ন্যাভিগেশন মেনু

আছিয়া বেগমের হাতে হাজার শিশুর জন্ম


মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিক মানুষের ভরসা আর বিশ্বাস অর্জন করে সুনামের সহিত মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। নিরাপদ মাতৃত্ব ও স্বাভাবিক প্রসবে শতকের রেকর্ড ভেঙ্গে হাজারের কোটায় পদার্পন করেছে কমিউনিটি ক্লিনিকটি। আর এই মাইলফলক স্পর্শ করতে প্রধান ভুমিকা রেখেছেন এ কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী ও ধাত্রী মোচ্ছামাৎ আছিয়া বেগম।

প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে আসছেন স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার মানুষ। ২০১১ সালে চালু হওয়ার পর থেকেই জনগণের স্বাস্থ্যসেবার কাজ করে যাচ্ছে ক্লিনিকটি। সেই সাথে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিক। যেখানে নানা বাহানায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার ছুতো খোঁজে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো, সেখানে এরই মধ্যে হাজার শিশুর নিরাপদ প্রসব হয়েছে এ কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে।

আছিয়া বেগম মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর কাজেই সহায়তা করছেন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন স্বাস্থ্য সহকারী তিনি। কাজ করছেন মনুমুখ ইউনিয়নের সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। তার কাজের সুনাম এই সাধুহাটির পরিসরে আটকে নেই। এরইমধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারও তার অর্জনে এসেছে।

আছিয়া বেগমের হাতে এক থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে এক হাজার শিশুর নিরাপদ ও স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। সাধুহাটি ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর ২০২১ সালে এসে এক হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে ধাত্রী আছিয়া বেগমের হাতে এক হাজারতম শিশুর নিরাপদ প্রসব হয়েছে। এটা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সাফল্যের এক গল্প।

বাড়ির কাছে বিনা খরচে এমন চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি রোগী ও এলাকাবাসী।

তারা বলছেন, এই ক্লিনিক থেকে তারা সব রকম চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ পাচ্ছেন। স্বাভাবিক প্রসবের জন্যে তারা এই ক্লিনিকে ছুটে যান এবং নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসবের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।

সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে এক হাজারতম শিশুর জন্ম দিয়ে গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত গৃহিনী ফারজানা আক্তার। এই মেয়ে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মারজানা আক্তার। মা ও মেয়ে দুইজনই সুস্থ আছেন। ফারাজানার স্বামী ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন।

ফারজানা আক্তার বলেন, ‘সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আছিয়া ম্যাডামের কথা আগে মানুষের মুখে শুনেছি। এখানে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসবে সন্তান জন্ম দিয়েছি।’

স্বাস্থ্যসহকারী ও ধাত্রী আছিয়া বেগম বলেন, সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে এক হাজার শিশুর স্বাভাবিক প্রসব করিয়ে এক হাজার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন। জীবনের বাকী সময়টুকু মা ও শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবেদা বেগম বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে এ কমিউনিটি ক্লিনিকে হাজার শিশুর নিরাপদ ও স্বাভাবিক প্রসব স্বাস্থ্য বিভাগের বিশাল অর্জন ও সফলতা। বাড়ির পাশে বিনা খরচে এ ধরণের সেবা পেয়ে এলাকাবাসী আনন্দিত। আর স্বাস্থ্যকর্মী আছিয়া বেগমের হাতে হাজারটি শিশুর জন্ম একটি মাইলস্টোন। অন্য সহকর্মীদের কাছে তিনি উদাহরণ। তার এ সফলতায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গর্বিত।

তিনি বলেন, অন্য কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা ভাবছে উপজেলা স্থাস্ব্য বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিক মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় টেকসই উন্নয়ন এবং সাফল্যের অন্যতম একটি উদাহরণ।

পিডি/সিবি/এডিবি/