ন্যাভিগেশন মেনু

অল্পবয়সে হার্ট অ্যাটাক, যা বলছেন চিকিৎসকরা


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে হার্টের সমস্যায় প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ কম বয়সি পুরুষ এবং নারী। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি।

একটা সময় ছিল, যখন ৬০-৭০ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয় বলে ভাবা হতো। এখন আর তা নয়। তথ্য ঘেটে দেখা যায়, ক্যাড (করোনারি আর্টারি ডিজিজ) CAD (Coronary Artery Disease) যেটা ৪৫ বছরের নিচে হার্টের সমস্যাকে বলা হয়, তা অনেকটাই বেড়ে গেছে। এই রোগের বয়সসীমা এখন নেমে এসেছে ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে।

গুরুতর হার্ট অ্যাটাক নিয়ে তারা ভর্তি হচ্ছেন এবং ধরা পড়ছে ৮০-৯০ শতাংশ ব্লক। এর জন্য করতে হচ্ছে ইমার্জেন্সি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি অথবা বাইপাস সার্জারি।

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব হৃদযন্ত্র দিবস বা ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’। চলতি বছরে এই দিনটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, তার কারণ হালে অল্পবয়সিদের মধ্যে হৃদরোগের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে গেছে। কেন এমন হচ্ছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

প্রাথমিক লক্ষণ কী হতে পারে? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন যে, বুকের বাঁ দিকে চাপভাব কিংবা কিছু দূর জোরে হাঁটার পর নিঃশ্বাসের সমস্যা। যাদের পরিবারের মধ্যে রোগটি রয়েছে তাদের কনুই, বা হাঁটু ফুলে যায়। কনুই হাঁটুতে কোলেস্টেরল জমার ফলে ছোট ছোট ফোলা ভাব তৈরি হয়।

ভারতের এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানায় এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। কী কী কারণ বলছেন তিনি? চলুন জেনে নিই-

জন্মগত কারণ: অনেকেরই জন্ম থেকেই শিরা-ধমনীর কিছু সমস্যা থাকে। মাপ ছোট হয়। এগুলো অল্প বয়সে সেভাবে বোঝা যায় না। যাদের এই সমস্যা আছে, তারা যদি পরে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করেন বা খুব বেশি শরীরচর্চা করেন, তা হলে অল্প বয়সেও হৃদরোগের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

কাওয়াসাকি রোগ: অনেকেরই পাঁচ-সাত বছর বয়সে এই অসুখটি হয়। ফলে থ্রম্বোসিসের সমস্যা থেকে যেতে পারে। পরে বড় হলে ২৫-৩০ বছর বয়সেও তাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দেখা দেয়।

ধূমপানে আসক্তি: যারা ধূমপান করেন, নিয়মিত সিগারেট বা গাঁজা খান - তাদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওষুধ খেলে এই সমস্যা কমে। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধছে, তা অনেক সময়েই টের পাওয়া যায় না। ফলে চিকিৎসায় দেরি হয়। হৃদরোগের আশঙ্কা তাতে বেড়ে যায়।

জিনগত কারণ: অনেকেরই জিনগত কারণে শিরা-ধমনীর নানা সমস্যা থাকে। বিশেষ করে লিপিড মেটাবলিজেমের সমস্যা থাকে অনেকের। তাদেরও কম বয়সেই হৃদরোগ হতে পারে।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া: যাদের বাবা-মায়ের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে, তাদের অনেকেরই কম বয়সে হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা: এটি কম বয়সে হৃদরোগের অন্যতম কারণ। যারা খুব কম বয়স থেকে জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্তি তেলের খাবার, অতিরিক্ত পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খান- তাদের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সাবধান হতে হবে:

বুকে সামান্য ব্যথা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে শরীরে সামান্য হলেও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। সেটা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। একেবারে ছোট বয়সেও বুকে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।’ 

তাছাড়া, নিয়মিত হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা করাতে হবে।

এই চিকিৎসকের মত, ক্রান্তীয় পরিবেশে এমনিতেই হৃদরোগের আশঙ্কা বেশি। কারণ, এই পরিবেশের মানুষের হৃদযন্ত্র সংলগ্ন শিরা-ধমনীর মাপ ছোট হয়। তাছাড়া এখানকার পরিবেশে কোলেস্টেরল আর ডায়াবিটিসের প্রবণতাও বেশি। তাই একেবারে ছোট বয়স থেকেই সাবধান হতে হবে। না হলে অল্প বয়সে হৃদরোগের আশঙ্কা আরও বাড়বে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এডিবি/