ন্যাভিগেশন মেনু

সিনোভ্যাকের অনুমোদন হলেও বিক্রির চুক্তিই হয়নি বললো চিন


বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চিনের সিনোভ্যাক টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। রবিবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন। সিনোভ্যাকসহ মোট পাঁচটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হলো দেশে। এর আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, স্পুতনিক, সিনোফার্মা ও ফাইজারের টিকা অনুমোদন পেয়েছে।

চিনের সিনোভ্যাক টিকা বাংলাদেশ ছাড়াও ২২টি দেশে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দুই থেকে চার সপ্তাহ ব্যবধানে এই দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। টিকা সংরক্ষণ করতে হবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।

দেশের স্থানীয়  এজেন্ট ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সিনোভ্যাকের টিকার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চিনের সিনোফার্মের টিকার দাম প্রকাশ করার পর দু:খ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বাড়তি দামে টিকা কিনতে হবে বলে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তারও সমাধানের ইঙ্গিত মিলেছে।

সিনোফার্ম প্রতি ডোজ টিকা ১০ ডলার হিসাবেই বাংলাদেশকে দিতে রাজি হয়েছে চিন। চলতি জুন, জুলাই ও আগস্ট—এই তিন মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে মোট দেড় কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

এদিকে ঢাকায় চিনের মিশন উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান শনিবার ফেসবুক বার্তায় বলেছেন, গতকাল পর্যন্ত চিনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো চুক্তি হয়নি। ঢাকায় চিনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত মাসে বাংলাদেশে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাবের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় চিনের কাছ থেকে টিকা কেনার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে।

গত ২৭ মে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে জানানো হয়েছিল, প্রতি ডোজ ১০ ডলার হিসাবে দেড় কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা কিনছে বাংলাদেশ। টিকার দাম প্রকাশিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

কেননা ওই দেশগুলো চিনের কাছ থেকে ১০ ডলারের বেশি দামে প্রতি ডোজ টিকা কিনছে। বিতর্কের মুখে শ্রীলঙ্কার সরকার বলেছিল, সিনোফার্ম ও চিনা দূতাবাস তাদের জানিয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে ১০ ডলারে টিকা বিক্রির কোনো চুক্তি তারা করেনি। শনিবার  ঢাকায় চিনের মিশন উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ানও জানিয়েছেন, টিকা কেনার কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি আরো জানান, বাণিজ্যিকভাবে টিকা কেনার বিষয়ে চিন সরকারের সঙ্গে নয়, বরং সিনোফার্মের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশকে গত মাসে চিন উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা দিয়েছে। গত মাসের শেষের দিকে চিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সেলর ওয়াং ই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের অনুরোধে বাংলাদেশকে আরো ছয় লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

গতকাল ঢাকায় চিনের মিশন উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান জানান, আগামী ১৩ জুনের মধ্যে ওই ছয় লাখ ডোজ উপহারের টিকা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘১৩ জুনের মধ্যে উপহার হিসেবে ছয় লাখ ডোজ টিকা হস্তান্তরের জন্য আমরা তৈরি রয়েছি। তবে বাংলাদেশ কখন তা নেবে, সেটা এখনো ঠিক হয়নি। আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষণা দিয়েছে, চলতি জুন মাসের মধ্যেই তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আড়াই কোটি ডোজ টিকা দেবে। ওই টিকার ৭৫ শতাংশ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১৬টি দেশকে ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহের কথা বলেছে হোয়াইট হাউস।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস তার ফেসবুক পেজে ছবিসহ বার্তায় বলেছে, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তর ইউএসএআইডি ত্রাণ পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম গতকাল সকালে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রাভিজ বিমান ঘাঁটিতে ত্রাণবাহী ওই সামরিক এয়ারক্রাফটকে বিদায় জানিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরেকটি এয়ারক্রাফট আসার কথা রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য ইউএসআইডির ত্রাণ সহায়তার প্রথম চালানকে বিদায় জানাতে তিনি ট্রাভিজ বিমান ঘাঁটিতে গিয়েছিলেন। তিনি আরো লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই মানবিক সহায়তা কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সামর্থ্যকে ব্যাপকভাবে জোরদার করবে।’

এদিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও জানিয়েছে, প্রাণ রক্ষাকারী সরঞ্জামের চালান বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিকে আমি খুবই গুরুত্ব দিই। আমি আশা করি, এই সহায়তা আমাদের অত্যন্ত জোরালো ও ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রতীক হয়ে থাকবে।’

বিদেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা কবে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা কেনার চুক্তি থাকলেও গত মাস থেকে সেই টিকা সরবরাহ বন্ধ আছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ভারত নিজেই এখন বিদেশ থেকে টিকা আমদানি এবং দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে টিকা কেনার চুক্তির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

কোভিড টিকা পাঠাতে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যকেও অনুরোধ করেছিল। যুক্তরাজ্য বেসরকারি খাতের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টার পরামর্শ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক মাস বাংলাদেশকে কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা সহায়তা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের টিকা উপহারের ওপর নির্ভর করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত শুক্রবার সতর্ক করে বলেছে, চলতি জুন ও আগামী জুলাই মাসে কোভ্যাক্সের টিকার ঘাটতি আছে। এ কারণে টিকাদান কর্মসূচি বিঘ্নিত হবে। বিশ্বে বিশেষত নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে টিকার ন্যায্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে কোভ্যাক্স গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ ১২৯টি দেশে কোভ্যাক্স আট কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্সের দায়িত্ব পালনকারী ব্রুস আইলওয়ার্ড জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আরো ২০ কোটি ডোজ প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলো এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ডোজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে এতে সংকট কাটবে না।’

আইলওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা ডোজগুলো তাড়াতাড়ি না পেলে টিকা দেওয়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হব। কারণ আমরা এখনো যথাযথ অবস্থায় নেই। আমাদের হাতে যথেষ্ট ডোজ নেই।’

এস এস