ন্যাভিগেশন মেনু

স্বামীকে হত্যা করে ৬ টুকরো করার বীভৎস বর্ণনা দিলেন ফাতেমা


রাজধানীর মহাখালী থেকে রবিবার (৩০ মে) দিবাগত রাতে ড্রামের ভেতর থেকে হাত-পা ও মাথাবিহীন খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই রাতেই মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে কাটা হাত-পা উদ্ধার করা হয়। তারপর কাটা হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ডাটা সার্ভারের সঙ্গে মিলিয়ে নিহতের জাতীয় পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, তার নাম ময়না মিয়া। পরেরদিন (৩১ মে) গ্রেপ্তার করা হয় নিহতের প্রথম স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে। এর পরই বেরিয়ে আসে এই হত্যাকান্ডের আদিঅন্ত। তার দেখানো জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয় কাটা মাথা।

মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে এই হত্যাকান্ড নিয়ে রাজধানীতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উত্তর বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ জানান ময়না মিয়া হত্যায় তার স্ত্রীর দেওয়া বিভৎস হত্যাকান্ডের কথা।

তিনি বলেন, ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) সাকলায়েন ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রেজাউল হক টিম নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করেন এবং হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি নিহতের প্রথম স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

এরপর পুলিশ তার কাছে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্বামীকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তিনি পুলিশকে বলেন, গত ২৩ মে থেকে তার স্বামী ময়না মিয়া কড়াইল এলাকায় তার বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার জমানো টাকা ময়না মিয়া নিয়ে অনৈতিক কাজে খরচ করতেন বলে অভিযোগ করেন ফাতেমা। ফলে তিনি হত্যা পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কড়াইল এলাকা থেকে ফাতেমা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে শুক্রবার রাতে জুসের সঙ্গে মিশিয়ে ময়না মিয়াকে খাইয়ে দেয়। ময়না মিয়া সারারাত-সারাদিন ঘুমে অচেতন থাকলে সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পায় এবং স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে ময়না মিয়া পানি চাইলে তার মুখে ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস ঢেলে দেয় ফাতেমা। এ পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে ময়না মিয়ার দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। এ সময় ময়না মিয়া আর্তনাদ করতে থাকলে ফাতেমা বুকের উপরে বসে তার ঘরে থাকা স্টিলের চাকু দিয়ে গলাকাটা শুরু করে।

ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়া ওড়না ছিঁড়ে তার হাত মুক্ত করে ও ফাতেমার হাতে খামচি এবং মুখ খুলে কামড় দেয়। এতে ফাতেমার রাগ আরও বেড়ে যায়। স্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না মিয়া ও ফাতেমা দুজনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ফাতেমা ময়নার বুকের উপরে উঠে তার গলার বাকি অংশ কেটে ফেলেন।

পরে সকালে ফাতেমা লাশ গুম করার জন্য ধারালো চাকু দিয়ে ময়নার হাতের চামড়া ও মাংস কাটে এবং ধারালো দাঁ দিয়ে হাড় কেটে খণ্ডিত অংশকে তিনটি ভাগে রাখে।

একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি নীল রঙের পানির ড্রামে, কেটে ফেলা দুই পা এবং দুই হাতকে একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে।

পরে এলাকা থেকে ১৩০০ টাকায় একটি রিকশা ভাড়া করে প্রথমে আমতলী এলাকায় শরীরের মূল অংশ ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মহাখালী এনা বাস কাউন্টারের সামনে দুই হাত-দুই পা ভর্তি ব্যাগ রেখে চলে আসে বাসায়।

বাসায় এসে সেখান থেকে খণ্ডিত মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের পূর্বপ্রান্ত থেকে গুলশান লেকে ফেলে দেয়। এরপর বাসায় এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।

সোমবার গোয়েন্দা পুলিশ বনানী থানার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির কোম্পানির অফিস থেকে আসামি ফাতেমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের সময় ফাতেমার কাছ থেকে বোরকা, নিহতের রক্তমাখা জামাকাপড়, ধারালো ছুরি, ধারালো দা, বিষাক্ত পেয়ালা ও শীল-পাটা উদ্ধার করে পুলিশ।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ফাতেমা একাই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। আমরা খুব দ্রুত এ মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

>মহাখালীতে খন্ডিত মরদেহের রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার খুনী

ওয়াই এ/এডিবি/