কমার্স মার্কেট প্রস্তুত রয়েছে। যা এক্সপ্লোর করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ পোস্ট:  আর ই-ভ্যালির বর্তমান মার্কেট সাইজ কতো?

মোহাম্মদ রাসেল: দেখুন, আমরা গণমাধ্যমে বলেছি, এখন আমাদের মাসিক মার্কেট ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা। সেটা অনুযায়ি, ই-কমার্সের বর্তমান বাজারের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আমরা নিয়ন্ত্রণ করি।

বাংলাদেশ পোস্ট: কোভিড-১৯ এর কারণে বাংলাদেশে তথা গোটা বিশ্বেই ই-কমার্স গতি পেয়েছে।  ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। অনেক লেদদেনই এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা কতোটা তৈরি হয়েছে? নেপথ্যে কোভিড-১৯ কতোটা ভূমিকা রেখেছে বা রাখছে?

মোহাম্মদ রাসেল: আমি বলবো বাংলাদেশে ই-কমার্সে কোভিড-১৯ এর তাৎক্ষণিক কোনো বড় ভূমিকা দেখছি না। মহামারিতে জনগণ যে এতে লেনদেন করেছে, যেমনটা আমেরিকায় দেখা গেছে, তা বাংলাদেশে হয়নি। তবে এই সময়ে যেটা হয়েছে, তা হলো দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। অনেকে এই মাধ্যমে লেনদেন করার বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। কিন্তু সবাই ঝুঁকেনি ই-কমার্সে। 

প্রকৃতপক্ষে, সেই অর্থে এখানে ই-কমার্স অবকাঠামোগতভাবে এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি আমাদের দেশে। ফলে আমরা শুধু ঢাকাতেই এই মাধ্যমে লেনদেন করতে পারি। সারাদেশে পারি না।

আর তাছাড়া বাংলাদেশে একটু ভিন্নভাবে করোনার প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ লকডাউন কঠোরভাবে মেনে চলেছে। কিন্তু এখানে তা দীর্ঘস্থায়ী ছিলো না। কারণ দেশের অর্থনীতি সেই পর্যায়ে নেই। বসে খাওয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের নেই। নিঃসন্দেহে আমাদের শপিংমলে এখন দর্শনার্থী কম। এখনও অনেকে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এর মানে এই নয় যে, দেশে ই-কমার্সে তা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। গেলো এপ্রিলেও আমাদের প্লাটফর্মে বেচাকেনা কম হয়েছে।

সেখানে বাইরের দেশে এই মার্কেটে পণ্য বেচাকেনা বেড়েছে। কারণ, লকডাউনে তাদের অফলাইন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অনলাইনেই সব হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে হয়নি। এখানে যেটা হয়েছে, মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। আগে এই মাধ্যমে যারা লেনদেনে অনাগ্রহী ছিল, এখন তারা আগ্রহী হয়েছে। অনেক ব্র্যান্ডেড কোম্পানি অনলাইনের কথা ভাবছে। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।

এই মাধ্যমে কোভিড ঝুঁকি ছাড়াই পণ্য এখান থেকে সেখানে পাঠানো যায়। খরচও কম। কিন্ত অফলাইনে তা এখনও চ্যালেঞ্জিং। সশরীরে জিনিস ক্রয়-বিক্রয় যথেষ্ট ঝুকিপূর্ণ। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার জন্য এমন কিছু কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছি। তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশ পোস্ট: কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি পলিসি অর্থাৎ নীতিগত কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন আপনারা?

মোহাম্মদ রাসেল: দেখুন, ই-কমার্সের জন্য কোনো আইন ছিলো না। যেমন ব্যাংকের জন্য ব্যাংকিং আইন রয়েছে, ইন্স্যুরেন্সের জন্য ইন্স্যুরেন্স ‘ল’ আছে। টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি। ই-কমার্সের জন্য এখন পর্যন্ত সেরকম কিছু করার তাগিদ আমরা অনুভব করি না। ব্যক্তিগতভাবেই এতে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখি না। অনেক সময় রুলস-রেগুলেশন প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া এই ইন্ডাস্ট্রি এখন পর্যন্ত সেভাবে গড়ে ওঠেনি। কেবল অঙ্কুরোদগম ঘটছে এর। এটি এখনো প্রাথমিক স্তরে আছে। এ সময়ে আইন কোনো কাজে আসে না। হ্যাঁ, এটি যদি জাতীয় পর্যায়ে বিস্তার ঘটে, তখন সেটার দরকার হতে পারে।

বাংলাদেশ পোস্ট: তবুও তো কিছু গাইডলাইন্সের দরকার আছে?

মোহাম্মদ রাসেল: অবশ্যই। এবং তা আছেও। সরকারের নানা পদক্ষেপ ই-কমার্স ফ্রেন্ডলি। গোটা দেশেকে ডিজিটাল করার তাদের যে পরিকল্পনা, তা আমাদের সাহায্য করছে। ইন্টারনেট নিয়ে সরকারের কিছু দিকনির্দেশনা আছে। আইসিটি সেক্টরের সব উদ্যোগ কাজে দেয়। সরকার সবসময় দেখে ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটছে কি-না, টেলিকমিউনিকেশনের বিস্তার ঘটছে কি-না? এই যে থ্রিজি থেকে ফোরজি এলো। এগুলো ই-কমার্সের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, সহায়তা করে।

বাংলাদেশ পোস্ট: এর মানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় থেকেই এটা হচ্ছে। তো, দেশে ইন্টারনেট কমার্স গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রস্তুতিটা কি হতে পারে? আইসিটির ক্ষেত্রে বা অন্যান্য কাজে? যেহেতু এর সম্ভাবনা রয়েছে।

মোহাম্মদ রাসেল: পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বেশি। এখানে টেলি যোগাযোগটা শুরু হয় ’৯০ দশকে। ২০০০ সাল পর্যন্ত তাতে অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছে। এরপর দ্রুত সবাই শিখে গেছে। এদেশের মানুষ যদি একবার অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে সেটা থেকে তাদের দূরে রাখা মুশকিল। আমরা ই-কমার্সে সেই জিনিসটা দেখছি।

আমাদের ই-ভ্যালির বয়স ১ বছর ৪ মাস। এরই মধ্যে আমাদের ক্রেতা ৪০ লাখ। এক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তবু তারা আসছে। প্রতিমাসে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। একই সময়ে প্রায় ১ কোটি ভিজিটর আমাদের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করেছে। এটা চিন্তার বাইরে। লোকজন এ নিয়ে অ্যালার্ট, তাদের প্রতিক্রিয়া অসাধারণ। এটা খুবই পজিটিভ দিক।

বাংলাদেশ পোস্ট: এই যে ব্যাপক সাড়া, এবং এগিয়ে যাওয়া- ই-ভ্যালির সাফল্যের রহস্য কি?

মোহাম্মদ রাসেল: আপনি যদি অফলাইনের মার্কেটের দিকে দেখেন, তাহলে দেখবেন সেটার সাফল্য নির্ভর করে পর্যাপ্ত ক্রেতা এবং পণ্যের সরবরাহের ওপর। নিউমার্কেট, বসুন্ধরা শপিংমল কেনো এতো জনপ্রিয়? কারণ, সেখানে প্রচুর দোকান রয়েছে, পণ্যের সরবরাহ আছে। তাই ওখানে ক্রেতারা যায়। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা এখন খাবার সরবরাহও শুরু করেছি। আসলে ব্যবসায় সাফল্য পেতে গেলে প্রোডাক্টের জোগান থাকতে হবে। প্রচুর ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকতে হবে। তবে এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এখানে বিনিয়োগের বিষয় আছে। একটা মডেল দাঁড় করিয়েছি আমরা। অনেক বিষয় ছিলো। আমরা সেটা করতে পেরেছি।

গেলো কিছুদিনে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ভালো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ৩ কোটি মানুষের হাতে স্মার্টফোন। এটা কোনোভাবেই কম নয়। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যাই হচ্ছে আড়াই কোটি। তারাও ই-কমার্স ব্যবহার করে। সর্বোপরি, দেশের পুরো পরিবেশটাও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। পণ্য ও ক্রেতাদের মধ্যে সংযোগ সাধন করতে পেরেছি। এজন্য সফল হতে পেরেছি।

বাংলাদেশ পোস্ট: প্রাপ্তির জায়গাটি সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে কি?

মোহাম্মদ রাসেল: সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে - আমরা মানুষের মাঝে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছি। অনেকে ভেবেছিল, আমরা নীতিনির্ধারকদের এড়িয়ে ব্যবসা করছি। কিন্তু না! সরকারের বিভিন্ন বিষয় দেখা উচিত। ই-কমার্সেও বাণিজ্যিক, আর্থিক বিষয়াদি আছে। ই-ভ্যালি এখন নিরীক্ষিত প্লাটফর্ম। সবাই এটা সম্পর্কে জানে। এর ওপর আস্থা পেয়েছে। সবটাই আমাদের পজিটিভ দিক।

বাংলাদেশ পোস্ট: আপনাদের এখন জনশক্তি কতো?

মোহাম্মদ রাসেল: আমাদের বর্তমানে জনশক্তি প্রায় ৬ হাজার। এর মধ্যে ৮ শত কর্মী প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন। আর ৫ হাজার পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। ই-ভ্যালির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করা অনেকেই দেশের বিখ্যাত সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করে এসেছেন। সামনে আরও অনেকে যোগ দেবেন। আমরা কর্মীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিই। এখানে দলীয় কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মন জুগিয়ে না চলতে পারলে হবে কি?

বাংলাদেশ পোস্ট: ই-ভ্যালি নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি? আপনাদের গন্তব্য কোথায়? কোন স্থানে এটিকে নিয়ে যেতে কিংবা দেখতে চান?

মোহাম্মদ রাসেল: আমরা বাংলাদেশের উইচ্যাট বা আলিবাবা হতে চাই। আমাদের জন্য এ লক্ষ্যকে কঠিন দেখছি না। কারণ, ইতোমধ্যে দেশের ই-কমার্স মার্কেটের ১০-১৫ শতাংশ দখলে নিয়েছি। আমাদের আগে অনেকেই এটা শুরু করেছিলো। তারা সেটা পারেনি। আমরাই এখন দেশে সবচেয়ে বড় ডিজিটাল প্লাটফর্ম। এটা সম্ভব হয়েছে, এখানে মেধাবী কর্মীরা কাজ করেন বলে। বিশেষ করে আমাদের আইটি বিশেষজ্ঞরা অনেক দক্ষ।

এই মুহূর্তে সব বড় কোম্পানি আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছে। সুতরাং, ই-ভ্যালিকে পেছনে ফেলতে হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। সেসব নেতৃস্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের সংযুক্ত হতে হবে।

বাংলাদেশ পোস্ট: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ই-কমার্স কতোটা ভূমিকা রাখতে পারে?

মোহাম্মদ রাসেল: আপনি খবর নিলে জানতে পারবেন, চিনে যে অর্থনৈতিক বিপ্লব হয়েছে; তাতে আলিবাবার একটা অবদান আছে। এই অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বহু পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ই-কমার্স ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশের সব জেলায় বড় শপিংমল তৈরি করা সম্ভব নয়। শিল্পের যে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হয়, সেটাও সম্ভব নয়। কারণ, সব জায়গায় কল কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কঠিন কাজ। এতে খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সব জায়গা থেকে ব্র্যান্ডেড পণ্য পাওয়া মুশকিল। এদিকে সব চাহিদা পূরণ করতে পারে ই-কমার্স। দেশের সব জেলার মার্কেটে এক পণ্য প্রদর্শন করা দূরূহ কাজ। অথচ অনলাইনে তা সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এখানে একটি ছবি ডিসপ্লে করলেই হলো। এতে বহুগুণ খরচ কমে। বিভিন্ন জায়গায় ডেস্ক তৈরি করা লাগে না। পণ্য আদান-প্রদানে সময়, পরিবহন খরচ সবই কমে। ক্রেতা, ডিলার সব পর্যায়েই ব্যয় কমে যায়। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা বেঁচে যায়। সেটা দেশের জিডিপিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ পোস্ট: আপনারা অনেক পণ্যে বড় ছাড় দেন। কখনো কখনো অবাস্তবও মনে হয়! এটা কিভাবে সম্ভব?

মোহাম্মদ রাসেল: দেখুন, নানা ব্যক্তি-কোম্পানির বহু পণ্য আমরা লট হিসেবে কিনে নিই। তাতে দাম কম পড়ে, তাই বাজার দরে ছাড় দিতে পারি। এতে বড় বিনিয়োগ লাগে। তাতে ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে ছাড় দিয়েই সেটা পুষিয়ে নেওয়া যায়। তবে এটাও সত্য, সব প্রোডাক্টে অফার দেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ পোস্ট: ধন্যবাদ। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।

মোহাম্মদ রাসেল: আপনার সাথেও কথা বলে ভালো লাগলো।

ওআ/এডিবি