বাংলাদেশিরা এখন ছুটি-ছাটা পেলেই ভারত ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েন। কেননা স্বল্প খরচে বিদেশ ভ্রমণে এমন সুবিধা আর কোথাও মেলে না। অবশ্য বাংলাদেশিদের সিংহভাগ মানুষ আপন শহর হিসেবে কলকাতায় ভ্রমণকে অগ্রাধিকার দেন।
কলকাতাকে তাঁরা বিদেশ মনে করেন না। চারশো বছরের পুরানো হেরিটেজ শহর কলকাতার অনেক কিছু দেখার আছে। তাইতো ইদুল ফিতর বা কুরবানি ইদ এলে সপ্তাহ খানেক লম্বা ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুরা কলকাতা বা আগরতলা ছোটেন।
এবার ইদে তিনদিন তার আগে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন, ইদ ছুটি শেষে ফের সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন, মাঝে ১৪ আগস্ট খোলা বাদে পরের দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ছুটির পরেই দুদিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত টানা নয় দিনের ছুটি পেয়ে ভারতমুখী বাংলাদেশিদের ঢল নেমে যায় পাসপোর্ট যাত্রীদের।
কেউ ভ্রমণে, কেউ আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ আবার কেউ কেউ ছোট-খাট চিকিৎসাটাও সেরে নিলেন এই ফাকে । ভারতমুখী যাত্রীরা বলছেন, জরুরি প্রয়োজন থাকলেও এতদিন ছুটি না মেলায় তারা যেতে পারেননি।
এখন ইদ, শোক দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ নয় দিনের লম্বা সময় পাওয়ায় পরিবার নিয়ে তারা ভারতে এসেছেন। অর্থাৎ রথ দেখা ও কলা বেচা আর কি। এমনই এক পাসপোর্ট যাত্রী মস্তফা জানান, তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
বেশ কিছুদিন ধরে ভারতে যেতে আগ্রহী। এবার ইদে কয়েকদিনের ছুটি পাওয়ায় এখন ভারতে বেড়াতে এসেছেন। কলকাতায় আসা এক যাত্রী বাবুল রায় বলেন, আমি একটি কলেজে শিক্ষকতা করি।
পরিবারের কয়েকজনকে ভাল ডাক্তার দেখানো দরকার। এতদিন ছুটি না পাওয়ায় যেতে পারিনি। এখন লম্বা ছুটি পেয়ে কলকাতা এলাম ।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি সরকার বলেন, ইদের ছুটির মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও কাস্টমস ইমিগ্রেশনের সব শাখা খোলা রয়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে এখন যাত্রীদের যাতায়াত বেশি।
তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন এজন্য প্রয়োজনীয় জনবলও রয়েছে। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের (ওসি) আবুল বাশার বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন সাধারণত ৪/৫ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে যান।
প্রতিদিন ঢাকা থেকে শতাধিক বাস ছাড়াও এখন প্রতিদিন ঢাকা থেকে নয়’শ যাত্রী নিয়ে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ সকালেই বেনাপোল সীমান্তে আসে। ইদের আগের দিন ১১-১৩ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন ১৮ হাজার ১৮৬ জন যাত্রী।
এদের মধ্যে বাংলাদেশি যাত্রী রয়েছে ১৬ হাজার ৯১০ জন, ভারতীয় এক হাজার ২৬৩ জন ও অনান্য দেশের রয়েছে ১৩ জন।
এবার আগারতলা ও অসম যেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতগামী যাত্রীদের ঢল নেমেছে।
গত কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত এ চেকপোস্ট দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি যাত্রী ভারত যাচ্ছেন। যাত্রীদের এ চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থল শুল্ক স্টেশন ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে।
আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেপোস্টেও একই চিত্র। সেখানেও যাত্রীদের দীর্ঘসময় লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আখাউড়া আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ভারতগামী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
যাত্রী সংখ্যার তুলনায় স্থল শুল্ক স্টেশন ও ইমিগ্রেশন পুলিশ কার্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় শত শত যাত্রীকে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
অতিরিক্ত যাত্রী চাপের কারণে এখন দুই/তিন ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেকেই আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে ভারতে না গিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যাত্রীদের চাপের কারণে দম ফেলারও সুযোগ পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
আখাউড়ায় লাইন পেরিয়ে আগরতলা ঢুকে সেখানেও আবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। ধীমান রায় নামে এক যাত্রী জানান, পরিবার নিয়ে আগরতলায় যাচ্ছি।
লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট হচ্ছে। এরপরও যেতে হবে। কারণ হোটেল আগে থেকেই বুকিং করে রাখা হয়েছে। আমিরজাদা চৌধুরী নামে এক যাত্রী জানান, ছুটিতে ভেবেছিলাম আগরতলা ঘুরে আসবো।
দুপুরে চেকপোস্টে গিয়ে দেখি যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভারত না গিয়েই বাড়ি ফিরে এসেছি। আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ জানিয়েছে, এমনিতে প্রতিদিন দুই দেশের চারশ থেকে পাঁচশ যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে।
তবে ইদ-পূজা এলে যাত্রীদের এ সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বুধবার এক হাজার ৮১৭ জন এবং বৃহস্পতিবার এক হাজার ৮৯৬ জন যাত্রী ভারতে গিয়েছেন।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেক পোস্টের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হামিদ জানান, আমিসহ চারজন ইমিগ্রেশনে কাজ করছি। চারজনে মিলে যাত্রীদের চাপ সামরাতে পারছি না। ইদের আগে থেকে যাত্রীদের যে স্রোত শুরু হয়েছে সেটি এখনও থামেনি।
এস এস