ন্যাভিগেশন মেনু

নানা আয়োজনে শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপিত


নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ৭৪ বছর অতিক্রম করলেন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে শাসকদল আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আজ নানা কর্মসূচি আয়োজন করে। 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উপলক্ষ্য উৎসবমুখর পরিবেশে কর্মসূচি উদযাপিত হয়।

দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চে সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রানীর গির্জা এবং বিকাল ৫টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। 

এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে সারা দেশে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৭৫ লক্ষাধিক টিকা দেওয়া হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি একটি ই-পোস্টার প্রকাশ করেছে। 

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ই-পোস্টারের শিরোনাম করা হয়- ‘পিতা দিয়েছে স্বাধীন স্বদেশ কন্যা দিয়েছে আলো। বনানীর শেরাটন ঢাকা হোটেলে ‘বাংলাদেশ : উন্নয়নের এক যুগ’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। 

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং পরে সেখানে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে কৃষক লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামি লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দিনটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দোয়া মাহফিল, খাবার বিতরণ, বৃক্ষরোপণ এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। 

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে র‌্যালি, মুক্তিযোদ্ধা সমাবশে, মিলাদ মাহফিল ও কেক কাটা কেটেছে। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি মা-বাবার প্রথম সন্তান।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন ঢাকার টিকাটুলীর নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। 

১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ) থেকে। তিনি এই কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। একই বছর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। 

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি নির্বাসিত জীবন কাটানোকালে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। 

১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ সময় সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাঁকে এক বিন্দু টলাতে পারেনি। এ সময় কমপক্ষে ২০ বার তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। আবার প্রাণে রক্ষা পেয়ে বিপুল উদ্যমে দেশ ও দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর অবিরাম লড়াই চলছে। 

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তি। সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি। বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। 

জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১.৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় ’৭৫-পরবর্তী সময়ের স্বর্ণযুগ হিসেবে।

২০০১ সালের ষড়যন্ত্র ও কারচুপির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ সময় দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে জোট সরকার সারা দেশে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। হত্যার শিকার হন ২১ হাজার আওয়ামি লিগ নেতাকর্মী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামাত জোট সরকারের মদদে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত নারকীয় গ্রেনেড হামলা। যার প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। গুরুতরভাবে আহত হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। 

বাংলাদেশ পরিণত হয় এক মৃত্যু উপত্যকায়। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। বাংলার আপামর মানুষ তাঁর আহ্বানে রাজপথে নেমে আসে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনের অবসান হয়। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তদারকি সরকার। 

ওয়ান ইলেভেনের পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে তদারকি সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে। 

কিন্তু এর মাত্র দুই মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাস ভবন সুধা সদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে করা হয় একের পর এক ষড়ন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। 

কারাগারে তাঁর জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে চলতে থাকে গণসংগ্রাম ও আইনি লড়াই। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা সমর্থিত সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে এককভাবে আওয়ামি লিগ লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অমিত সম্ভাবনার শক্তিশালী ভিত রচিত হওয়ায় জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ। 

এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ও চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনা করছে। তাঁর নেতৃত্বে সব প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা-সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। 

২০০৯ থেকে গত এক দশকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিনির্মাণের অভিযাত্রায় যুক্ত হয়েছে অজস্র সাফল্য-স্মারক। শেখ হাসিনা দলীয় কাউন্সিলে বারবার নির্বাচিত হয়ে দলের সভাপতির দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্রাউন জুয়েল’ বা ‘মুকুট মণি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়।

এস এস