ন্যাভিগেশন মেনু

অভিনব প্রতারণা: ২২ টাকা মূল্যমানের মুদ্রা ১০ হাজারে বিক্রি


ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার কদমতলী এলাকায় সংঘটিত অভিনব কায়দায় প্রতারণায় প্রতারকচক্রের দলনেতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ সময় প্রতারণায় ব্যবহৃত ওমানি মুদ্রা, বাংলাদেশি টাকা ও সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা জব্দ করা হয়।

রবিবার (২৯ আগস্ট) পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবু ইউছুফ সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও প্রতারক চক্রের দলনেতা মোঃ আল আমিন (৩৫) ও শাহজাহান সিরাজ (৪৬)।

এর আগে শনিবার (২৮ আগস্ট) বিকেল  ৫টা ১০মিনিটে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার খালপাড়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অফিসের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মো. লুৎফর রহমান (৪৯) সাভারের নগরচরের বাসা থেকে বের হয়ে তার বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে দেখা করতে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে হেটে বাসায় ফেরার পথে কদমতলী চৌরাস্তার পূর্ব পাশে জাহিদ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক তাকে স্যার বলে সম্বোধন করে ডাক দেয়। 

এ সময় তিনি অটোরিকশাটির কাছে গেলে চালক তাকে কয়েকটি বিদেশি মুদ্রা দেখিয়ে কোথায় একচেঞ্জ করা যাবে জানতে চায়। তখন লুৎফর রহমান ওই অটোচালককে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাঙ্গানো যায় বলে জানায়।

তখন অটোচালক তাকে ২০-২৫টি বিদেশি মুদ্রা দেখিয়ে ভাঙ্গানো হলে কত টাকা পাওয়া যাবে জানতে চায়। তখন অটোরিকশার কাছে অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন এসে তার পাশে দাড়ায়। তাদের একজন ব্যাংকে এবং অপরজন মানি এক্সচেঞ্জে চাকরি করে বলে জানায়।

তারা জানায় বিদেশি টাকাগুলো অনেক দামি এবং ওমানি মুদ্রা। তাদের একজন তখন লুৎফর রহমানকে দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে অটোচালকের কাছ থেকে চারটি নোট কিনে নেয় এবং লুৎফর রহমান ওই মুদ্রা কেনার জন্য প্রলুব্ধ  করে। তখন 

অটোচালক তার কাছে আরও ২০-২২টি নোট আছে বলে জানায় এবং এই প্রতিটি নোটের বর্তমান বাজারমুল্য ২২ হাজার টাকা বলে জানালে তাদের কথায় বিশ্বাস করে লুৎফর রহমান দুই লাখ টাকা দিয়ে ২০টি নোট কিনে নেন।

পরবর্তীতে লুৎফর রহমান তাদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দুই লাখ টাকা হারিয়েছে বুঝতে পেরে গত ২৭ আগস্ট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। 

পরে মামলাটি পিবিআই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে ডিআইজি (পিবিআই) বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিটের ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ আনোয়ার হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন। 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের আরও সহযোগী নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অধিক টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে অভিনব কায়দায় এভাবে প্রতারণা করে আসছে।

তারা লুৎফর রহমানের সাথে গত ২৩ আগস্ট কদমতলী চৌরাস্তা এলাকা থেকে প্রতারণা করে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে।

তাদের স্বীকারোক্তি মতে আসামি আল আমিনের কাছ থেকে ৪০টি ওমানি মুদ্রা ও নগদ ১০ হাজার টাকা  এবং আসামি শাহজাহান সিরাজের কাছ থেকে ১৮টি ওমানি মুদ্রা ও নগদ ১০ হাজার টাকা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে রবিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা জেলার এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, 'আসামি আল আমিন এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দলনেতা। তারা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘবদ্ধ ভাবে অভিনব কায়দায় বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারীদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের পিছু নেয় এবং সুকৌশলে তাদের শিকারকে বিভিন্ন দেশের কারেন্সি নোট প্রদর্শন করে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষকে খুব সহজেই শিকারে পরিণত করে তার নিকট থেকে সমস্ত টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।'

এডিবি/