ন্যাভিগেশন মেনু

আইএফএন রোডশো বাংলাদেশ ২০২১ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত


বাংলাদেশে ইসলামিক ফিন্যান্স-এর বর্তমান ধারা ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বিশদ আলোকপাত হয় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ”আন্তর্জাতিক আইএফএন অন এয়ার রোড শো বাংলাদেশ-২০২১-এ”। অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের স্বনামধন্য ইসলামিক স্কলারবৃন্দ। আর পুরো অনুষ্ঠানটির মর্ডারেটর হিসাবে ছিলেন বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান। সমগ্র আলোচনাটির সারমর্ম তৈরি করেছেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বিনিয়োগ বিভাগের রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের প্রধান মো. মুকিব-উল-আহসান।

ইসলামী অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এবং বিপুল ইসলামী ভাবধারার জনগোষ্ঠীর চাহিদাকে সামনে রেখে রেডমানি গ্রুপ সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক আইএফএন অনএয়ার রোডশো ২০২১’ নামক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। গত ৫ এপ্রিল আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ছিল 'সাহসী নতুন বিশ্ব: বাংলাদেশে ইসলামী ফাইন্যান্স'।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন শরিয়াহ ভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান।

অনুষ্ঠানের মূল পর্ব অর্থাৎ বিজ্ঞ প্যানেলিস্টদের মতবিনিময়ের আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম এবং এশিয়ার সামগ্রিক ইসলামী ফাইন্যান্সের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিসেসের ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্স গ্রুপের বিশ্লেষক টেংফু লি।

মূল প্রবন্ধে নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকের যাত্রার ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেওয়ার পাশাপাশি এই খাতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য উন্নতির প্রতি তার অভিমত তুলে ধরেন।

ইসলামী ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তিমত্তা অর্জনের পেছনে তিনি এ দেশের বিপুল মুসলিম জনগোষ্ঠীর ইসলামী ভাবধারা চিহ্নিত করেন এবং সেই সাথে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা বয়সভিত্তিক মুনাফার যে সুবিধা বর্তমানে ভোগ করছে ইসলামী ব্যাংকিং খাতেও তার প্রভাব রয়েছে বলেও মনে করেন।

এদেশে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ বর্তমানে কর্মক্ষম শ্রেণিভুক্ত। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং এই বিপুল কর্মক্ষম মানুষকে মানবসম্পদ রূপে গড়ে তুলতে পারলে ইসলামী ব্যাংকিং খাত ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে জায়গা করে নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে, এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কিছু তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে টেনফু লি বলেন, এই অঞ্চলে ইসলামী ফিন্যান্সিং-এর সার্বিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক। যেহেতু এই অঞ্চলের তৎসংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর মুলধন এবং তারল্য সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এমনকি করোনাকালীন এদের অবস্থা তুলনামূলক স্থিতিশীল।

তিনি বিশ্বাস করেন দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থান সুদৃঢ় থাকবে। করোনাকালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ এবং কার্যক্রমেরও তিনি প্রশংসা করেন।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণা উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেখানে ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ মানুষ মোবাইলফোন ব্যবহারকারী ছিল, সেটা ২০২৫ সালে ৬৯ শতাংশে উন্নীত হবে, যা কিনা নিকটস্থ ব্যাংক শাখার প্রয়োজনীয়তা কমাবে এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দূরবর্তী মানুষের কাছেও ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এখনও প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার বাইরে অবস্থান করছে। ইসলামী ব্যাংকিং সেবার উন্নয়নের জন্য তিনি একটি হালাল ইকোসিস্টেম তৈরির ব্যাপারেও গুরুত্ব আরোপ করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যের পরে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব প্যানেল-আলোচনা শুরু হয়। প্যানেলিস্টের তালিকায় ছিলেন, ব্লু মাউন্ট ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. সালিবা স্যাসিন, বেডফোর্ড রো ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী স্কট লেভি, দ্য ইসলামিক করপোরেশন ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব দ্য প্রাইভেট সেক্টর, ট্রেজারির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইকবাল দারেদিয়া, নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম কবির হাসান, ফরম্যাবের কনসালট্যান্ট ড. নাটালি শুন।

বিভিন্ন প্রশ্নোউত্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যত অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে রোডম্যাপ বা কর্ম-পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত সেসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০টি পূর্ণ পরিধির বেসরকারি বানিজ্যিক ইসলামী ব্যাংক রয়েছে যার মধ্যে দুইটি ব্যাংক সদ্য তাদের যাত্রা শুরু করেছে, যেগুলো পূর্বে প্রথাগত বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এ ছাড়াও ৯টি প্রচলিত বানিজ্যিক ব্যাংকের ১৯টি ইসলামী ব্যাংকিং ব্রাঞ্চ এবং ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৬৬টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে। 

দেশে ১১টি তাকাফুল ইন্সুরেন্স কোম্পানি রয়েছে এবং প্রথাগত ইন্সুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ১২টি তাকাফুল পণ্য-সেবা বিতরণ করে। 

দেশের ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর চাইতে বেশি। দেশের সার্বিক ব্যাংকিং কারবারের এক চতুর্থাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকিংয়ের এক তৃতীয়াংশ ইসলামি পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ নিয়ে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। ইসলামী ব্যাংকের অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই সুকুক। গত বছরের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুকুক গাইডলাইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করে। সম্প্রতি সরকার ৮ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করে যা কিনা ‘নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহনে আয়োজিত নিলামের মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করে সরকার।

দেশের প্রচলিত বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বিনিয়োগের এ ধরণের শরিয়াহভিত্তিক কোন বন্ড ছিল না। যে কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমানে অর্থ অবিনিয়োগকৃত বা অলস থেকে যেতো এবং সরকারও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হতো।

বাজেটে ঘাটতি মেটাতে এতোদিন সরকার শুধু প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে পারতো। অথচ দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ইসলামী ব্যাংকিং। ইসলামী বন্ডের কল্যাণে এখন সেখান থেকেও ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। এতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আসার পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরতা কমবে।

‘সুকুক’ প্রবর্তনের উদ্যোগ সে হিসেবে অর্থবহ ভূমিকা রাখবে বলে আলোচকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর মাধ্যমে দেশে বৈধ ও নিরাপদ বিনিয়োগের নতুন একটি ক্ষেত্র উন্মোচন হলো। দেশি-বিদেশি যেকোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে।

সরকারি সুকুকের পাশাপাশি ইতোমধ্যেই বেসরকারি খাতেও সুকুকের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ, দেশবন্ধু, সুকুকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে লন্ডনভিত্তিক বিখ্যাত বেডফোর্ড রো ক্যাপিটাল কোম্পানির মাধ্যমে দেশে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে আসছে। যা কিনা করপোরেট পর্যায়ে সুকুকের ব্যবহারের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে এবং অন্যান্য শিল্প গ্রুপগুলোও ভবিষ্যতে এই ধরণের বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থানে আগ্রহী হবে।

যদিও সুকুক ইসলামী শরিয়াহ'র আদলে উদ্ভাবিত পণ্য। এর উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো, শুধু মুসলমানদের জন্যই নয় বরং যেকোন ধর্মের মানুষই এতে বিনিয়োগ করার ব্যপারে উন্মুক্ত সুযোগ পাচ্ছেন। দেশিয় প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলে, বিনিয়োগ এবং অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবে সুকুক ব্যাপক সফলতা আনয়ন করবে।

ইসলামী বন্ডের উদ্দেশ্যই হলো তা জনকল্যানে ব্যবহার হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইস্যুকৃত প্রথম সুকুকটি এদেশের মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হবে যা কিনা মূল উদ্দেশ্যের সাথে পুরোপুরি সাদৃশ্য রাখে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য এই ধরণের সবুজ অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আলোচকরা মনে করেন। 

তবে প্যানেলিস্টরা সংশয় পোষণ করে বলেন, দেশে প্রচলিত বন্ড এখনও পরিপূর্ণভাবে তার উপযোগ পূরণ করতে পারেনি বা উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের (পিপিপি) এর যে ধারণা তার পুরোপুরি সফলতা এখনো আসে নি। সেক্ষেত্রে ইসলামী বন্ড সুকুক কতটুকু সফলতা আনতে পারবে তা প্রশ্নাতীত নয়। এখন পর্যন্ত বাজেটের ঘাটতি পূরণের উদ্দেশ্যেই সরকারি বন্ডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

আলোচকরা মনে করেন, সুকুক প্রবর্তনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য নতুন মাইলফলক। তবে এর সফলতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তথা ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে, যা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক প্রচেষ্টায় অর্জন হবে না। নীতিমালা প্রবর্তনের ক্ষেত্রেও দুপক্ষের অংশগ্রহন এবং সমন্বয় প্রয়োজন। সরকার যদি এই ধরণের বন্ড দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে পারে, তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে, ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী অর্থনীতিতে স্থায়ী আসন লাভ করবে।

আলোচনার অন্য দিকে উঠে আসে প্রচলিত বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকে রুপান্তরের প্রবনতার বিষয়টি। ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত এসএলআর এবং সিআরআর হারের সুবিধা পেতেই কি প্রচলিত ব্যাংকগুলো ইসলামী ব্যাংকে রুপান্তরিত হতে আগ্রহী নাকি তারা সত্যিকার অর্থেই শরিয়াহভিত্তিক অর্থায়ন চায় সেটা তর্ক সাপেক্ষ। প্যানেলিস্ট এ ব্যপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকি বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। শুধু মাত্র ব্যাংকিং সফটওয়্যার পরিবর্তন নয়, বরং প্রকৃত ইসলামী চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা ইসলামী ব্যাংকগুলোর লক্ষ হওয়া উচিত।

আলোচকরা মনে করেন, নতুন কোন ব্যাংককে ইসলামী ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর অবকাঠামো, মানবসম্পদের দক্ষতা এবং শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যদের ইসলামী ফিকাহ সম্পর্কিত যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করা উচিত। প্রকৃত ইসলামী ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। 

একইসাথে শরিয়াহ বোর্ডে যেসব আলেম নিয়োগ পাবেন তাদের নিয়োগের ভার নিরেট বোর্ডের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমন ব্যাংকগুলোর বোর্ড-সদস্য নিয়োগের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে, শরিয়াহ বোর্ডে ইসলামী স্কলার নিয়োগের ক্ষেত্রেও তেমন নিয়ম-নীতি থাকা প্রয়োজন। অন্যথায়, প্রকৃত শরিয়াহ'র আদলে ব্যাংকিং সেবার পরিবর্তে ইসলামী ব্যাংকের খোলসে প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকের অনুশীলনেরই সুযোগ থেকে যায়। সেজন্য ইসলামী ফিকাহের আইন সম্পর্কে জ্ঞাত যোগ্য স্কলার বা আলেম শরিয়াহ বোর্ডের জন্য নির্বাচন করতে হবে এবং তারা যেনো বোর্ড বা ম্যানেজমেন্টের নিছক আজ্ঞাবহ না হয়ে যান তাও নিশ্চিত করতে হবে।  

ইসলামী অর্থায়নের অপ্রতুল জ্ঞান এবং সীমিত উদ্ভাবনীশক্তির দরুন এই খাতে এখনো মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি) কিংবা মুশারাকার (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি) মতো ইসলামী পণ্যগুলো প্রসার লাভ করতে পারেনি। যেকারণে মূল ধারার ইসলামী ব্যাংকিং সেবা এখনো বৃহৎ পরিসরে ব্যাপ্তি লাভ করতে পারছে না। সেজন্য পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের বিকল্প নেই।

শুধুমাত্র ব্যাংক কর্মকর্তাই নয়, বরং শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যদেরও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যেমন দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন তেমনি সাধারণ মানুষেরও ইসলামী পন্যগুলোর বৈশিষ্টগুলোর ব্যাপারে জ্ঞান থাকা জরুরি। 

অনুষ্ঠানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী এবং সেই সাথে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উন্নয়নে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যোগসাজসের কথা আলোচনা হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ইতোমধ্যেই অ্যাজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো বৃহৎ জনগোষ্ঠী যেখানে এখনও ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে অবস্থান করছেন, এই সেবার আওতায় আনার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনও বিকল্প নেই। 

উদারহনস্বরূপ আফ্রিকা অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়। সেখানে ব্যাংকিং অবকাঠামো অনেক দুর্বল কিন্তু তারপরও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তারা আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করার সুবিধা ভোগ করছেন। বাংলাদেশে অনেক জায়গাতেই যেহেতু এখনো প্রচলিত ব্যাংকিং অবকাঠামো তৈরি হয়নি, বা সেটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তাই ইসলামী ব্যাংকগুলোর মোবাইল ব্যাংকিং খাতে আরও বেশি সচেষ্ট হওয়া উচিত বলে প্যানেলিস্টরা মত প্রকাশ করেন।

সর্বোপরি আলোচকরা মনে করেন, ইসলামী ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি এক দারুন জায়গায় অবস্থান করছে। এই অগ্রাযাত্রাকে স্থিতিশীল বা অব্যাহত রাখার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং তদারকি আবশ্যক। ইসলামী ব্যাংক যেহেতু ইসলামি অর্থনীতির একটি প্রায়োগিক ক্ষেত্র তাই দেশের অর্থনীতি এবং জনকল্যানে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, সুকুক অধ্যায়ে বাংলাদেশের পদার্পন সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন।

উল্লেখ্য তৌহিদুল আলম খান উক্ত আন্তর্জাতিক আইএফএন অন এয়ার রোড শো বাংলাদেশ-২০২১-এর অ্যাডভাইজরি বোর্ডের একজন সদস্য হিসাবেও মনোনীত হয়েছেন এবং তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আইএফএন এয়ার রোড শো-এর মডারেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামকি ফাইন্যানন্স ও ব্যাংকিং-এর উপর প্রকাশিত তার অনেক গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন প্রশংসা অর্জন করেছে।

করোনাকালীন ইসলামী ব্যাংকগুলোর অবস্থান প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় সুদৃঢ় ছিল। দেশের মানুষের ইসলামী মূল্যবোধ এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অর্থনীতির এই খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং আর্থ সামাজিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নেও ইসলামী ব্যাংকিং খাত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মর্ডারেটর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিশেষে সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এডিবি/