ন্যাভিগেশন মেনু

ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?


ইন্টারনেট কি এবং ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে? আপনি যদি এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য এখানে এসে থাকেন, তাহলে আপনি সঠিক যায়গায় এসেছেন। আজ আমরা এ সমম্পের্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক। 

“ইন্টারনেট” বর্তমানে এই শব্দটি আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। আমাদের জীবনে এর ব্যবহার এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে, কয়েক মিনিটের জন্য  ইন্টারনেট বন্ধ খাকলেও আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। বর্তমানে অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার এর অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণনা করতে শুরু করেছেন। 

ইন্টারনেট কী?

ইন্টারনেট হলো মূলত  আধুনিক টেলিযোগাযোগের একটি মাধ্যম। যার দ্বারা সমস্ত পৃথিবীর ডিজিটাল ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার, স্মার্টওয়াচ একে অপরের সাথে কানেক্ট হতে পারে। সুতরাং আমরা সহজ কথায় বলতে পারি সারা  বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অগণিত কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস গুলি যে অদৃশ্য জালের মাধ্যমে এক অপরের সাথে জড়িত- সেটিই হলো ইন্টারনেট বা গ্লোবাল নেট।  

ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে

আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি, ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত অদৃশ্য একটি জাল, যার মাধ্যমে ডিভাইসগুলো নিজেদের মধ্যকার আন্ত-সংযোগ বজায় রাখে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন ডেটা এক ডিভাইস অন্য ডিভাইসে প্রেরণ করার জন্য ডিভাইসগুলো ডেটাকে ইলেকট্রিক সংকেতে পরিণত করে এবং একটি নির্দিষ্ট ডেটাকে অনেকগুলো প্যাকেটে পরিণত করে। এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেট ডেটাগুলোকে আইপি(ইন্টারনেট প্রটোকল) এবং ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মধ্যমে একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে প্রেরণ করে। অর্থাৎ প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে প্রেরণকৃত ডেটাকে মেসেজ বলা হয়।

ইন্টারনেট এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পৃথিবীর বয়স কিংবা মানব সভ্যতার বয়স বিবেচনা করলে ইন্টারনেট একটি নতুন আবিষ্কার। ১৯৫৭ সালে সোভিযেত ইউনিয়ন মহাকাষে স্ফোটোনিক-1 স্যাটালাইট লঞ্চ করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ‍যুক্তরাষ্ট্রের উপর স্নায়ু চাপ বাড়তে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৮ সালে অনেকগুলো এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে। এই এজেন্সিগুলোর মধ্যে অরপা ছিলো অন্যতম গুরোত্বপূর্ণ। এই অরপানেট এর হাত ধরেই ইন্টারনেট আবিষ্কৃত হয়। 

অপরানেট ছিলো মূলত যুক্তারাষ্ট্রের ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট এর কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ক রিসার্চ প্রজেক্ট। ডিফেন্স, গবেষক ও অন্যান্য টিমের মধ্যে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে অরপানেট কাজ করেছিলো। অরপানেট এর স্বপ্নদ্রষ্ট্রা ছিলেন জে.সি.আর. লিকলাইডার । সে সেময় তিনি অরপানেটের ডিরেক্টর ছিলেন। যদিও তিনি আরপা ছেড়ে চলে যান কিন্তু  তাঁর চিন্তাভাবনা ও দূরদর্শিতা আরপানেটের সৃষ্টির পেছনে মূল চালিকাশক্তির ছিলো । যুক্তরাষ্ট্র কতৃক ১৯৭৪ থেকে ১৯৮১ সালের মাঝামাঝি সময়ে অরপাকে ধীরে ধীরে  জনসম্মুখে আনা হয়, যাতে এটিকে কমার্সিয়ালাইজ করতে সুবিধা হয়। ১৯৭৪ সালে অরপানেট নিউম্যান ও বেরানেক এর হাতে ধরে “টেলনেট” এর রুপ পায়৷ ১৯৮১ সাল থেকে  আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা বাড়তে থাকে, একই বছরে এর হোস্ট সংখ্যা ২১৩ হয় এবং প্রতি ২০ দিনে একটি করে নতুন হোস্ট যুক্ত হতে থাকে।

 “ইন্টারনেট” শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয় ১৯৮২ সালে৷ ১৯৮৪ সালে অরপানেট হোস্ট সংখ্যা ১০০০ এ উন্নিত হয় এবং  ১৯৮৭ সালে ১০০০০ ও ১৯৯০ সালে ৩০০০০ এর মাইলফলক অতিক্রম করে।

১৯৮৮ সাল থেকেই ইন্টারনেট যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠে। এবং এ বছরেই মানুষ প্রথম হ্যাকিং এর সম্মোখিন হন। ১৯৮৮ সালের ১লা নভেম্বর তখানকার 60000 হোস্টের মধ্য থেকে 6000 হোস্টের যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয় “ইন্টারনেট ওয়ার্ম” নামের একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ব্যবহার করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই তৎক্ষনাৎ ইমাজেন্সি টিম গঠন করা হয় এবং এর থেকে পরিত্রানের পথ খোঁজা শুরু হয়। 

এভাবেই বিভিন্ন চড়াই উতরাই পাড় করে ইন্টারনেট আজকের এই অবস্থানে এসছে। এবং বিশ্বের সকল মানুষকে একটি সুন্দর শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছে। 

ইন্টারনেট এর জনক 

ইন্টারনেট এর জনক হিসেবে স্বীকৃত ভিনটন গ্রে কার্ফ (Vinton Gray Cerf)। তিনি টিসিপি/আইপি এর সহ-উদ্ভাবক ছিলেন। তিনি যথন ডারপা (DARPA) তে কর্মরত ছিলেন, তখন  তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। আইপি এবং টিসিপি উদ্ভাবনের জন্যই তাকে ইন্টারনেটের জনক এর মর্জাদায় অধিষ্টিত করা হয়েছে।

ইন্টারনেট অভিশাপ?  নাকি আশীর্বাদ?

ইন্টারনেট কোনোপ্রকার সন্দেহ ছাড়াই মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। কিন্তু একটি কুচক্রীমহল মানুষের ক্ষতি সাধনের দিকটি বেশি বিবেচনা করে থাকে।  তাদের এ ধরনের ক্ষতিকর চিন্তা ভাবনার জন্যই অনলাইন যগতে বিভিন্ন নামের হ্যাকার গোষ্ঠি গড়ে ওঠেছে। নিম্নে আমরা ইন্টারনেটের সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো। 

ইন্টারনেটের উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা-

  • আপনার কল্পনা সীমার মধ্যে যা কিছু আছে, সকল তথ্যই আপনি ইন্টারনেটে পেয়ে যাবের। 

  • ইন্টারনেটে যুক্ত থাকা শক্তিশালী কিছু সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য সবসময় আপনার হাতের নাগালে থাকে। 

  • ঘরে বসেই বিভিন্ন রকমের তথ্য নিয়ে রিসার্চ করা যায়।

  • ইন্টারনেট পৃথিবীর সকল মানুষকে একটি প্লাটফর্মে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে পারস্পরিক মেল-বন্ধন অনকে সহজ হয়েছে। 

  • ইন্টারনেট বিশ্বটাকে একটি গ্রামে পরিণত করেছে।

  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও ও অডিও মেসেজিং, কলিং ফিচারযুক্ত প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। 

  • ঘরে বসেই যেকোন পণ্যের অর্ডার করা যায়। 

  • যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে স্থানান্তরের সুযোগ করে রয়েছে। 

  • ই-লার্নিং এর মাধ্যমে জ্ঞান চর্চার এক বিশাল সুযোগ রয়েছে। 

ইন্টারনেটের কিছু অসুবিধা-

  • যেকেউ মনগড়া যেকোনো কিছু ইন্টারনেটে আপলোড করতে পারে বলে ইন্টারনেটে অগনিত ভূল তথ্যে ভরা। 

  • ইন্টারনেটের অতি-আসক্তির জন্য অনেক মানুষের তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের দূরত্বের সৃষ্ঠি হয়। 

  • ইন্টারনেটের ফলে পর্ণগ্রাফির মতো যঘন্য অপরাধগুলো সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। 

  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিছু অসাধু মানুষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

ইন্টারনেটে মানব জাতির জন্য একটি আর্শীবাদ। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবন অনকে আরামদায়ক হয়েছে। পৃথিবীর এ ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির পেছনের মূল চালিকা শক্তি হলো ইন্টারনেট। 


আরো পড়ুন : 

কম্পিউটার কি?

মহাকাশে চীনা নভোচারীদের জীবন