ন্যাভিগেশন মেনু

ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে চীনা প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছাবার্তা


ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং চায়না মিডিয়া গ্রুপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক  শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের ভাষণটি  এখানে তুলে ধরা হলো:

কমরেড, বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ: আশা করি সবাই ভাল আছেন। ২০২৩ সাল আসন্ন। আমি বেইজিং থেকে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। ২০২২ সালে আমরা সফলভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বিংশ জাতীয় কংগ্রেস আয়োজন করেছি, সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিক চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবন জোরদার করবো। এখন নতুন যুগে পরিশ্রমের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে।

চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক সত্তা। চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে। এ বছর চীনেরজিডিপি ১২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের মুখে চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণ টানা ১৯ বছর ধরে অটুট রয়েছে। চীনা মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা রয়েছে। আমরা দারিদ্র্যমোচনের সাফল্য জোরদার করেছি এবং সার্বিকভাবে গ্রামীণ পুনরুত্থান পরিকল্পনা চালু করেছি। আমরা কর হ্রাসসহ ধারাবাহিক নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধান করছি। বিশেষ করে, জনগণের জরুরি ও প্রত্যাশিত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়লেচীন বরাবরই জনগণ ও জীবনের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা বিজ্ঞানসম্মত ও মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছি এবং বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সমন্বয় করে সর্বাধিক মাত্রায় জনজীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষা করেছি। অসংখ্য ক্যাডার ও নাগরিক, বিশেষ করে চিকিত্সক ও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা সাহসের সঙ্গেঅভূতপূর্ব কঠিন পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধ করেছে। যা সহজ কাজছিল না। বর্তমানে মহামারী প্রতিরোধের নতুন পর্যায়ে এসেছে। তবে আরো কঠিনতা দেখা যাচ্ছে। সবাইকে দৃঢ়পরিশ্রম করতে হবে। ভোর আমাদের সামনে। সবাই আরো পরিশ্রম করে, জোর দিয়ে সাফল্য অর্জন করবে। একতাই হলো সাফল্য।

২০২২ সালে কমরেড চিয়াং চ্য মিন আমাদের ছেড়ে গেছেন। আমরা গভীরভাবে তাঁর মহা সাফল্য ও মহান চেতনা স্মরণ করি। আমাদেরকে তাঁর অন্তিম ইচ্ছা লালন করতে হবে এবং নতুন যুগে চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক চেতনা সামনে এগিয়ে নিতে হবে।

ইতিহাসের দীর্ঘ নদীরঢেউ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চীনা মানুষের অব্যাহত পরিশ্রমের হাত ধরে বর্তমান চীন গড়ে উঠেছে।

আজকের চীন ধারাবাহিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমস সফলভাবে আয়োজন করা হয়েছে। খেলোয়াড়রা গর্বিত সাফল্য অর্জন করেছে। শেনচৌ ১৩, ১৪, ১৫ নং মহাকাশযান মহাকাশে পৌঁছে গেছে। বিরাটচীনা মহাকাশ স্টেশন তৈরি হয়েছে। আমাদের মহাকাশের বাসস্থান গঠন করা হয়েছে। এ বছর চীনা মুক্তি ফৌজের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী। ব্যাপক সেনারা শক্তিশালী বাহিনী গঠনেরজন্য পরিশ্রম করছেন। তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী চালু হয়েছে, প্রথম সি৯১৯ বড় বিমান হস্তান্তর হয়েছে, পাইহ্যথান জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র সর্বোচ্চ উত্পাদন শুরু করেছে। এসব সাফল্য অসংখ্য চীনা মানুষের পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে। আর,কিছু কিছু অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দিয়েই মশাল জ্বালানো যায়। এটাই হলো চীনা শক্তি।

আজকের চীন প্রানশক্তিতে পরিপূর্ণ চীন। বিভিন্ন অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক এলাকা এবং হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা আলাদাভাবে উন্নত হচ্ছে। পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলে উন্নয়ন দ্রুততর হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পুনরুজ্জীবন শুরু হয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। চীনা অর্থনীতি অস্থিতিশীল, সুপ্তশক্তি বিরাট, চালিকাশক্তি প্রচুর, স্থায়ী উন্নয়নের পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তন হয় নি। আমাদের আস্থা জোরদার করে স্থিতিশীলভাবে উন্নত হতে হবে, এতে অবশ্যই নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যাবে। এ বছর আমি হংকংয়ে গিয়েছিলাম। হংকংয়ের প্রশাসন থেকে সমৃদ্ধ পরিবর্তন দেখে আমি গভীর আনন্দিত। দৃঢ়ভাবে ‘এক দেশ, দুই সামাজিক ব্যবস্থা’ বাস্তবায়ন করলে হংকং ও ম্যাকাওয়ে অবশ্যই স্থায়ী সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আসবে।

বর্তমান চীন জাতীয় চেতনা বজায় রাখা একটি দেশ। এ বছর সংঘটিত ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, পাহাড়ে আগুনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কিছু দুর্ঘটনা আমাদের কষ্ট দিয়েছে। তবে,অন্যকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়ার বিষয় আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বীরদেরকে আমরা আজীবনমনে রাখব। যখন নতুন বছর আসে, তখনই চীনা জাতির হাজার বছরের উত্তরাধিকারের চেতনা মনে পড়ে। যা আমাদেরকে সামনে অগ্রসরের সাহস দেয়।

আজকের চীন ঘনিষ্ঠভাবে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের চীন। এ বছর আমার বেইজিংয়ে অনেক নতুন ও পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছি এবং বিদেশ সফর করেছি। আমি নানা দেশে চীনা প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেছি। শত বছরে পরিবর্তনের গতি দ্রুত হয়ে উঠছে। বিশ্ব এখন অশান্ত। আমরা বরাবরই শান্তি ও উন্নয়নকে মূল্যায়ন করি। আমরা বন্ধু ও অংশীদারদের মূল্যায়ন করি এবং দৃঢ়ভাবে ইতিহাসের সঠিক পথে ও মানবসভ্যতার অগ্রগতির দিকে থাকি। আমরা মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য চীনা বুদ্ধি ও চীনা পরিকল্পনার যোগান দেই।

সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের পর আমি বয়স্ক কমরেডদের সঙ্গে ইয়ান’আনে গিয়েছিলাম। সেখানে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি মানবজাতির দুর্লভ কঠিনতাকে পরাজিত করার ইতিহাস পুনরায় অনুভব করেছি এবং আগের প্রজন্মের সিপিসি’র সদস্যদের আত্মার শক্তি অনুভব করেছি। আমি সবসময় বলি, কঠিন ও চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে গড়ে তুলেছে। সিপিসি শত বছরের সাহস দিয়ে পরিশ্রম করে চীনের আরো সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ে তুলেছে। আগামীকাল চীন পরিশ্রমের মাধ্যমে অবশ্যই বিস্ময় সৃষ্টি করবে। চীনের প্রাচীন বিখ্যাত কবি সু শি বলেছিলেন, সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে হবে এবং সবচেয়ে মহান লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। কেবল মাত্র দীর্ঘ পথেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। কেবলমাত্র কঠিন বিষয়েই সফলতা থাকে। আমাদেরকে সাহস ওধৈর্যের সঙ্গে পরিশ্রম করতে হবে।এক ধাপ এক ধাপ করে হাজার কিলোমিটার যাওয়া যায়। অবশ্যই মহান লক্ষ্য সুন্দর বাস্তবে পরিণত হবে।

আগামীকাল চীনের শক্তি একতা থেকে আসবে। বিশাল চীনে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন চাহিদা আছে। একই ইস্যুতে বিভিন্ন মত রয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। যোগাযোগ ও পরামর্শের মাধ্যমে একমত হতে হবে। ১৪০ কোটি চীনা মানুষ একই লক্ষ্যে একসঙ্গে পরিশ্রম করলে অবশ্যই কঠিন পথ পার হওয়া যাবে। দু’তীরের বাসিন্দারা একই পরিবারের সদস্য। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, দু’তীরের স্বদেশীরা একসঙ্গে চীনা জাতির স্থায়ী সুখ গড়ে তুলবেন।

যুবকরা আগামী চীনের আশা। যুবকদের উত্থান হলে দেশ সমৃদ্ধ হবে। চীনের উন্নয়ন যুবকদের ওপর নির্ভর করে। যুবকরা প্রাণপ্রাচুর্যে পূর্ণ। যুবকদের বুক ভরা আশা আছে। অসংখ্য যুবকের প্রণয়বন্ধনও পরিশ্রম যুগ ও সময়কে সফল করে তুলবে।

এখন আরো বেশি মানুষ তাদের কাজে ব্যস্ত।নতুন বছরের ঘণ্টা বাজাবে। চলুন, আমরা ভবিষ্যতের সুন্দর আশা দিয়ে একসঙ্গে ২০২৩ সালের প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানাই। মাতৃভূমির সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা এবং বিশ্বের শান্তি, সৌন্দর্য, ও সুখ কামনা করি। সবাইকে আবারও নববর্ষের শুভেচ্ছা। সবার আশা পূরণ হোক! ধন্যবাদ।