ন্যাভিগেশন মেনু

মুদ্রানীতি পরিবর্তন করে নিজের সংকট বাইরে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র


যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। শ্রীলংকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মোজাম্বিকের কৃষক পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন গরিব দেশের অসংখ্য পরিবার এ ঘোষণার প্রভাব অনুভব করছে। সম্প্রতি এপির সাংবাদিক পল ওয়াইজম্যান তার এক প্রবন্ধে এমন দাবি করেছেন। গত ৪০ বছরে সবচেয়ে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করতে গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণায় আন্তর্জাতিক সমাজ ব্যাপক হারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন ঘোষণায় বৈশ্বিক অর্থনীতি ও অর্থ বাজার আঘাতের সম্মুখীন হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছে। 

যুক্তরাষ্ট্র তাদের এহেন আচরণের মাধ্যমে মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে তাদের নিজেদের সংকট স্থানান্তর করেছে। এটি মহামারী-উত্তর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

সুদের হার বাড়ানোর ফলে মার্কিন ডলারের পুজিঁ আকর্ষণের শক্তি বাড়বে। সেসঙ্গে তা অন্য দেশের ঋণের ঝুঁকিও অনেক বাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। 

মার্কিন ডলারের মূল্যায়ন অন্য দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে পারে। তাতে অন্য দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নষ্ট হবে। ফলে সেসব দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াও নষ্ট হবে। 

আর্জেন্টিনার একজন বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি সিএমজিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, সুদের হার বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবের কথা চিন্তা করে তিনি উদ্বিগ্ন। সুদের হার বাড়ানোর ফলে বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার নতুন অর্থনীতিগুলোকে তাদের দেশের পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং একই সঙ্গে বেকারত্বের হার বাড়বে, যা ল্যাটিন আমেরিকার নতুন অর্থনীতিগুলোতে গুরুতর প্রভাব বয়ে আনবে।

ব্রাজিলের বিশেষজ্ঞ মারকোস পিয়ারেস মনে করেন, মার্কিন ডলার হচ্ছ বৈশ্বিক মুদ্রা। তাই মার্কিন ডলারের যে কোনও পরিবর্তন অন্য দেশের মুদ্রার উপর প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপসহ যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সময় কেবল নিজেদের স্বার্থকে বিবেচনায় রাখে। এটি হচ্ছে তাদের আধিপত্যবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। 

খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই মার্কিন সরকারের মুদ্রানীতি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এবারের মুদ্রাস্ফীতির শুরুতে মার্কিন সরকার অনেক ধীরে ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা একে ‘ অস্থায়ী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ফলে অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। 

এছাড়া, ইউক্রেন সংকট শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করে আসছে। তাতে বিশ্বের জ্বালানী ও খাদ্যসহ অনেক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির ওপরও চাপ বাড়াচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে অনেকে ভাবছে, এটি খুব বেশি কার্যকর হবে না। ব্যাকলি পরামর্শক দলের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা পিটার বুকভার মনে করেন, এবারের মুদ্রাস্ফীতিকে ফেডারেল রিজার্ভ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। 

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু রাজনীতিকের এহেন আচরণ মার্কিন জনগণ ও বিশ্ববাসীদের জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন। তাদের উচিত দায়িত্ব গ্রহণ করে মহামারী থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক কাজ করা। (শিয়ে নান আকাশ, সিএমজি)