ন্যাভিগেশন মেনু

অভিনন্দন রত্নগর্ভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী


ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

কদিন আগের কথা। মাত্রই শেষ করেছি একটি লেকচার। এলাহাবাদের নতুন নাম প্রয়াগরাজ। সেখানে ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এলাহাবাদ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। এর নতুন নাম এখন স্যাম হিগিনবটম ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার, টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্স। তাদেরই বায়োকেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক কোভিড-১৯ সম্মেলন।

ঢাকা থেকে কলকাতা বা দিল্লি হয়ে বিমানে লখনউ, তারপর বাই রোডে এলাহাবাদ। যেতে আসতেই দুটো দিন। আধা ঘণ্টার একটা লেকচারের পেছনে চলে যেত কম করে হলেও চার-চারটি দিন। আর সেদিন ওয়েবিনারে লেকচার দিয়ে বেরিয়ে আসতে চার মিনিটও সময় লাগল না।

লেকচার শেষে এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম তখন মনে পড়ছিল কদিন আগে সম্প্রীতি বাংলাদেশের অনলাইন সেমিনারের কথা। একাত্তরের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক একটা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর সম্প্রীতি বাংলাদেশের পথচলার শুরুটা দুই বছরের কিছু বেশি সময় ধরে। প্রথমে দেশময় আমাদের চষে বেড়ানোটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সর্বশেষ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করায়। আর তারপর ছুটে বেড়িয়েছি কখনও ‘শতবর্ষের পথে বঙ্গবন্ধু’ আর কখনও ‘সম্প্রীতি সংলাপ’-এর ব্যানার নিয়ে পথসভা আর সেমিনারে বিভাগীয় আর জেলা শহরে আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম থেকে উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমিতে।

আর এখন প্রতি শনিবার রাত ৯টায় অনলাইনে ‘সম্প্রীতি সংলাপ’ নিয়ে আমরা পৌঁছে যাচ্ছি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় ঢাকার চৌহদ্দির বাইরে একটা কদমও না ফেলে। দেখতে দেখতে গত চারটি মাসে দেশটা আর দেশের সবকিছু যে কীভাবে, কখন অমন ডিজিটাল হয়ে গেল কুল করতে পারি না। শুধু কি তাই? শুধু কি সামাজিক আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে? আমার পেশার জায়গা থেকে তাকালেও তো চারদিকে দেখি ডিজিটালাইজেশনের ছড়াছড়ি। এখন বিএসএমএমইউতে আমার লিভার বিভাগে রেগুলার ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। সপ্তাহে যে কদিন ক্লাস থাকে, কেমন যেন একটা ফুর্তি-ফুর্তি ভাব দেখি ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে অনলাইনে। এর মধ্যেই হঠাৎ হয়তো বাবার কোলে কারও ছোট্ট শিশুটি। জানে না বাবা ব্যস্ত দাদার বয়সী স্যারদের ক্লাসে। দেখি, দেখতে ভালোই লাগে।

কদিন আগে আমার ডিপার্টমেন্টে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমডি থিসিস প্রটোকল উপস্থাপন করা হলো অনলাইনে। মোবাইলে ছবি তুলে রেখেছি, স্ট্যাটাসও দিয়েছি ফেসবুকে। যত ছোটই হোক না কেন, ইতিহাস তো! আমাদের ছেলেরা এখন অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পায়, লখনউর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটে ঢাকায় বসেই। ওয়েবিনারে এখন তাদের ক্লাস নেন ভারত আর এমনকি সুদূর মার্কিন মুলুকের নামিদামি যত অধ্যাপক।

এত গেল লেখাপড়ার দিকটা। পেশার অন্য দিকটাতেও কিন্তু এই একই রকম ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। কোভিড-১৯ এর প্রথম দিকে আমাদের ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশ থেকে আমরা ৫০ জনের বেশি লিভার বিশেষজ্ঞের নাম, মোবাইল নম্বর অনলাইনে এবং মিডিয়ায় প্রচার করেছিলাম। এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন আরও অনেকেই। আমি নিজেই এমন একাধিক সংগঠনের কথা বলতে পারি যেগুলোর সাথে আমি সরাসরি সম্পৃক্ত। এই তালিকায় যেমন আছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আর সম্প্রীতি বাংলাদেশ, আছে তেমনি রোটারি ক্লাব অব ঢাকা জেনারেশন নেক্সট-ও। এ রকম আরও অসংখ্য নাম জানা-অজানা সংগঠন এমনি শত-শত আগ্রহী চিকিৎসকের তালিকা মোবাইল নম্বরসহ মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। কোভিডের শুরুতে বিশেষ করে সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে এমনিভাবেই সাধারণ মানুষের চিকিৎসাপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে কোভিডের ওপর আমার দুটি নিবন্ধ। এর একটি টেলিমেডিসিনের ওপর আর অন্যটি টেলিএডুকেশনের। এই দুটি গবেষণার কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি টেলিএডুকেশেনের কল্যাণে আমাদের ছেলেরা যেমন ঘরে বসেই বিদেশি অধ্যাপকদের কাছে সেখার সুযোগ আর পাশাপাশি মতবিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছে, তেমনি টেলিমেডিসিনের ব্যাপক প্রয়োগও এই কোভিডকালে আমাদের একটা বড় প্রাপ্তি। এর ফলে আমাদের প্রান্তিক জনগণ বড় শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসার আওতায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন সরাসরি এবং তাও ঘরের বাইরে একটি পা-ও না রেখেই।

এটি একদিকে যেমন আমাদের যানজট আর পরিবেশ দূষণ কমানোয় ভূমিকা রাখবে, তেমনি ভূমিকা রাখবে ভবিষ্যতে মানুষের ভোগান্তি কমানোয়, অর্থ সাশ্রয়ে আর কর্মঘণ্টা বাঁচানোয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নত ডায়াগনোস্টিক সেবাও পৌঁছে যাবে। সেদিন ‘আমার গ্রাম’ প্রজেক্টের রেজা সেলিম ভাইয়ের সাথে অনলাইনে একটি ব্রেইন-স্টর্মিং সেশনে ঘুরে-ফিরে আসছিল এই কথাগুলোই। রামপালে রেজা সেলিম ভাইয়ের যে প্রকল্প, সেখানকার প্রান্তিক গ্রামবাসী সামনেই চিকিৎসাসেবা পাবে সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লিভার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এবং তা সম্ভব হবে শুধু এই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে, ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কল্যাণে।

যে দেশের সরকারপ্রধান একদিন দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার হাস্যকর যুক্তিতে বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পায়ে ঠেলেছিলেন সেই দেশের সরকারপ্রধান, এখন দেশের চাকা সচল রাখছেন অনলাইনে গণভবনে বসে আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সারাদেশে তার সাংগঠনিক কার্যক্রম আর পাশাপাশি ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন আর তাও সেই অনলাইন তদারকির মাধ্যমেই। এটি শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণের কারণেই।

আজ সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। অভিনন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে। ইতিহাস আপনাকে মূল্যায়ন করবে হাজারো কারণে। তবে এত হাজার কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ আপনি রত্নগর্ভা। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরেই কোভিড সংগ্রামে আমরা চালকের আসনে। অভিনন্দন রত্নগর্ভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!

লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।