ন্যাভিগেশন মেনু

সুবর্ণচরে নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন


নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামে গত ৭ অক্টোবর নুরজাহান নামে এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ছয়জনকে সাথে নিয়ে নিজের মাকে হত্যা করে ছেলে হুমায়ুন কবির। ইতোমধ্যে ৫ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পরদিন তার ছেলে হুমায়ুন কবির (২৮) বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে হত্যার সাথে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসাথে তার সাথে তার ৬ সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ইতোমধ্যে ৭ আসামির মধ্যে হুমায়ুনসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

একই সাথে আটক নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল, ভিকটিমের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তির তথ্য দিয়ে পুলিশের এই উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, নূরজাহানের আগের ঘরের সন্তান বেলাল ৪ লাখ টাকা ঋণ করে মারা যায়। ওই ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে নূর জাহানের সঙ্গে তার বর্তমান স্বামীর ঘরের সন্তান হুমায়ুন কবিরের প্রায়শই ঝগড়া হতো। তারই জের ধরে হুমায়ুন ছয়জনকে সাথে নিয়ে গত ৬ অক্টোবর রাতে মাকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে তার মরদেহকে পাঁচখণ্ড করে খণ্ডিত টুকরোগুলো পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।

পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নিহত নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মা নুরজাহানকে জিম্মায় রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা সুদের ওপর ঋণ নেয়। ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। হুমায়ুন তার মাকে এ বিষয়ে অবহিত করে। নুরজাহান হুমায়ুনকে তার ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করার জন্য বলে।

অন্যদিকে মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দেয় হুমায়ুন। এতে তার মায়ের জোর অসম্মতি ছিল। অপরদিকে হুমায়ুন তার আরেক ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য সে ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করতো। এ কারণে হুমায়নের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের স্বামী সুমন ভিকটিমের ওপর বেজায় রুষ্ট ছিলো। এ ছাড়াও ভিকটিমের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিলো, তাই তারাও হুমায়নকে এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে।

পুলিশ সুপার জানায়, হুমায়ন জবানবন্দিতে বলেন, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে এবং বাকী ৮ শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর মায়ের জমি সমান ৫ ভাগে ভাগ করে হুমায়ন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতিতে সকল ব্যক্তিরা গত (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের উপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে হুমায়ন, কালাম, সুমন ও অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় ওই রাতের কোন এক সময়ে ঘরের মধ্যে বালিশচাপা দিয়ে নুরজাহানকে হত্যা করে বটি, চাপাতি, কোদাল দিয়ে পাঁচখণ্ড করে পাওনাদারদের ধান ক্ষেতে শরীরের ৫ টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তারা।

নিহত নুরজাহান বেগম উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের স্ত্রী। তিনি আট ছেলে ও এক মেয়েসহ ৯ সন্তানের জননী ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত (৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের উত্তর জাহাজমারা গ্রামের প্রভিটা ফিডের পেছনের একটি ধানক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর টুকরো টুকরো মরদেহের সন্ধান পায়। এর আগে ছেলে হুমায়ন কবির জানিয়েছিল, বুধবার ভোর থেকে তার মা নিখোঁজ ছিল। পরে স্থানীয় এক নারী বিকেলে ধানক্ষেতের আইলে শামুক খুঁজতে এসে খণ্ডিত মরদেহ দেখতে পান। পরে হুমায়ুন ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের মরদেহ সনাক্ত করেন।

ডি এ/ ওয়াই এ/এডিবি