ষাট-সত্তরের দশকে মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে লোককাহিনীভিত্তিক রাজরাণী'র চরিত্রে অভিনয় করে সকলের নজর কারেন অভিনেত্রী রূপা খান (কোহিনুর বেগম) এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ ।
রূপা খান (কোহিনুর বেগম) ১৯৩০ সালের ১৪ আগস্ট, মাদারীপুর জেলায এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে ঢাকার মঞ্চের জনপ্রিয় নাট্যশিল্পী ছিলেন। পরবর্তীতে বেতারনাটকে কাজ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। মৃত্যুদিবসে এই অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের একসময়ের সহ সাথীরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় বাংলাদেশে শিল্প-সংস্কৃতিজগতকে এগিয়ে নিতে অভিনয়শিল্পী রূপা খান মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। এদেশের চলচ্চিত্রের শুরুর দিকের এসব গুণি অভিনয়শিল্পীদের আজ অনেকেই ভুলতে বসেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সূচনাপর্বের পর, আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যাদের সব চাইতে বেশী অবদান, তাদেরই একজন ছিলেন এই মহান অভিনয়শিল্পী রূপা খান।
যদিও বেশীরভাগ নাটক-চলচ্চিত্রেই নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতেন। তবে কিছু কিছু ছবিতে আদর্শবান মা ও ভাবীর চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সহ লোককাহিনী ভিত্তিক প্রায় সব চলচ্চিত্রেই তাঁকে দেখা যেতো রাজরাণী'র চরিত্রে অভিনয় করতে।
উল্লেখ যে, রূপা খান এর অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে- জোয়ার এলো, রাজা সন্ন্যাসী, রহিম বাদশাহ ও রূপবান, জুলেখা, কূঁচবরন কন্যা, সুয়োরানী দুয়োরানী, চম্পাকলি, এতটুকু আশা, মানুষ অমানুষ, দীপ নিভে নাই, জীবন তৃষ্ণা, ভাড়াটে বাড়ী, আমার বউ, ময়ুরপংখী, গৃহবিবাদ, সারেন্ডার, দুই জীবন উল্লেখযোগ্য।
উল্লেখ্য এই মহান অভিনয়শিল্পী রূপা খান শুধু একজন চলচিত্র, নাট্য, টেলিভিশন অভিনেত্রীই ছিলেন না। মহান মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময় শরীয়তপুর- মাদারীপুর জেলার মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন করে আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদীয় মহিলা হুইপ খালেদা খানমকে শরিয়তপুর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পাশে রেখে সমগ্র শরীয়তপুর- মাদারীপুর জেলার নারী, যুবকদেরকে সঙ্গে নিয়ে দেশ কে স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন। শুধু দেশকে স্বাধীন করতে হবে এই সংকল্প নিয়ে ঢাকা থেকে পরিবার সহ রাতের আধারে পালিয়ে শরিয়তপুরে সকল গ্রামীন বাধা আপত্তি পেরিয়ে নিজ শশুরালয়ে মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
মরহুম রুপা খান (যুদ্ধ কালীন মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি) ও বর্তমান আওয়ামীলীগের বিগত সংসদের সাবেক সংসদীয় মহিলা হুইপ খালেদা খানম (যুদ্ধ কালীন মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক) সহ আরও অনেকেই ততকালীন সময় মাদারীপুর,শরীয়তপুর জেলার মহিলা মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে সরা সরি মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যদিয়ও যুদ্ধ কালীন মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মরহুম রুপা খান ও সাবেক সংসদীয় কমিটির মহিলা হুইপ খালেদা খানম (যুদ্ধ কালীন মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক) কে শরীয়তপুর বাসী মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে জানলেও বর্তমান নতুন মুক্তি যোদ্ধা কমিটি মরহুম রুপা খানকে তার প্রাপ্ত সম্মান থেকে বঞ্চিত করছে।
সাবেক সংসদীয় কমিটির মহিলা হুইপ খালেদা খানমকে মুক্তি যোদ্ধা তালিকাভুক্ত করা হলেও, যুদ্ধ কালীন মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মরহুম রুপা খানকে মুক্তিযুদ্ধ কালিন সকল প্রকার সনদ ও প্রমানাদি থাকা সত্ত্বেও কেন এই মহান একজন সাহসী মাকে তার অধীকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে পরিবার এর উত্তর পাচ্ছে না। যদিও মুক্তিযদ্ধা মন্ত্রলায়ে আপিল করে শুনানির অপেখ্যায় রয়েছে পরিবারটি। এ বিষয় পরিবারের সদস্যরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় শুদৃষ্টি ও সহযোগিতার অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান।