ন্যাভিগেশন মেনু

আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি


শরীয়তপুর জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ মাত্রায় চেয়ে বেশি জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ছয়শত হেক্টর জমিতে এ চাষ বেশি হয়েছে। তুলনামূলক ফলন ও দাম ভাল হওয়ায় এ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ও জমি চাষের উপযোগী হওয়ায় আউশ ধানের চাষ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। জেলায় ফসলের মাঠে শুরু হয়েছে আউশ ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব। ভালো ফলনের পাশাপাশি ধানের দামও ভালো পেয়ে খুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা। আগামীতে তারা আরও বেশি জমিতে আউশ চাষ করবেন বলেও জানান কৃষকরা।

গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় এবং আশানুরূপ মূল্য পাওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে আবাদ করেছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর আউশের লক্ষমাত্রা ছিলো ১২ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে জেলায় মোট ১৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫৮৩ হেক্টর বেশি জমিতে আউশের চাষ হয়েছে। চাষকৃত এ জমিতে ২৭,৫৮৮ হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

এর মধ্যে উপজেলা ভিত্তিক আউশের আবাদ হচ্ছে,- শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ছয়শত ৩২ হেক্টর জমিতে, নড়িয়ায় এক হাজার চারশত ২ হেক্টর জমিতে, দুই হাজার নয়শত ৩৩ হেক্টর জমিতে, ভেদরগঞ্জে পাঁচ হাজার তিনশত ৭৫ হেক্টর জমিতে, ডামুড্যায় পাঁচশত ১১ হেক্টর জমিতে, গোসাইরহাটে দুই হাজার দুইশ ৩২ হেক্টর জমিতে এ চাষের আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে জেলার পাঁচ উপজেলায় ক্ষেত থেকে পুরোদমে আউশ ধান কাটা চলছে।

জাজিরা উপজেলার বিলাশ পুর ইউনিয়নের সেকান্দর সরদার জানান, কৃষি অফিস থেকে বিনাধান ১৯ একটি প্রদর্শনী পাই, এই ধান এলাকায় একদম নতুন,আমি এই খানের বীজ রাখছি । অনেকেই আমার কাছ থেকে বীজ কিনে নিচ্ছে।  আমার ১ বিঘা জমিতে কাচা ২২ মন ধান পেয়েছি। আমরা এই জাত পেয়ে খুশি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর এলাকার কৃষক নুর ইসলাম বলেন, আগে আউশ ধানের ফলন খুবই কম হওয়ায় কৃষকরা আউশ ধান চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। চলতি মৌসুমে আউশের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা আগামীতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়েছে। যদিও চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আউশের আবাদে মনোযোগী হয় চাষিরা।

আরেক কৃষক ছাত্তার মোল্লা বলেন, বোরো ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা আউশ ধান রোপণ করেন। মাত্র ১০০ দিনেই আউশ ধান কৃষকদের ঘরে আসে। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই একই জমিতে কেউ চলতি আমনের চারা রোপণ করেছে ।

জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জামাল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তা হল  বৃষ্টি নির্ভর আউস উৎপাদন বাড়ানো যাতে করে গ্রাউন্ড ওয়াটার হার্ভেষ্ট কম হয় সেই সাথে উৎপাদন খরচ কমিয়ে ধান উৎপাদন কে লাভজনক করা সেই  লক্ষ্যে আমরা মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের মাধ্যমে কৃষকদের কে নিয়ে আউশ উৎপাদন কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, এই জন্যে স্থানীয় জাতের বদলে আধুনিক উফসী যেমন ব্রিধান ৮২,  ব্রিধান ৮৫ এবং বিনাধান ১৯ এর মত জাত কে নিয়ে এসেছি যার গড় ফলন ৫ টনের মত।

বর্তমানে আউশ উৎপাদন কে বাড়াতে জাজিরাতে ১৩৯০ জন কে উপজেলা কৃষি  অফিসের মাধ্যমে বিনা মূল্যে সার, বীজ সরবরাহ করেছে। এছাড়া এনএটিপি ২ প্রকল্প, ৭ জেলা প্রকল্প সহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান গম ও পাট বীজ উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের আউশ ধানের বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার ফাতেমা ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় উপজেলায় আউশের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঠ দিবস, উঠান বৈঠক, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এতে সেচ নির্ভর বোরো আবাদের পর তারা বৃষ্টির পানিতে আউশ চাষ করেছে। ফলে আউশের ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি ধানের দাম থাকায়  কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম রশূল জানান, ইতোমধ্যেই জেলায় ৬০ শতাংশ জমির আউশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। মৌসুমে পাটের পরিবর্তে আউস করছে। এবং আউশের মৌসুমে বৃষ্টি হওয়াতে লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আউশের চালের ভাত খেতে সুস্বাদু। এ জেলার মাটি আউশ ধান উৎপাদনের বেশ উপযোগী। এ চালের চাহিদা থাকায় কৃষকরা আগ্রহ সহকারে প্রতি বছর আউশ আবাদ করেন বলেও জানান এ কৃষিবিদ।

আরএইআর/সিবি/ওআ