ন্যাভিগেশন মেনু

আশঙ্কাই সত্যি হলো- ভাঙ্গনের পথে এরশাদের জাতীয় পার্টি


যা ধারণা করা হয়েছিল- শেষতক তাই ঘটল। বিতর্কিত সেনাশাসক তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যেই  দেবর জিএম এবং ভাবী রওশন এরশাদের মধ্যে কাজিয়া এখন তুঙ্গে।

এরশাদ তাঁর  জীবিত অবস্থায় ছোটভাই কাদেরকে দলের পরের স্থান ভাইস চেয়ারম্যান করেছিলেন। এরশাদ মৃত্যুর পর  কাদের নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু রওশন এরশাদ জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃতি দেননি।  গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে রওশনসহ জাপার নয়জন নেতার নামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এরফলে এরশাদবিহীন অথৈ জলে তাঁর দল ‘জাতীয় পার্টি (জাপ)। এতদিন চেয়ারম্যান হিসেবে, ‘কড়া হাতে’দলের রাশ ধরেছিলেন তিনি। প্রাক্তন সেনানায়ক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও তাঁর যথেষ্ট ‘প্রভাব ছিল। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে কার্যত দিশেহারা জাপ। দলে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় পার্টি কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়নি। এটি ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রয়েছে।

দলে এরশাদের নেতৃত্বে একটি ধারা রয়েছে। আরেকটি ধারা জিএম কাদেরকে কেন্দ্র করে। এই ধারাই কিন্তু একসময় ভেঙে যেতে পারে। তাঁর আরও বিশ্লেষণ, জাতীয় পার্টি সুবিধাবাদী রাজনীতি করেছে। যার কারণে এক সময় ক্ষমতা ভোগ করেছে তারা। এক সময় ছিটকেও পড়েছে ক্ষমতার বলয় থেকে।

আবার রাজনৈতিক ঘুঁটি সাজিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকেছিল তারা। কিন্তু সবকিছুই ছিল এরশাদকে কেন্দ্র করে। তাই তাঁর অবর্তমানে জাপা দিশাহীন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বর্তমানে জাতীয় পার্টির কোনও জনভিত্তি নেই। ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটবে দল বা গন্তব্য কী তারও ঠিক নেই।

১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করে প্রায় নয় বছর ধরে দেশ শাসন করেন এরশাদ। তারপর ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু তারপরও জাতীয় পার্টি বিস্ময়করভাবে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফিরে আসেন।

রাজনীতিবিদের একাংশের মতে এরশাদকে সুনির্দিষ্ট স্বার্থে ব্যবহার করার জন্যই প্রাসঙ্গিক বানিয়ে রেখেছিল বিএনপি ও আওয়ামি লিগ উভয়েই। ফলে কোনওকালেই জাপ জনতা জনার্দনের কাছের হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে ‘এরশাদ ভিত্তিক’ দলটির বিলুপ্তি সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরো পড়ুন :

জঙ্গিরা ফের মাথাচাড়া দিতে পারে: নাসিম ।

এদিকে দলের এক  বিবৃতিতে বলা হয়, জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকবেন। সম্প্রতি জিএম কাদের নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন, তা আদৌ দলের যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

বিবৃতিতে রওশনের স্বাক্ষর থাকলেও বাকিদের নামের পাশে স্বাক্ষর নেই। অন্য যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন খান, ফখরুল ইমাম, সেলিম ওসমান, লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান, রত্না আমিন হাওলাদার, মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী ও মীর আবদুস সবুর আসুদ। এইচএম এরশাদের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটাতে তৎপর জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এর অংশ হিসেবে তিনি শনিবার ভাবি ও দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় যান।

প্রায় দেড় ঘণ্টা ভাবি-দেবর একান্তে কথা বলেন। দলে ও সংসদে নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ কাটাতে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ সময় তারা একটি ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করেন। ফর্মুলা অনুযায়ী সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এরশাদের স্থলাভিষিক্ত হবেন রওশন।

আর দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরই দায়িত্ব পালন করবেন। এরশাদের দিয়ে যাওয়া লিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জিএম কাদের বৃহস্পতিবার জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

এতে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশন। চেয়ারম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রওশন বলেছিলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমি চিন্তা করছি, চিন্তা করে আমি আমার বক্তব্য দেব।’

এতে নেতৃত্ব প্রশ্নে ভাবি-দেবরের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দ্বন্দ্ব মেটাতে শনিবার বিকাল ৩টার দিকে রওশনের বাসায় যান জিএম কাদের। বাসায় ঢুকে রওশনকে পায়ে ধরে সালাম করেন কাদের।

এ সময় জিএম কাদের বলেন, ‘আপনি আমার মাতৃতুল্য, আমাকে দোয়া করে দিন, ভাইকে হারিয়ে আজ আমি অভিভাবক হারা, ভাই নয়-আমি আসলে আমার পিতাকে হারিয়েছি, এখন আপনিই আমার অভিভাবক, আপনার দিকনির্দেশনা নিয়েই আমি ভাইয়ের রেখে যাওয়া দলকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।’

কাদেরের আবেগঘন কথায় আবেগাপ্লুত হন রওশনও। এ সময় তিনি দেবরের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এরপর দেবরকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে যান রওশন। তারা একসাথে দুপুরের খাবার খান। তখন জিএম কাদেরকে রওশন একটু বকাঝকাও করেন। বলেন, ‘তুমি এভাবে কাজ করছো কেন, এভাবে কী দল চালানো যায়, তুমি তো আমার সাথে পরামর্শ করতে পারতে।

জিএম কাদের তখন মৃদু গলায় বলেন, ‘আপনার সাথে আগে কথা বলা উচিত ছিল।’পরে জিএম কাদের নিজ থেকেই বলেন, ‘ভাইয়ের অবর্তমানে এখন আমাদের পরিবারকে এক থাকতে হবে, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, আমরা এক না থাকলে অন্যরা সুযোগ নেবে।’

রওশনকে তিনি বলেন, ‘আপনি আগেও বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, বিরোধীদলীয় নেতা আপনি হোন-আমার আপত্তি নেই, আমি বাইরে দলের দায়িত্ব পালন করি।’ তখন রওশন বলেন, ‘এটা তো হতে পারে।রওশন-কাদেরের আলোচনার ফাঁকে-ফাঁকে যোগ দেন এরশাদের ছেলে সাদ। মা রওশনের সামনে জিএম কাদেরকে সাদ বলেন, ‘চাচা আমি রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে দাঁড়াতে চাই।

জিএম কাদের তাকে বলেন, ‘এনিয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেব। রওশনের বাসা থেকে বেরিয়ে জিএম কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পার্টির বর্তমান কমূসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। ভাবি আমাকে আশির্বাদ করেছেন, তিনি আমার মাতৃতুল্য ও আমার অভিভাবক।

তার পরামর্শে জাপাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। জাপায় অনৈক্য ও বিভেদের কোনো স্থান নেই। সবাইকে নিয়েই জাপা গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এগিয়ে  নিচ্ছেন।

এসএস

আজকের বাংলাদেশপোস্ট এর রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন