দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না (ছদ্মনাম)। করাইল বস্তিতে বাবা মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে থাকে। নিজের ইচ্ছায় চুল কেটে ফেলেছে। কিন্তু এই চুল কাটার জন্য বস্তিতে চলাফেরার সময় তাকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে নানা কটুক্তি। প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে বলা হয়েছে, নারীদের এত কথা বলতে হয় না।
করাইল বস্তিতে বসবাসকারী এমনই ছয়জন নারীর গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে "প্রতিদিনের গল্প " বইটি। বাংলাদেশের নারী ও কিশোরীরা তাদের প্রতিদিনের জীবনে যেসকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য যে হয়রানির স্বীকার হয় সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বইটি লিখেছেন এবং চিত্রিত করেছেন উইমেন এন্ড দ্য সিটি প্রকল্পের উদ্যোক্তা সাদিয়া শারমিন।
১১ মার্চ, ২০২২ (শুক্রবার) শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারের সদস্যদের নিয়ে একটি পাঠ কর্মশালা পরিচালনা করেন সাদিয়া শারমিন। পাঠাগারের সদস্যদের সাথে সম্মিলিতভাবে " প্রতিদিনের গল্প " বইটি পড়েন এবং সবাই সেখানে লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কিত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে।
গল্পের একটি চরিত্র সুমি জানান, বস্তির মানুষের চিন্তা-ভাবনার জগৎটা সংকচিত। তারা মনে করেন, কেন মেয়েরা ছেলেদের সাথে তর্ক করবে বা কেন তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে। মেয়েরা মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করবে এটাই তাদের নিয়তি আর এভাবেই মেনে নিতে হবে।
“প্রতিদিনের গল্পের” লেখক সাদিয়া শারমিন ঢাকা মেমোরি সংগঠনের সহ- প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকা মেমোরি মূলত সম্প্রদায়-ভিত্তিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করে। পাশাপাশি এটি শহর, সমাজ, জনসাধারণের চলাচলের পথ ও স্থাপত্য এই বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনার বিকল্প পদ্ধতি অনুসন্ধান করে।
সাদিয়া শারমিন বলেন, “প্রতিদিনের গল্প” বইটিকে আমরা একটা ক্রিয়েটিভ অ্যাডভোকেসি টুলস হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। এই বইটি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমার সাথে রয়েছে ঢাকা মেমোরি, হারস্টোরি ফাউন্ডেশন ও রোটারি ক্লাব অফ ঢাকা পাথফাইন্ডার।
তিনি আরো বলেন, বইটিতে আমরা করাইলের বাস করা নারীদের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রাস্তেঘাটে নারীদের হয়রানি, পরিবারে ছেলে -মেয়ের পার্থক্য, যোগ্যতা প্রকাশে বাঁধা এমন অনেক ঘটনা প্রতিদিন নারীদের জীবনে ঘটে। এটা আসলে শুধু করাইল বস্তির সমস্যা নয়, সারা বাংলাদেশেও এই একই চিত্র দেখা যায়।
২০১৬ সাল থেকে কড়াইল বস্তিতে সহযোগিতামূলক গবেষণার কাজ করছেন সাদিয়া শারমিন। বস্তিতে দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ২০১৮ সালে যুক্ত হন করাইল বস্তিতে অবস্থিত শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারে।
শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য লামিয়া বলেন , সাদিয়া আপু যখন আমাদের সাথে পাঠাগারে যুক্ত হন তখন আমরা বিভিন্ন আর্ট সেশন করতাম। তারপর আমরা আপুর সাথে আমাদের প্রতিদিনের গল্প বলতে শুরু করি। "প্রতিদিনের গল্প" বইটিতে সব গল্পই আমাদের নিজেদের দৈনন্দিন জীবন থেকে এসেছে।
বস্তির মানুষদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে লামিয়া জানায়, আমরা মেয়ে হিসাবে কোনটা করবো আর কোনটা করবো না এটা আমাদের সমাজ ঠিক করে দেয়। এখানকার মানুষেরা মনে করেন মেয়েরা হবে শান্তশিষ্ট,ভদ্র, তারা ঘরের এককোণে পড়ে থাকবে ।
২০১৪ সাল থেকে করাইল বস্তিতে চালু হয় শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগার। প্রতিষ্ঠাকালে রাফছানুল এহছান সাজ্জাদ মাত্র পাঁচজন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। বই পড়ার পাশাপাশি পাঠাগারের সদস্যরা একসাথে বস্তির বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ অনেক ধরনের কাজ করে থাকে।