ন্যাভিগেশন মেনু

অভিজিৎ হত্যা মামলা: ৫ জনের ফাঁসি, ১ জনের যাবজ্জীবন


ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ হত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁসি ও ১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন - সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস্, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ। আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হলেন উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায়ের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এ রায়ে মামলার ছয় আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য।

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রায় ঘোষণার আগে কাশিমপুর কারাগারে থাকা চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়ে। মামলার অন্য দুই আসামি মেজর জিয়া ও আকরাম শুরু থেকেই পলাতক।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির  সামনে জঙ্গিদের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন অভিজিৎ রায়। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা অভিজিতের সঙ্গে ছিলেন এবং হামলায় তিনিও আহত হন। জঙ্গিদের চাপাতির কোপে হাতের একটি আঙুল হারান তিনি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি ও মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন তিনি।

ঘটনার পরদিন ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি প্রথমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম (সিটিটিসি) ইউনিট তদন্ত করে। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যাওয়ায় এবং এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া জঙ্গি দলটির নেতৃত্বে থাকা মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ২০১৬ সালের ১৯ জুন ঢাকার খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় এ তিনজনের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

পরে ওই বছরের ১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ হয়। মামলায় ৩৪ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। ঘটনার প্রায় ছয় বছর ও বিচার শুরুর দেড় বছরের বেশি সময় পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার জাকির বলেন, ‘ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা হত্যা মামলায় ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে।’

ছেলেকে  হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়। তবে এর কিছুদিন পর ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

ওয়াই এ/ এডিবি