ন্যাভিগেশন মেনু

পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার ক্ষমা চাইতে ঢাকায় হাই কমিশনে স্মারকলিপি প্রদান


১৪ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদতে বাংলাদেশের কূলাঙ্গার রাজাকার, আলবদর, আল শামস সদস্যরা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এই নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।

পাকবাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময় বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে পাকিস্তানিরা তাদের পরাজয় সম্পর্কে আঁচ করতে পারে।

মুক্তিবাহিনী যখন বীরবিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ একের পর এক উড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন দিশাহারা হয়ে পড়ে বর্বর পাকিস্তানিরা।

পরাজয়ের চরম প্রতিহিংসায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে ওরা। আঁকে নতুন ছক। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মূলত ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখকসহ চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসররা অপহরণ করে নিয়ে যায়। ওইদিন প্রায় দুই শ’র মতো বুদ্ধিজীবীকে তাঁদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাঁদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ অন্য আরও অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের ওপর বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাঁদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। এ দুটি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দীন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।

মেধাশূন্য করে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতেই এই গভীর এবং ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মরহুম তাজউদ্দীন আহমদ ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা করেছিলেন, কারণ অপহরণ ও পরে নির্বিচারে হত্যা এই ১৪ ডিসেম্বরেই অর্থাৎ পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাঙালির বিজয় অর্জন তথা বিজয় দিবসের ঠিক দুই দিন আগে সংঘটিত হয়েছিল সবচেয়ে বেশি।

২৫ মার্চ থেকে শুরু করে সারা দেশে টার্গেট করে প্রায় ২ হাজার শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এর মধ্যে ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায়ই খুন হন প্রায় ১ হাজার ১০০।

মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সহস্রাধিক ছাত্র/যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু স্মৃতিসৌধ থেকে একটি মিছিল বের করে পাকিস্তান হাই কমিশনে গিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে।

স্মারকলিপিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম, বেসরকারি মুক্তিযুদ্ধের ফোরামসমূহ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে র‌্যালি  ও সমাবেশ করে।     

ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি সংসদ গুলশানের পুলিশ প্লাজা থেকে বাইসাইকেল র‌্যালি বের করে পাকিস্তান হাই কমিশনে গিয়ে স্মারকরিপি প্রদান করে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিচার দাবি করেন।

এছাড়া খুলনা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, বেনাপোল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্নস্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে।

এস এস