ন্যাভিগেশন মেনু

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর: ইলিশ নিয়ে গবেষণা


পদ্মা–মেঘনার সু-স্বাদু রুপালি ইলিশের জন্য খ্যাত চাঁদপুরকে এখন বলা হয় ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’। এ চাঁদপুরেই বছরের পর বছর ইলিশের বংশ, প্রজাতি, প্রজনন, বিচরণ, মজুতসহ তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে নানা ধরনের গবেষণা। প্রায় ৩৩ বছরের গবেষণার সফলতায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরে খোঁজ নিয়ে গবেষণার এমনই তথ্য পাওয়া যায়।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের তথ্যমতে,  ‘১৯৮৬-৮৭ সালে শুরু  হয় দেশে ইলিশ নিয়ে প্রথম গবেষণা। সে সময় ইলিশের পরিচয়, তার প্রজাতি, বসবাস ও চলাচল নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে ইলিশের প্রজনন নিয়ে কাজ শুরু করেন তৎকালীন বিজ্ঞানী ও বর্তমান মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আনিসুর রহমানসহ চারজন। বর্তমানে ১৪ জন বিজ্ঞানী ইলিশ নিয়ে দু’ধরনের গবেষণার কর্মপদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রথমটি ইলিশের মজুত নিরূপণ ও দ্বিতীয়টি ইলিশের প্রজনন বা বংশবিস্তার নিয়ে।’

ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে ইলিশ নিয়ে সাগরে ও নদ–-নদীতে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এ জন্য অধিকাংশ সময় আমাদের সাগর বা নদীতে থাকতে হয়। পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তর ও ইনস্টিটিউটেও এই ইলিশ নিয়ে সারাবছরই নানা ধরনের কাজ চলছে। আমাদের এ গবেষণায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছেন। আজ আমাদের গবেষণার ফলে সরকারও ইলিশ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।’

তিনি জানান, ‘২০০০ সাল পর্যন্ত গবেষণায় প্রচলিত চলমান পদ্ধতির কারণে ইলিশ তেমন একটা বাড়েনি। তখন সারাবছর ইলিশের উৎপাদন ছিল এক থেকে দেড় লাখ টন। ২০০৩-০৪ সালে উন্নত ইলিশ ব্যবস্থাপনার কৌশল গ্রহণ করে জাটকা সংরক্ষণ পদ্ধতির ওপর কাজ হলে আস্তে আস্তে ইলিশ উৎপাদনও বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে নদী ও সাগরে জাটকা সংরক্ষণের পাশাপাশি মা ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম ঘোষণা ও প্রজনন সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এতে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়তে থাকে।’

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, ‘ইলিশের তিনটি প্রজাতি রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে পদ্মার রুপালি ইলিশ, যেটি আকারে বড় এবং স্বাদে–গন্ধেও অতুলনীয়। যার কারণে এর চাহিদা দেশ–বিদেশে বেশি। অন্য দুটি জাতের মধ্যে একটি চন্দনা ইলিশ, অন্যটি গুর্তা ইলিশ। এগুলো আকারে ছোট এবং স্বাদও কম। এদের অবস্থান সাগরেই বেশি। যদিও বর্তমান বাজারে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী এসব ইলিশ পদ্মার ইলিশের সঙ্গে মিশিয়ে বেচাকেনা করছেন।’

বর্তমানে শূধুমাত্র চাঁদপুরের ১২০ কি.মি নৌ-সীমানায় প্রতিবছর গড়ে ৪০-৪৫ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ আহরণ হয়ে থাকে। চলতি বছর সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিকটন ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছে  ৫.১৭ লাখ মেট্রিকটন ।


এজি/এমআইআর/এডিবি