ন্যাভিগেশন মেনু

হারিয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার রাখাইন তাঁতশিল্প


মো. সাইদুর রহমান সাইদ: 

নানাবিধ সংকটে হারিয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার রাখাইন তাঁতশিল্প। চরম দুঃসময় পার করছে এক সময়ের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা রাখাইন রমনীদের হাতে নিপুন শৈলিতে তৈরি তাঁতের বস্ত্র। একসময় দম ফেলানোর ফুরসত ছিলোনা। দিন- রাত তাঁতের খটখট শব্দে মুখর ছিল মিস্ত্রিপাড়া, কালাচানপাড়া, আমখোলা, বৌলতলীপাড়া, থঞ্জুপাড়া, কেরানীপাড়া, দিয়ার আমখোলাসহ বিভিন্ন পাড়া। এখন আর ব্যস্ততা নেই পাড়াগুলোতে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁত কারখানাগুলো।  দু'একটি তাঁত কারখানা থাকলেও সেগুলো এখন নিবু নিবু করছে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা আর অর্থসংকটের কারনে। 

ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসব কারখানা থেকে কাপড় কিনতো। পাশাপাশি কুয়াকাটার মহিলা মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হতো। একটা সময়ে রাখাইন মহিলাদের আয়ের উৎসই ছিল তাঁত। এখন রাখাইন তাঁত শিল্পীদের কাছে এগুলো কেবলই স্মৃতি।  অর্থনৈতিক সংকটে দিন পার করছে বিভিন্ন পাড়ার তাঁত শিল্পীরা।

তাঁত শিল্পীরা মনে করছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, দেশি কাপড়ের বাজার তৈরিতে সংকট, নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে সক্ষমতায় পেরে না ওঠা, বিপণন ব্যর্থতা, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের অভাব ও পুঁজিসংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় কুয়াকাটার হস্তচালিত তাঁত শিল্প।

রাখাইন পল্লীর মহিলারাই মূলত এ পেশায় নিযুক্ত থাকতো। এখন কাজ হারিয়ে পেশা বদল করেছেন অনেকে। কেউ আবার পরিবারের অন্য ব্যক্তির আয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।

থঞ্জুপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানায় কাজ করছেন মাত্র একজন রাখাইন মহিলা। কাপড় বোনার একটি তাঁতে কাজ করছেন তিনি। অলস পড়ে আছে আরও কয়েকটি। সেখানে কথা হয়  মা চান (৩৫) নামের রাখাইন নারীর সঙ্গে।

তিনি জানান, অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়া, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকরাও আগের মতো তাঁতের কাপড় কিনেন না। ফলে আস্তে আস্তে অনীহা দেখা দিয়েছে তাঁত কারিগরদের মাঝে। 

তিনি আরও জানান, আমার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে নিজের হাতে তৈরি করা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করি কিন্তু আগের মতো পর্যটকরা কেনেন না। 

থঞ্জুপাড়ার শত বছরের আদি বাসিন্দা মাতাও ফ্রু বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রধান পেশা ছিলো কৃষিকাজ। সময়ের বিবর্তনে আবাদী জমি হারিয়ে এ সম্প্রদায় প্রধান পেশা হিসেবে বেঁচে নিয়েছিলেন তাঁতবস্ত্র উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। পূর্ব পুরুষরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই তাঁতে কাপড় বুনতেন। সে ঐতিহ্য বংশ পরম্পরায় ধরে রেখেছেন তারা। এটি তাদের ঐতিহ্য হলেও বর্তমানে চলছে দুর্দিন। সুতার দাম বাড়লেও তাদের পণ্যের দাম বাড়েনি। পণ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পরিশ্রম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় শ্রমের মূল্য বাড়েনি।

দিয়ার আমখোলা পাড়ার থ্যাংশে বলেন, চাহিদা অনুযায়ি সুতা না পাওয়া, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, আর্থিক সংকট, আধুনিক মেশিন সংকট, সর্বোপরি সরকারি, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা না পাওয়ার কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প সংকটের মুখোমুখি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পটুয়াখালীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হোসেন আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে রাখাইন তাঁতশিল্পে জড়িত কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ডিজাইনসহ ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্র সরবরাহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  

এস এ /এডিবি