ন্যাভিগেশন মেনু

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে এলএনজি আমদানি শুরু


দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে প্রথমবারের মতো খোলা বাজার থেকে কম দামে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ।

কক্সবাজারের মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালে গত মাসের শেষ দিকে ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি সরবরাহ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভাইটোল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড।

প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ২০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করবে পেট্রোবাংলা। এতে খরচ হবে ১৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে থাকা চুক্তির বাইরে গিয়ে খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনার এই উদ্যোগে সরকারের অন্তত: ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ব রূপান্তরিত গ্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম শুক্রবার বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, ‘গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে প্রথমবারের মতো খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে এখন এলএনজির দাম কম হওয়ায় আমরা এই সুবিধা নিচ্ছি। যখনই দাম কম থাকবে তখনই আমরা এই এলএনজি আমদানি করবো। এতে করে আমরা সাশ্রয়ী দামে এলএনজি সরবরাহ করতে পারবো।’  

জ্বালানি সূত্র জানায়, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। বর্তমানে কাতার গ্যাস এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।

তবে বছরের বিভিন্ন সময় এলএনজির দাম কমে যায়। এছাড়া বছরের কোনও সময়ে গ্যাসের চাহিদা কমে গেলেও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি না নিলেও মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

এসব সমস্যার সমাধান করতে এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলো প্রয়োজনের কম-বেশি ২৫ ভাগ এলএনজি স্পট মার্কেট বা খোলা বাজার থেকে কিনে থাকে। এ বিবেচনায় জ্বালানি বিভাগও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এলএনজি আমদানিসহ এক হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার ১০টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। কেনাকাটার এ ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে।

এ বছর পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টন এলএনজি ধারণ ক্ষমতার মোট আটটি কার্গো আমদানি করবে। আগামী বছর এর পরিমাণ দাড়াবে ২ মিলিয়ন টন।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এতদিন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হতো।

এবারই প্রথম স্পট মার্কেট থেকে তা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে এখন এলএনজি আমদানি করা যাবে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে ২০১৭ সালে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছে আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়।

এতে মোট ৪৩টি কোম্পানি আগ্রহ দেখায়। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে জ্বালানি বিভাগ। পরে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ বা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি) করতে খসড়া তৈরি করা হয়।

পরে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। সর্বশেষ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডকে কাজ দেওয়া হয়।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতারগ্যাস ও ওটিআই এর কাছ বর্তমানে থেকে প্রায় ৫.৫ থেকে ৬ ডলার দামে এলএনজি আমদানি করছে বাংলাদেশ।

এজন্য মহেশখালিতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। যার সক্ষমতা প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির দাম পড়ছে ৩.৮৩২১ ডলার।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের নানামুখি উন্নয়নের কারণে শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা ক্ষেত্রে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে ক্রমেই।

বিপরীতে গ্যাসের মজুদও ফুরিয়ে আসছে। এই পরিপ্রেক্ষিত্রে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২০১০ সালে সরকার এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়। প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সাল থেকে আনুষ্টানিকভাবে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। এর ফলে কারখানায় নতুন সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনও বাড়ছে।

এদিকে দেশ-বিদেশের একাধিক কোম্পানি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট।

সরকার গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য এলএনজি আমদানির পাশাপাশি দেশে গ্যাস অনুসন্ধ্যান কার্যক্রমও জোরদার করেছে। ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের পাশাপাশি মহেশখালিতে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

এন এল / এস এস