ন্যাভিগেশন মেনু

ঈশ্বরদীতে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক হত্যার রহস্য উদঘাটন, আটক ৪


পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুরের আওতাপাড়ার রহিমপুর গ্রামে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলন হোসেন (৩০) হত্যার রহস্য তিনদিনের মাথায়  উদঘাটন করেছে পুলিশ। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটকদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম ও শ্রী নিরঞ্জন চন্দ্র দাস আদালতে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আটক আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুন) দুপুর ১২টায় ঈশ্বরদী থানা কার্যালয়ের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।

সংবাদ সম্মেলনে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) ফিরোজ কবির, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন আসামি জাহিদুলের বাড়ি থেকে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলন হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহ করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনে গ্রেপ্তার করে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মাসুদ আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) ফিরোজ করিরের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম, এসআই (নি:) রবিউল ইসরাম, এসআই (নি:) নাসির উদ্দিসসহ পুলিশের একটি দল হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ শুরু করে।

এসপি জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলনের সঙ্গে চুয়াডাঙা জেলার দর্শনা এলাকায় ভিক্ষা করা অবস্থায় জাহিদুলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে জাহিদুল তার ভ্যানে করে মিলনকে দিয়ে ভিক্ষা করাতো। পরে জাহিদুল মাসিক ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভিক্ষুক মিলনকে দর্শনা থেকে পাবনার চাটমোহরে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এই বাড়িতে নিরঞ্জন নামে আরও একজন ভাড়া থাকতো এবং তাকেও ভিক্ষুকের সঙ্গে কাজে লাগাতো জাহিদুল।

তিনি জানান, দুই মাস ভিক্ষা করার পর জাহিদুলের কাছে ভিক্ষুক মিলনের পাওনা দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। মিলন টাকা দাবি করলে ৫ হাজার দিয়ে বাকী টাকা দিতে কালক্ষেপন করে জাহিদুল। এতে জাহিদুল ও মিলনের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়।

এসপি আরও জানান, এরপরই জাহিদুল ও তার স্ত্রী সামেলা, ছেলে শাকিল ও নিরঞ্জন ভিক্ষুক মিলনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ জুন রাত আনুমানিক ১টায় জাহিদুলের ছেলে শাকিলের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা ভিক্ষুক মিলনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। পরে জাহিদুল, নিরঞ্জন মিলে গলাটিপে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করলে মিলন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে ভ্যানের ওপর শুইয়ে মিলনকে বিদ্যুৎস্পষ্টে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরে ভ্যানের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় ভিক্ষুক মিলন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে বলে প্রচার করে। এ অবস্থায় ২৪ জুন সকালে মিলনের লাশ ভ্যানে করে চাটমোহর বাজার থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুরের আওতাপাড়ার রহিমপুরে আসামি জাহিদুলের বাড়িতে নিয়ে আসে। লাশ নিয়ে আসার সময় ভ্যানের সঙ্গে ছিলেন আসামি নিরঞ্জন ও সামেলা খাতুন। তাদের লাশটি পুতে গুম করার উদ্দেশ্য ছিল বলে এসপি জানান।

পরে খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। ২৭ জুন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক জাহিদুল ও নিরঞ্জন দোষ স্বীকার করে পাবনা আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন।

এসপি মোহাম্মদ মহিবুল খান বলেন, মামলাটির তদন্ত শেষ করে দ্রুততম সময়ে আদালতে অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

জেএইচ/সিবি/এডিবি/