ন্যাভিগেশন মেনু

বেঙ্গালুরুতে তরুণীর যৌন নির্যাতন, বাংলাদেশে পাকড়াও ৪


বেঙ্গালুরুতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনার জের ধরে বাংলাদেশে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে এলিট ফোর্স র‍্যাব। 

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, টিকটক মডেল করার লোভ দেখিয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বাংলাদেশ থেকে কয়েক’শ তরুণীকে পাচার করা হয়েছে প্রতিবেশী ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।  বেঙ্গালুরুতে ঢাকার এক তরুণীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। টিকটকচক্রটি ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে এ কারবার চালিয়ে আসছে। 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের কিছু অপরাধী মিলে এই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রটি গড়ে তুলেছে।  বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগীর খাতায় নাম রয়েছে যশোরের আলামিন নামের এক যুবকের। তার বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়ায়। 

ওই ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। তার বাড়ি যশোর জেলার অভয়নগর থানায়। তানিয়াকে আলামিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। ভিডিও প্রচার হওয়ার পর আলামিনের বাড়ির এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। 

তার পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করলেও তাদের দাবি- আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আলামিনের বাবা চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মনু মিয়া। মনু মিয়া বলেন, আলামিন ভালো না। 

ঘরে বসে তারা কি-সব (ইয়াবা) খেত। তাই আট মাস আগে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনেছি আলামিন ইনডিয়া গেছে, তার এক বউ বাপের বাড়ি, আরেক বউয়ের খবর জানিনা।এলাকাবাসী জানিয়েছেন, আগে থেকেই বেপরোয়া আলামিন দেশে দুটি বিয়ে করেছে। 

দুই সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে দুই তরুণীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে দেশটির স্থানীয় পুলিশ।  গ্রেফতারের সময় গুলিবিদ্ধ হয় টিকটক হৃদয় বাবু ও সাগর। টিকটক হৃদয় বাবু ও আলামিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকে। 

সেখানে ‘রাফি’ নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মণ্ডল।রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করে। গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আলামিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে যায়। 

যাওয়ার আগে সে চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। অরিজিনাল মাল হিসেবে ইয়াবা আসক্ত ‘রাফিকে’ উপহার দেয়ার জন্য এ ইয়াবা সে বেঙ্গালুরু নিয়ে গেছে। এছাড়া ডালিম ও সবুজ নামে আরও দুই যুবক ছিল, তারাও পালিয়ে গেছে। তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে। 

  ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, ঠিক কতজন যুবতীকে টিকটক হৃদয়সহ তার সহযোগী ও অন্যরা এখন পর্যন্ত পাচার করেছে তার সঠিক তথ্য নেই। তবে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই সংখ্যা অনেক। 

তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশি যেসব নাগরিক ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। 

যে তরুণীকে পাচারের পর যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, তাঁকেও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পুলিশের ভাষ্য, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে টিকটকচক্রটির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। 

এ চক্রের টার্গেটে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বখে যাওয়া তরুণী যেমন আছে, তেমনি গৃহিণীরাও আছে। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, এই গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পাশের জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০-৮০০ তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়।

তাদের অনেকেই পাচার হয়েছে। ওই পার্টির অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয়। সিআইডি জানায়, নারীপাচারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২৬টি মামলা সিআইডিতে তদন্তাধীন।এর মধ্যে ভারতে নারীপাচারের ঘটনায় দায়ের করা মামলা আছে ১৫টি। 

যুবতীদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে টিকটকচক্রের সদস্যরা।  এই চক্রের মূল আস্তানা বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়।  মূলত যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের ভারতে পাচার করা হয়।

পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্য মতে, এরই মধ্যে ভারত থেকে অন্তত ১১ তরুণী চক্রের হাত থেকে পালিয়ে দেশে এসেছে।  তাদের দুবাইসহ আরো কয়েকটি দেশে নিয়ে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সীমান্ত পাড়ি দিতে জনপ্রতি তাদের ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। 

এস এস