ন্যাভিগেশন মেনু

ইংরেজি নববর্ষে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের শুভেচ্ছা


ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং জাতির উদ্দেশে এক শুভেচ্ছা ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি নতুন বছরে দেশের সমৃদ্ধি ও জনগণের শান্তি কামনা করেন এবং একসাথে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নিচে সম্পূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হলো:

সুপ্রিয় সুধী, আশা করি, সবাই ভালো আছেন। ২০২২ সাল আসছে। আমি বেইজিং থেকে সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

বিদায়ী বছরের অসাধারণ তাত্পর্য রয়েছে। এ সময়ে আমরা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির  (সিপিসি) ও দেশের অনেক যুগান্তকারী ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। দুটি একশ বছরের লক্ষ্যের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আমরা একটি সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ার নতুন যাত্রা শুরু করেছি। চীনা জাতির পুনরুত্থানের সুমহান পথে দৃঢ় পদেএগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, চীনা জনগণ মাঠ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, সামরিক ঘাঁটি, এবং গবেষণালয়সহ সবখানে ব্যস্ত ছিলেন, এবং কঠোর পরিশ্রম করেছেন। বছরজুড়ে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি, অবদান রেখেছি, এবং বিনিময়ে লাভবান হয়েছি। সময়ের ব্যবধানে আমরা একটি গতিশীল ও স্থিতিশীল চীনকে দেখেছি, যে চীনের রয়েছে সম্মানীত ও বন্ধুভাবাপন্ন বিশাল এক জনগোষ্ঠী, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির সব ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে।

গত ১ জুলাই, আমরা চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উদযাপন করেছি। আমি থিয়ান আন মেন ভবনে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের চাঙ্গা প্রক্রিয়া অনুভব করেছি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বিলিয়নের উপর চীনা জনগণকে নিয়ে কঠিন সময় এবং নানা সংকট অতিক্রম করে শত বছরের পুরনো সিপিসি’র মহান সাফল্য অর্জন করেছে। শুরুর কথা ভুলে না গিয়ে আগামীতে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত হবে। আমরা কেবল অবিরাম পরিশ্রম করে ইতিহাস, যুগ ও জনগণের ঋণ পরিশোধ করতে পারবো।

সিপিসি’র উনবিংশ জাতীয় গণকংগ্রেসের ষষ্ঠ পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তিনটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়। শত বছরের সাফল্যে সবাই উত্সাহিত হয়, শত বছরের অভিজ্ঞতা সবার জন্য শিক্ষণীয়। আমি এক সময় মহামান্য মাও সেতুং ও মাননীয় হুয়াং ইয়ানপেই’র ‘গুহা বাড়ির গল্প’ আপনাদেরকে শুনিয়েছি। আমরা নিজেদের মাঝে বিপ্লব সাধন করলে ইতিহাসের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। চীনা জাতির পুনরুত্থানসহজ কাজ নয়, মুখে বললেই তা বাস্তবায়িত হবে না, এমন কি স্বল্প সময়ের মধ্যেও তা বাস্তবায়িত হবে না। তাই আমাদের উচিত সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি নিয়ে নিরাপত্তা সংকট সম্পর্কে সচেতন থেকে কৌশলগত প্রতিজ্ঞা ও ধৈর্য্য সহকারে বড় কাজের পাশাপাশি ছোট কাজগুলো করতে থাকা।

বড় দেশ হিসেবে চীনকে ভারী দায়িত্ব বহন করতে হয়। হাজার হাজার ইস্যু মূলত হাজার হাজার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি বেশ কয়েকটি স্থানে গিয়েছি এবং অনেক খোঁজখবর নিয়েছি, তাতে আমি অভিভূত হয়েছি। প্রতিবার যখনই আমি জনসাধারণের বাড়িতে যাই, তখনই আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, আর কোনো সমস্যা আছে কি-না? তাদের সবকথা আমার মনে আছে।

জনগণ যে বিষয়ে চিন্তা করেন, সেটা আমি মনে রাখি।  জনগণ যেটা প্রত্যাশা করেন, সেটা আমি বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে যাই। আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি। দারিদ্র্যের বিষয়ে আমার সহানুভূতি রয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের প্রচেষ্টার ফলে, আগেকার দরিদ্র মানুষেরা আজ পেট ভরে খেতে পারছেন এবং মোটা কাপড় পরতে পারছেন। তাদের সন্তানরা স্কুলে লেখাপড়া করতে, এবং বাড়িঘরে থাকতে পারছেন। জনগণকে চিকিত্সা বীমার আওতায় আনা হয়েছে। সার্বিক সচ্ছল সমাজ ও দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে জনগণকে আমাদের পার্টির দেওয়া সাফল্য, এটি বিশ্বকে দেওয়া চীনা অবদান। সবার আরও ভালো জীবন নিশ্চিত করতে হলে বর্তমান সাফল্যের পর থেমে যাওয়া যাবেনা, আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

হুয়াংহ্য নদীর শান্তি চীনা জাতির সকলের সহস্রাধিক বছরের প্রত্যাশা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি হুয়াংহ্য নদীর আশে পাশের ৯টি প্রদেশ ও অঞ্চল পরিদর্শন করেছি। চীনের প্রধান নদী ইয়াংজি, হুয়াংহ্য, ছিংহাই হ্রদ, ইয়ালুজাবু, দক্ষিণাঞ্চলের জল উত্তরাঞ্চলে তুলে নেওয়া প্রকল্প, সাইহান পাবন্য খামারের ‘সবুজম্যাপ’, ইয়ুননান প্রদেশের হাতির স্থানান্তর, এবং তিব্বতী ছাগলের স্থানান্তরসহ সবখানেই চীনা জাতির পরিবেশ,জলবায়ু এবং জীববৈচিত্রের প্রতি ভালোবাসা এবং প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন হয়েছে। মানুষ প্রকৃতির ক্ষতি না করলে, প্রকৃতি ও মানুষের উপকার করে।

বিদায়ী বছর ভুলে না যাওয়া চীনা কণ্ঠ, চীনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ও চীনের গল্পের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একই সময়ে ‘সিপিসি তৈরি হও, শক্তিশালী দেশ গঠনে আমি আছি’ শীর্ষক নবীনদের প্রতিশ্রুতি, চীনের জন্য পরিস্কার ভালোবাসা শীর্ষক প্রেমের বার্তা, মঙ্গলগ্রহে ‘জুরুং’ নামের উপগ্রহের অনুসন্ধান, ‘সিহ্য’ যানের সৌরজগতে অনুসন্ধান এবং ‘থিয়ানহ্য’ যানের মহাকাশে অনুসন্ধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। খেলোয়াড়গণ উদ্যমী হয়ে প্রথম সারিতে স্থান লাভের প্রয়াস চালাচ্ছে। নিখিল চীনে নানা স্তরে মহামারি প্রতিরোধে দৃঢ় প্রচেষ্টা চলছে। দুর্গতদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। গণমুক্তি ফৌজের নির্দেশক, সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা শক্তিশালী বাহিনী গঠন করতে এবং দেশ-পরিবার রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রয়েছে। অনেক সাধারণ বীর পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব নতুন যুগে চীনের এগিয়ে চলার তরঙ্গে পরিণত হয়েছে।

আমাদের দেশ হংকং ও ম্যাকাও-এর সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপকরে। কেবল একযোগে চেষ্টা চালালেই ‘একদেশ, দুইব্যবস্থা’কে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। দেশের সম্পূর্ণ ঐক্য বাস্তবায়ন করা তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মানুষদের অভিন্ন প্রত্যাশা। চীনা জাতির সকল ছেলেমেয়ে হাতে হাত রেখে জাতির সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে বলে আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি।

আমি বিদেশি নেতাদের ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করি, ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা বেশ কয়েকবার চীন ও সারা বিশ্বে মহামারি প্রতিরোধে চীনা অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এখন পর্যন্ত চীন ১২০টির ও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২০০ কোটি করোনা টিকা সরবরাহ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কেবল একই নৌকা বেয়ে চললে এবং সুসংহত হয়ে সহযোগিতা চালালে মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গঠনের নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারবে।

আর মাত্র একমাস পর বেইজিং শীতকালীন ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক উদ্বোধন হবে। তুষার ও বরফ ক্রীড়ায় অধিক থেকে অধিকতর মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অলিম্পিকের লক্ষ্য। আমরা বিশ্বকে একটি সফল অলিম্পিক আসর উপহার দেব। সারা বিশ্ব চীনের কাছে এই প্রত্যাশা করছে; চীনও পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।

নববর্ষের ঘড়ির কাটা বাজতে যাচ্ছে। আমাদের তিন জন নভোচারী বর্তমানে বিশাল মহাকাশে কাজ করছেন। বিদেশে প্রবাসী চীনারাও পরিশ্রম করছেন। বিদেশে দূতাবাস ও কন্সুলার, চীনা প্রতিষ্ঠান ও চীনা শিক্ষার্থীরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অনেক স্বপ্ন অনুরাগী এখনও পরিশ্রম করছেন এবং অবদান রাখছেন। সবাই কষ্ট করছেন। আমি সবাইকে নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

আমরা একসাথে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবো। নতুন বছরে আমি দেশের সমৃদ্ধি ও জনগণের শান্তি কামনা করছি। সূত্র: সিএমজি